চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রোজায় চিকিৎসা শাস্ত্রের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের নিয়ম-কানুন

রায়হান আজাদ

২১ মে, ২০১৯ | ১:২৮ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান যুগে চিকিৎসাশাস্ত্রে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রতিদিন নিত্য-নতুন পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হচ্ছে যা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মানুষের শরীরে প্রবেশ করানো হয়। ফলে রোজাদারের রোজা ভঙ্গ হওয়া না হওয়া প্রসঙ্গটিও নতুনভাবে আলোচনায় আসছে। নি¤েœ রমজানে বহুল ব্যবহৃত কতিপয় যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পদ্ধতি ও তার শরীয়তী বিধান উপস্থাপন করা হলো।
১. ইনহেলার : ইনহেলার ব্যবহারে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ ইনহেলারের মাধ্যমে কোন জিনিস পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছা প্রায় অসম্ভব এবং ইনহেলার খাবার বা পানীয় পর্যায়ে পড়ে না। ২. এনডোসকপি: এনডোসকপি একটি চিকিৎসা যন্ত্র যা মুখ গহ্বরের ভিতর দিয়ে পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছানো হয়। যা দ্বারা ভিতরকার ক্ষত উপড়ে ফেলা অথবা তার চিত্র ধারন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এর দ্বারা রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ, এটি পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে। ৩. নাকের ড্রপ: নাকের ড্রপ ব্যবহার করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কারণ নাসারন্দ্রের সাথে পাকস্থলীর সংযোগ রয়েছে। ৪. এনেসথেসিয়া : এনেসথেসিয়া দু’ ধরনের। আংশিক অবশীকরণ এবং সম্পূর্ণ অবশীকরণ। ঘ্রাণের মাধ্যমে, চীনা আকুপাংচার পদ্ধতিতে বা ইনজেকশান দিয়ে যদি রোজাদারের শরীরের আংশিক ও ক্ষণস্থায়ী অবশ করা হয় তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না। আর যদি সম্পূর্ণ শরীর দীর্ঘক্ষণ সময় ধরে অজ্ঞান করে রাখা হয় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। ৫. কানের ড্রপ : রোজা অবস্থায় কানে যে কোন প্রকার ড্রপ দিলে অধিকাংশ আলিমদের মতে রোজা ভেঙ্গে যাবে। ৬. চোখের ড্রপ: রোজা অবস্থায় চোখের ড্রপ দিলে রোজা ভাঙ্গবে না। কারণ চোখের ড্রপে যে পরিমাণ পানি ও ঔষধ থাকে তা পাকস্থলী পর্যন্ত পৌছার আগেই শুকিয়ে যায়। ৭. ইনজেকশন: ইনজেকশন সাধারণত তিন প্রকার : চামড়া, রগ ও পেশীতে ব্যবহৃত ইনজেকশন। চামড়ায় দেয়া ইনজেকশন (ইনসুলিন) এবং পেশীতে দেয়া ইনজেকশানের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ, এগুলো কোন প্রকার খাবার ও পানীয় জাতীয় দ্রব্যের আওতায় পড়ে না। তবে রগে দেয়া ইনজেকশন যাতে খাবার সরবরাহ করা হয় (স্যালাইন) এতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। ৮. সাবজেটরি: দীর্ঘ ও প্রচ- জ্বর কমানোর জন্য অথবা অর্শ রোগের ব্যথা কমানোর জন্য মলদার দিয়ে ঢুকানোর ট্যাবলেট হচ্ছে সাবজেটরি। এটি ব্যবহারে অধিকাংশ আলিমের মতে, রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ, এটি খাবার ও পানীয়ের আওতায় পড়ে না। ০৯. রক্ত দান: রোজাবস্থায় অপর কাউকে রক্ত দান করলে ইমাম ইবনে তাইমিয়াসহ অধিকাংশ অলিমের মতে, রোজা ভেঙ্গে যাবে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার ফলে বেরিয়ে আসছে রোজার চমৎকার উপকারিতার কথা। রোজা পালন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তো নয়ই বরং রোজা রোগমুক্তির অন্যতম উপায়, সুস্থ হওয়ার গ্যারান্টি। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন- ‘তামাদের রোজা তোমাদের জন্য কল্যাণকর’। (সূরা বাকারা, ১৮৭)
মানব জীবনে খাদ্য ও পানীয় বস্তু অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কেননা খাদ্য ও পানীয় শরীর গঠনের মূল উপকরণ এবং বেঁচে থাকারও উপাদান। মানুষ যদি খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকে তাহলে কত দিন পর্যন্ত তার সঞ্চিত শক্তি উক্ত মানুষের প্রয়োজন মিটাতে পারে? চিকিৎসা বিজ্ঞান বর্ণনা করছে : মানুষ যদি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে বিরত রাখে তা হলে তার শক্তি ভা-ার থেকে তার চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের পরিপ্রেক্ষিতে কমপক্ষে একমাস এবং ঊর্ধ্বে তিন মাস শক্তি সরবরাহ করতে পারে। অথচ ইসলাম মুসলিমদেরকে দৈনিক মাত্র ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পানাহার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে, এই সামান্য সময় পানাহার থেকে বিরত থাকা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাই শরীরে এই রোজার মাধ্যমে কোনো ধরনের ক্ষতি হয়না, বরং এই রোজার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য উপকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট