চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জাপায় পাল্টাপাল্টি পদোন্নতির যুদ্ধে দেবর-ভাবি

১৮ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:৪৯ পূর্বাহ্ণ

রওশন এরশাদের সইয়ে ১৬ জনকে পদোন্নতির আদেশের পাল্টায় এবার অর্ধশতাধিক নেতাকে বিভিন্ন পদে আসীন করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, যার মধ্য দিয়ে দেবর-ভাবির মধ্যে নতুন যুদ্ধ প্রকাশ্য হল। চেয়ারম্যান পদে থিতু হওয়া কাদের শুক্রবার পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন ২৯ জন উপদেষ্টা, ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৪ জন যুগ্ম মহাসচিবের নাম ঘোষণা করেছেন; নিজের স্ত্রী ও বোনকে বানিয়েছেন উপদেষ্টা। প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বড় ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদকে (সাদ এরশাদ) দলের যুগ্ম মহাসচিবের পদ দিয়েছেন জি এম কাদের। অথচ মাত্র দুদিন আগে সাদের মা ও জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন

এরশাদ তার ‘ক্ষমতাবলে’ সাদকে দলের কো চেয়ারম্যানের পদ দিয়েছিলেন। -বিডিনিউজ

রওশন এরশাদ বুধবার যে ১৬ জনকে পদ দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে সাদ ছাড়া ছয়জনকে জি এম কাদের কমিটিতে রেখেছেন। তাতে ভাইস চেয়ারম্যান পদের একজন ছাড়া বাকিদের জুটেছে অন্যপদ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় বলেন, “পার্টির নবম জাতীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এবং গঠনতন্ত্রের ১২ ধারার ৩ নম্বর উপধারা মোতাবেক তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

জি এম কাদের নিজে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। রওশন এরশাদ ও সাদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
জাতীয় পার্টিতে আধিপত্য নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এবং এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদেরের মধ্যকার দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। গত বছর জুলাইয়ে এরশাদের মৃত্যুর পর দলের চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে সে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়।
দল যখন আরেক দফা ভাঙ্গনের মুখে, তখন কাদেরপন্থি ও রওশনপন্থি নেতারা সমঝোতা শেষে জি এম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যানের পদে রাখেন। রওশন এরশাদকে তারা জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধীদলের নেতা হিসেবে রেখে দেন।
এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির প্রথম সম্মেলনে গত ২৮ ডিসেম্বর রওশনের জন্য প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদ সৃষ্টি করা হয়। চেয়ারম্যান হন জিএম কাদের। ওই সম্মেলন রওশন ছিলেন না, আসেননি সাদ এরশাদও। সে সময় রওশনের ‘আলঙ্করিক পদ’ নিয়ে মহাসচিব রাঙ্গাঁ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “দলের সর্বক্ষেত্রে রওশন এরশাদের অবস্থান দলের চেয়ারম্যানের ঊর্ধ্বে থাকবে।”

এরপর গত ১৫ জানুয়ারি এরশাদপতœী রওশন নিজের স্বাক্ষরে ১৬ জনকে দলের বিভিন্ন পদে মনোনীত করলে তা নিয়ে আপত্তি তোলেন দেবর কাদের।
পার্টি চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, পদোন্নতির ওই খবর ‘বিভ্রান্তিকর’, এভাবে নিয়োগ দেওয়ার অধিকার প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ‘নেই’।
জি এম কাদেরের উপদেষ্টা যারা
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কমিটিতে উপদেষ্টা পদে ছিলেন ১২ জন। জি এম কাদের চেয়ারম্যানের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পাওয়ার পর দুই দফায় ২৯ জনকে উপদেষ্টা করে নিয়েছেন।
উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন স্ত্রী শেরিফা কাদের ও বোন মেরিনা রহমান। মেরিনা রহমান এর আগে সংসদ সদস্য হলেও শেরিফা কাদের রাজনীতির অঙ্গনেই ছিলেন না। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উৎসবের উদ্যোক্তা হিসেবেই সংগীতশিল্পী শেরিফা কাদেরের নামটি এতদিন শোনা যেত।

জি এম কাদেরের উপদেষ্টা পরিষদে এসেছেন জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান ও সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর স্ত্রী মেহেজেবুন্নেসা রহমান টুম্পা, গত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় ও মনিরুল ইসলাম মিলন।

আরও আছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ক্বারী মো. হাবিবুল্লাহ বেলালী, নুরুল আজহার শামীম, আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, সাংসদ রওশন আরা মান্নান, একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, মো. সেলিম উদ্দিন, হাসান সিরাজ সুজা, মো. নোমান, সোমনাথ দে, এমএম নিয়াজ উদ্দিন, আশরাফ উদ দৌলা, এম এ কুদ্দুস খান, মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, জিয়াউল হক মৃধা, মো. লুৎফর রহমান চৌধুরী, এমএ তালহা, দেলোয়ার হোসেন, মো. নুরুল ইসলাম মিলন, গিয়াস উদ্দিন, একরামুল হক, সরদার শাহজাহান, আতাউর রহমান সরকার এবং মো. জহিরুল আলম রুবেল। সুনীল শুভ রায় বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশের সময় উপদেষ্টাবৃন্দের দায়িত্ব বণ্টন এবং নামের ক্রম ঠিক করা হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট