চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ঋণ জালিয়াতি : এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৮:০৮ অপরাহ্ণ

অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফারমার্স ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে ৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আত্মসাতের মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। একই মামলায় করা অভিযোগপত্রে তিনিসহ মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুদকের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মো. জুলফিকার সোমবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে তা জমা দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশে আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যদের লাভবান করে অবৈধভাবে ভুয়া ঋণ সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে তা স্থানান্তর করে নগদে উত্তোলন ও বিভিন্ন পে-অর্ডারের মাধ্যমে স্থানান্তর ও গোপনে পাচার করেছেন।

বিচারপতি সিনহা বাদে অন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে, তারা হলেন- ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী, সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান, একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়।

দুদকের করা এই মামলায় ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো. জিয়া উদ্দিন আহমেদও আসামি ছিলেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে মামলার দায় থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেছেন। অপরদিকে মামলায় বাবুল চিশতীর নাম না থাকলেও অভিযোগপত্রে তাকে নতুন করে আসামি করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে এর আগে জব্দ করা হয় এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবের চার কোটি টাকা।

নানা নাটকীয় ঘটনার মধ্যে বিচারপতি সিনহা দু’বছর আগে বিদেশে পাড়ি জমানোর পর দুদক অভিযোগ পায়, তিনি ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ব্যবসায়ী পরিচয়ে দুই ব্যক্তির নেয়া ঋণের চার কোটি টাকা নিজের একাউন্টে নিয়েছিলেন। অভিযোগ পেয়ে ওই বছরই তদন্তে দুদক নামে। দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনদীর্ঘ তদন্তে পর চলতি বছরের ১০ জুলাই সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলার বিবরণে বলা হয়, আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর  ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুটি একাউন্ট খোলেন। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পরদিন তারা ওই ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট ৪ কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। তাদের ব্যাংক একাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।

ঋণের আবেদনে ঋণের জামানত হিসেবে উল্লেখ করা হয় আসামি রনজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা। মামলার এজাহারে ওই দম্পতি এস কে সিনহার পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুদক বলছে, ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি এ কে এম শামীম কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই, ব্যাংকের নিয়ম-নীতি না মেনে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনুমোদন করেন ঋণ দুটি।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ৭ নভেম্বর ঋণের আবেদন হওয়ার পর ‘অস্বাভাবিক দ্রুততার’ সঙ্গে তা অনুমোদন করা হয়। পরদিন মোট চার কোটি টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয় এস কে সিনহার নামে। ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার একাউন্টে জমা হয়।

পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার একাউন্টে দুটি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর।

এজাহারে বলা হয়, “আসামি রনজিৎ চন্দ্র ঋণ দ্রুত অনুমোদনের জন্য প্রধান বিচারপতির প্রভাব ব্যবহার করেন। রনজিৎ চন্দ্রের ভাতিজা হলেন ঋণ গ্রহীতা নিরঞ্জন এবং অপর ঋণ গ্রহীতা শাহজাহান ও রনজিৎ ছোটবেলার বন্ধু। ঋণ গ্রহীতা দুইজনই অত্যন্ত গরিব ও দুস্থ। তারা কখনও ব্যবসা-বাণিজ্য করেননি।”

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন; তিনি এখন আছেন যুক্তরাষ্ট্র হয়ে কানাডায়।

তবে বিচারপতি সিনহা গতবছর দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসা যুক্তরাষ্ট্রে বসেই একটি বই প্রকাশ করেন। তাতে তিনি দাবি করেন, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে।

বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা জানানো হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে।

 

পূর্বকোণ/রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট