চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

তবে কী ভেঙ্গে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ‘উচ্চতা’ ?

অনলাইন ডেস্ক

১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ১:১৩ অপরাহ্ণ

বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ এবং ভারত এ দু’দেশের সরকারই বলে যাচ্ছেন যে দেশ দুটির সম্পর্ক সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। যদিও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কথিত উচ্চতর সম্পর্কের মধ্যে নিজেদের (দেশের) জন্য ইতিবাচক কিছু খুঁজে পাননি। নিজেদের সব কিছু সমর্পণ করে সম্পর্কের উচ্চতা ধরে রাখায় বাংলাদেশ সরকারের প্রাণান্ত চেষ্টাও যেনো শেষ পর্যন্ত মন ভরাতে পারেনি চরম সাম্প্রদায়িক ও কর্তৃত্ববাদি মোদি সরকারের। নিজেদের প্রয়োজনে চোখ উল্টে দিতে এতটুকু দ্বিধা হয়নি তাদের। কিন্তু একতরফা এই সম্পর্ক কী অবশেষে ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে (সিএবি) কেন্দ্র করে ভেঙ্গে পড়তে যাচ্ছে?

প্রশ্নটি তুলেছে পশ্চিমবাংলার প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। বিষয়টির সম্ভাবনা বুঝাতে কিছু ঘটনার পরম্পরাও তুলে ধরেছে তারা।  আনন্দবাজার লিখেছে, সিএবি-র জেরে কি প্রতিবেশি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ বদলে যাচ্ছে? শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা !

‘টেস্ট ক্রিকেটে গোলাপি বল নিয়ে শহর জুড়ে উন্মাদনার মধ্যেই ইডেনে পা রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। অথচ ‘পরম মিত্র’ বাংলাদেশের সেই প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর কোনো তাগিদই দেখাননি বিজেপির শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীরা। তাঁদের এমন ‘ব্যবহারে’ সে সময়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। নাগরিক সংশোধনী বিল (সিএবি) নিয়ে এ দেশে টানাপড়েনের মধ্যে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবদুল মোমেন বৃহস্পতিবার পূর্ব নির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করায়, দুই দেশের সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, নাগরিক সংশোধনী বিলের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যেভাবে পড়শি দেশে অমুসলিমদের উপর নিপীড়নের কথা বলে বেড়াচ্ছেন, তাতে দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে না তো?

রাজনৈতিকদের এই আশঙ্কা অবশ্য নতুন নয়। নির্বাচনী প্রচারের সময় বিজেপি নেতারা যখন জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) তৈরি করে দেশ থেকে সমস্ত অনুপ্রবেশকারীদের তাড়ানোর কথা বলছিলেন, সে সময় বাংলাদেশের তরফেই প্রথম উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী বছর মার্চে মোদীকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানান তিনি। আর সেখানেই আলোচনার ফাঁকে মোদীর সামনে এনআরসি প্রসঙ্গ পেড়ে ফেলেন হাসিনা। এত সংখ্যক মানুষকে ফেরত পাঠালে কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবেন, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। সে সময় তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন মোদী। কিন্তু তার মধ্যেই ১ অক্টোবর বাংলার একটি মঞ্চে দাঁড়িয়ে জ্বালাময়ী ভাষণ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘সারাদেশেই এনআরসি হবে। তার আগে সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করাবে সরকার। তার আওতায় মতুয়াসহ ধর্মীয় কারণে পড়শি দেশ থেকে নিপীড়িত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন এবং ক্রিস্টানদের ভারতের নাগরিকত্ব দেয়া হবে।’ তার ঠিক পরেই দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। সেখানে ফের একবার এনআরসি প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন তিনি। সেইসময় তাঁকে আশ্বস্ত করার বদলে মোদী জানান, শীর্ষ আদালতের নির্দেশে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কী ভাবে তা এগোয় দেখা যাক।

তারপরেও ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক বিশেষ উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে বলে মন্তব্য করতে শোনা যায় শেখ হাসিনাকে। কিন্তু বুধবার রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার দুপুরেই প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে ভারত সফর বাতিল করেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারত সফর বাতিল করেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও। তাতেই দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েশুরু হয়েছে নতুন করে জল্পনা ।

 

 

 

 

 

 

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট