চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ অপেক্ষা অনুমোদনের

সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প বন্দর এলাকা পরিদর্শনে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি

মোর্শেদ নয়ন হ মহেশখালী মাতারবাড়ি থেকে ফিরে

১৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার জেলার মহেশখালী মাতারবাড়িতে ১২শ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের সমীক্ষা থেকেই জন্ম মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরের ধারণা। জাইকা পরিচালিত সমীক্ষায় মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের জন্য সার্বক্ষণিক কয়লা পরিবহনে ২৫০ মিটার চওড়া এবং ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কৃত্রিম চ্যানেল তৈরি করে তিনটি জেটি নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করা হয়। জেটি নির্মাণ করতে গিয়ে বাণিজ্যিক সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা খুঁেজ পায় জাইকা। এর মধ্যেই শেষ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, প্রথম দিকে মাতারবাড়িতে ১২শ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য একটি কোল জেটি নির্মাণ করার পরিকল্পনা ছিল। মূলত এই কোল জেটির কাজ শুরু করতে গিয়েই জাইকা একটি বাণিজ্যিক বন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা দেখতে পায়। মাতারবাড়ি অঞ্চলে সমুদ্রে গভীরতা ১৫.৩ মিটার। তবে খনন শেষে প্রাথমিকভাবে মাতারবাড়ি চ্যানেলে সারাবছরই ন্যূনতম ১৬ মিটার গভীরতা পাওয়া যাবে। চ্যানেলের বাইরে সাগরের গভীরতা ৩০ মিটার। প্রাথমিকভাবে নির্মাণ করা হবে ৪৬০ মিটারের একটি কনটেইনার জেটি এবং অন্যটি ৩০০ মিটারের মাল্টিপারপাস জেটি। কনটেইনার টার্মিনালে ১৬ মিটার পর্যন্ত ড্রাফটের জাহাজ ৮ থেকে ১০ হাজার টিইইউ কনটেইনার নিয়ে এবং মাল্টিপারপাস টার্মিনালে ৮০ হাজার থেকে ১লক্ষ মেট্রিক টন পণ্য নিয়ে বড় কার্গো ভেসেল ভিড়তে পারবে। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ হাজার ২২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে, শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম পতেঙ্গা থেকে কোস্ট গার্ডের জাহাজ সবুজ বাংলা করে সাগরপথে মহেশখালী মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর এলাকা পরিদর্শনে যান নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সংসদীয় কমিটির পরিদর্শন টিমকে মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেন মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম। এসময় তিনি বলেন, বন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং, এপ্রেইজল মিশন এবং ঋণচুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া জমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটি প্ল্যানিং কমিশনে ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। জাফর আলম আরো বলেন, এখানকার চ্যানেলটি ৩৫০ মিটার প্রস্থ এবং ১৬ মিটার গভীরতাসম্পন্ন হবে। ৩৫০ মিটারের চ্যানেলের ২৫০ মিটার কোল জেটির জন্য কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অধীনে নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ১০০মিটার মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নির্মিত হবে। প্রথম ধাপ ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশাব্যক্ত করে তিনি আরো বলেন, ২০২৬ সালে এ বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা হবে ১.১ মিলিয়ন টিইইউ এবং ২০৪১ সালে ৪.২ মিলিয়ন টিইইউ।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিদর্শন টিমে ছিলেন সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, মাহফুজুর রহমান মিতা, এম আবদুল লতিফ, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, এসএম শাহজাদা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুছ ছাত্তার, উপ সচিব বেগম মালেকা পারভীন, ড. দয়াল চাঁদ ম-ল, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উপ পরিচালক আবদুল জব্বার, সিনিয়র সহকারী সচিব এসএম আমিনুল ইসলাম। এ সময় বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম, হারবার মেরিন কমডোর শফিউল বারী, প্রকৌশল ক্যাপ্টেন মহিদুল হাসান চৌধুরী, সচিব মো. ওমর ফারুক, ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান, চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পূর্বজোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম ওয়াসিম মকসুদ, চট্টগ্রাম বেইসের অধিনায়ক কমান্ডার এম শরীফুল হক খান, স্টাফ অফিসার (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ পরিদর্শন টিমের সাথে ছিলেন।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বলেন, মাতারবাড়ি বাণিজ্যিক বন্দর পুরো দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। একই চ্যানেল ব্যবহার করে দুইটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম করা হলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। এছাড়া মাতারবাড়ি এলাকায় বেজা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে এবং দেশী বিদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠা শুরু হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট