চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

যাকাত আদায় না করার পরিণতি কী?

২২ মে, ২০১৯ | ২:৩৯ পূর্বাহ্ণ

যাকাত ইসলামের স্তম্ভ ও অবশ্যপালনীয় বিধান। এ বিধান পালন না করার অর্থ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা। যাকাত ফরজ হওয়ার মতো সম্পদের মালিক হওয়ার পরও যারা এ বিধান পালন করবে না পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহে তাদের জন্য ইহকালীন লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও পরকালীন শাস্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
ইহকালীন শাস্তি : ১. আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া : মহান আল্লাহ বলেন, “আমার রহমত সব কিছুতে পরিব্যাপ্ত। তা আমি সেই লোকদের জন্য লিখব যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং আমার আয়াতসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।” (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৫৬)। অতএব যারা যাকাত দেয় না তারা এ রহমত থেকে বঞ্চিত হয়। ২. আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত হওয়া: যে ব্যক্তি আল্লাহকে সাহায্য করেন প্রকারান্তরে তিনি নিজেকেই সাহায্য করেন। যাকাত প্রদান আল্লাহকে সাহায্যকারীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কুরআনে এসেছে, “যে আল্লাহকে সাহায্য করবে আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন; নিঃসন্দেহে আল্লাহ শক্তিসম্পন্ন, পরাক্রমশালী। তারা সেসব লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে ক্ষমতা প্রদান করলে তারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে, সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজে নিষেধ করে।” (সূরা আল-হাজ্জ: ৪০-৪১)। ৩. নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী করে নেয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) যাকাত প্রদানে বিরত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে আদিষ্ট হয়েছিলেন। ফলে যাকাত না দেয়ার অর্থ নিজের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে নেয়া। মহানবী সা. বলেন, “আমি লোকজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই ও মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল এবং নামায প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত আদায় করবে। যখন তারা এ কাজগুলো করবে তখন তারা আমার হাত থেকে তাদের জান-মাল রক্ষা করবে, অবশ্য তাদের চূড়ান্ত বিচারের ভার আল্লাহর উপর (সহীহ বুখারী, ১/১৭)। ৪. জাতীয় বিপর্যয় : যাকাত আদায় না করার কারণে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়। হাদীসে এসেছে, “যে জাতি যাকাত দেয় না মহান আল্লাহ তাদের উপর বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন” (আল-মুসতাদরাক, ২/১৩৬)। “স্থল ও জলভাগে ধনসম্পদ বিনষ্ট হয় শুধুমাত্র যাকাত আটকে রাখার কারণে (মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ, ৩/২০০)।
পরকালীন শাস্তি : যাকাত দানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীকে পরকালে কঠিন ও ভয়ংকর আজাবের মুখোমুখি হতে হবে। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে তাদের সে আজাবের চিত্র ফুটে উঠেছে। ১. ধন-সম্পদ আগুনে গরম করে সেঁক দেয়া : এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “এবং যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেয়া হবে। (আর বলা হবে) ‘এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর (সূরা আত-তাওবাহ: ৩৪-৩৫) ।” ২. বিষধর সাপের দংশন : মহানবী (সা.) বলেছেন, “যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন আর সে তার যাকাত দেয় না, কিয়ামতের দিন ঐ সম্পদকে দু’টি বিষের থলিবিশিষ্ট মাথায় টাকপড়া মারাত্মক বিষধর সর্পে পরিণত করা হবে, যা তাকে পেঁচিয়ে তার চোয়ালে আঘাত করে করে বলতে থাকবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার গচ্ছিত ধন … (সহীহ আল-বুখারী, ৫/২১০) ।” ৩. কিয়ামতে বেড়ি পরানো : এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, “আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে কৃপণতা করে, তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। আর আসমানসমূহ ও জমিনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই জন্য। আর তোমরা যা আমল কর, সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত (সূরা আলে ইমরান: ১৮০)।” ৪. উত্তপ্ত পাথর ব্যবহার : আবুযর (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করে বলেন, “যারা সম্পদ জমা করে রাখে,তাদেরকে এমন গরম পাথরের সুসংবাদ দাও যা তাদেরকে শাস্তি প্রদানের জন্য জাহান্নামে উত্তপ্ত করা হচ্ছে। তা তাদের স্তনের বোঁটার উপর স্থাপন করা হবে আর তা কাঁধের পেশী ভেদ করে বের হবে এবং কাঁধের উপর স্থাপন করা হবে, তা নড়াচড়া করে সজোরে স্তনের বোঁটা ছেদ করে বের হবে (সহীহ আল-বুখারী, ৫/২১৫) ।”
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয়, যাকাত ইসলামের এক বাধ্যতামূলক বিধান, যা আদায় না করলে ইহকালীন অশান্তি, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও পরকালীন শাস্তি অবধারিত।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট