চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

পেছালো ভোট ও পরীক্ষা ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু ৩ ফেব্রুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

১৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

অনেক জল ঘোলা করে অবশেষে পেছানো হলো ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোটের তারিখ। ভোট নেওয়ার নতুন তারিখ করা হয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি, রবিবার। ভোটের নতুন তারিখ নির্ধারণের আগে ২০২০ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পূর্বনির্ধারিত সূচিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে।

চলতি মাসের ৩০ তারিখ নির্বাচন কমিশন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণের তারিখ চূড়ান্তের পরেই সনাতন ধর্মানুসারীদের তরফে আপত্তি জানিয়ে বলা হয়েছিল, সেই দিনটি সরস্বতী পুজোর দ্বিতীয় দিন। সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই পুজো হয়ে থাকে। ভোট কেন্দ্র ও পুজোর ভেন্যু অভিন্ন হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানায় সনাতন ধর্মালম্বীদের বিভিন্ন সংগঠন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপির মেয়র প্রার্থীসহ সবাই পুজোর দিনে ভোট গ্রহণের বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সরস্বতী পুজোর দ্বিতীয়দিনে ভোট করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ায়। আমরণ অনশন শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীও। ইসির পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, ৩০ জানুয়ারিই ভোটগ্রহণের জন্য ‘উপযুক্ত’ দিন। কারণ, তার পরের দিন ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার বলে সেদিন ভোটগ্রহণের নজির নেই। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা।

এদিকে, সমস্যাও দেখা দেয় ঢাকার সিটি ভোটের পরেই, অর্থাৎ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশের মাধ্যমিকের পরীক্ষা শুরু হওয়ার রুটিন থাকায়। এবার মাধ্যমিকে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন। জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষার সম্মুখিন হওয়ায় তাদের শিডিউল পরিবর্তন নিয়েও সঙ্কট দেখা দেয়। সবশেষে, গতকাল শনিবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিকের পরীক্ষা দু’দিন পেছানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই নির্বাচন কমিশনও তাদের নির্বাচনের শিডিউল পরিবর্তন করে ৩০ জানুয়ারির পরিবর্তে ১ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের নতুন তারিখ ঘোষণা করে। গতকাল শনিবার বিকেল থেকে টানা চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক শেষে একথা জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। এর আগে বিকেল সোয়া ৪টায় এই বৈঠকে যোগ দিতে নির্বাচন কমিশনারদের টেলিফোন করে বলা হয়। জরুরি এই বৈঠকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের দুই রিটার্নিং কর্মকর্তাকেও আসতে বলা হয়। সিইসি বলেন, ভোটের তারিখ নিয়ে আমরা একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। ৩০ তারিখ পুজোর দিন র্নিধারিত আছে। সেটা মাথায় রেখে, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে যেন আঘাত না লাগে, সেজন্যই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে আগামি ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটির ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল, সে কারণে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, তারা ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা শুরু করবেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেই ভোট পেছানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারআগে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের জানান, দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও সরস্বতী পূজো আগামি ৩০ জানুয়ারি। পূজা ও নির্বাচনের সময় সমন্বয় করতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১ তারিখের পরিবর্তে পরীক্ষা শুরু হবে ৩ ফেব্রুয়ারি।

এদিকে, ঢাকা সিটি ভোটের তারিখ পরিবর্তনের কয়েক ঘন্টা আগে গতকাল বিকালে নির্বাচন পেছানোর দাবিতে ২৫ জানুয়ারি দেশব্যাপী অবরোধের ডাক দেয় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। রাজু ভাস্কর্যের সামনে অনশনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। এছাড়া ২২ জানুয়ারি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ২৭ জানুয়ারি গণঅনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। রানা দাসগুপ্ত বলেন, ৩০ তারিখে কোনও ভোট হবে না, প্রতিরোধ করা হবে। আর এ জন্য যদি কোনও অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি দেখা দেয়, তার দায় নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরণ অনশনেও বসেন শিক্ষার্থীরা। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কর্মসূচি ঘোষণা করলে ভোটের দিন বদলের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো জানায়, ভোটের তারিখ পরিবর্তনে তাদের আপত্তি নেই। প্রধান প্রধান প্রার্থীরাও ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে ইসিকে আহ্বান জানায়। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে অযৌক্তিক বললেও তাদের পক্ষে জনমত জোরাল হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে গতকাল শনিবার বিকালে আকস্মিকভাবে জরুরি বৈঠকে বসে ইসি। বৈঠকের আগে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সব কিছু বিবেচনা করেই তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট