চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

কন্টেইনার আসে, মাল আসে না

আমদানির নামে অর্থ পাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ মে, ২০১৯ | ২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

#সবচেয়ে বেশি প্রতারণা চীনের সঙ্গে
#আমদানিকারকের অস্তিত্ব মেলে না
#অধিকাংশ ঘটনা শেষপর্যন্ত ধামাচাপা

বন্দরে প্রয়োজন কমপক্ষে ২৫ টি স্ক্যানার।
এর বিপরীতে রয়েছে মাত্র কয়েকটি
পুরনো স্ক্যানার। আর এটাকে সুযোগ
হিসেবে নিচ্ছে অর্থ পাচারকারী চক্র।

চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারের ভিতরের পণ্য সঠিকভাবে পরীক্ষা করার জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ২৫ টি স্ক্যানার। এর বিপরীতে রয়েছে মাত্র কয়েকটি পুরনো স্ক্যানার। আর এটাকে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে অর্থ পাচারকারী চক্র। পণ্য আমদানির নামে ব্যাংকে ঋণপত্র ( এলসি ) করে কোটি কোটি ডলার পাচার করে দেয়া হচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, পণ্য আমদানির জন্য ব্যাংকে এলসি করে মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে, কিন্তু সেই পণ্য আসছে না। আসছে খালি কন্টেইনার, মাটি, ইট, পনি। এ ধরনের প্রতারণা সবচেয়ে বেশি ঘটছে চীনের সঙ্গে। সেখান থেকে। গত ৩ বছরে এ রকম ১৪টি ঘটনা ধরতে পেরেছে কাস্টম হাউস। অর্থনীতিবিদদের মতে, নির্দিষ্ট পণ্য না আসা মানে এলসি’র সমূদয় অর্থ পাচার করে দেয়া। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না হওয়ায় এভাবে অর্থ পাচার বন্ধ হচ্ছে না। তাদের মতে, এভাবে অর্থ পাচারের যত ঘটনা ঘটে তার ৫ শতাংশও ধরা পড়ে না। কারণ পারস্পরিক যোগসাজশে ঘটে ঘটনাগুলো। লাকি ট্রেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান এলসি করেছিল সরিষা বীজ আমদানির। এর পরিবর্তে এসেছিল ৪৩টি খালি কন্টেইনার। গাজিপুরের শেনজেন ইন্ডাস্ট্রিজ ইলেক্ট্রিক পণ্যে ব্যবহারের জন্য ২৬ টন তামা আমদানির এলসি করে। নিয়ে আসে পাথর। নারায়নগঞ্জের এসআর মেটাল ইন্ডাস্টিজ ঋণপত্র করে এলুমিনিয়াম স্ক্যাপ আমদানির। এসেও পৌঁছে কন্টেইনার। পরীক্ষা করে দেখা যায় ভিতরে এলুমিনিয়াম স্ক্যাপের কোন অস্তিত্ব নেই। পাওয়া গেছে ছাই। রোজা ফুডস নামে একটি প্রতিষ্ঠান ঘোষণা দিয়েছিল ৩২০ ড্রাম সয়াবিন তেল আমদানির। এর বদলে নিয়ে আসে পানি। বিপি শিট রোল আমদানির এলসি করে নিয়ে আসা কন্টেইনারের ভিতরে পাওয়া গেছে পাথর। অপর এক আমদানিকারক বিপি শিট রোলের ঘোষণায় নিয়ে যাচ্ছিলেন কন্টেইনার। পরীক্ষায় দেখা গেছে যে কোন বিপি শিট রোল নেই। রয়েছে মাটির ব্লক। এবি এন্ড ডি কর্পোরেশন এলসি করেছিল শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির। কিন্তু পণ্য আসায় ব্যাংক তাদেরকে চাপ দেয়। পরবর্তীতে পণ্য আমদানির ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু কন্টেইনারের ভিতরে পাওয়া গেছে পরিত্যক্ত লোহা।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ঋণপত্র খুলে পণ্য না আসার ঘটনা উদঘাটনের পর কাস্টম হাউস তদন্ত শুরু করে। দেখা যায়, কখনও কখনও নির্দিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে কোন খোঁজ পাওয়া যায় না আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের। অর্থাৎ ভূঁয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণপত্র খোলার সাথে যোগসাজশ থাকে ব্যাংকের। আবার কখনও এলসি’কারী প্রতিষ্ঠানের সন্ধান মিললেও তারা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করে এবং এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানায়। প্রকৃতপক্ষে এভাবে কাস্টম হাউস থেকে নথি চালাচালি হওয়ার পর এক পর্যায়ে গিয়ে ঘটনাগুলো ধামাচাপা পড়ে যায়। তবে, অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে আমদানি করা পণ্য খালাসে সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্টদের বিরুদ্ধে মামলা এবং লাইসেন্স বাতিল করা হয় বলে জানিয়েছেন কাস্টম হাউসের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগের কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম বন্দরে স্ক্যানার না থাকার সুযোগ নিয়ে কেবল নয়, ডকুমেন্টস জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ পাচারের ঘটনা এই তুলনায় কয়েক হাজার গুণ। জালিয়াত চক্র পণ্য আনার প্রমাণ হিসেবে ভুয়া বিল অব এন্ট্রি জমা দেয় ব্যাংকে। কেউ কেউ বিল অব এন্ট্রি জমাই দেয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে তা উদঘাটন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, মানি লন্ডারিং প্রমাণিত হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং দুদককে জানানো হয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট