চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ঢাবি’র সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি হামিদ

পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলো দিনে সরকারি, রাতে বেসরকারি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস

১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:২৮ পূর্বাহ্ণ

বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন উপচার্যের কর্মকা-ে দারুন অসন্তুষ্ট রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৫২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আচার্য তাঁর এ মনোভাবের কথা জানিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘উপাচার্যরা হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অভিভাবক ও একাডেমিক লিডার। কিন্তু কোনো কোনো উপাচার্য ও শিক্ষকের কর্মকা- দেখলে মনে হয়, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল কাজ কী, তা ভুলে গেছেন। অনেক শিক্ষকই প্রশাসনিক পদ-পদবি পেয়ে নিজে যে একজন শিক্ষক, সেই পরিচয় ভুলে যান।’ সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাকাকি কাজিতা। তাকে অনুষ্ঠানে ‘ডক্টর অব সায়েন্স’ সম্মাননা দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার জন্য ২০ হাজার ৭৯৬ গ্র্যাজুয়েট নিবন্ধন করেছেন। রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও গবেষকদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন ।

রাষ্ট্রপতি সম্প্রতি দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ও শিক্ষার্থীদের সুনাম ক্ষুণœ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপড়া করে জ্ঞানার্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, লাশ হয়ে বা বহিষ্কৃত হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য নয়। কর্তৃপক্ষ সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে অপ্রত্যাশিত ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হতো। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর দায় এড়াতে পারে না। আমি আশা করি, কর্তৃপক্ষ এরপর থেকে সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেবে।’
দীর্ঘদিন পর হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন দেয়ায় ঢাবি উপাচার্যকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি। ধন্যবাদ জানান গরমের সময় সমাবর্তন না দেয়ার জন্যও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আচার্য আবদুল হামিদ আরও বলেন, ‘ঢাকসু নির্বাচনের সময় কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শুনেছি। আশা করবো, ভবিষ্যতে যখন ডাকসু নির্বাচন হবে, তা যেন আরও সুন্দরভাবে হয়। আর উচ্চ পরীক্ষার জন্য আমি অনুরোধ করেছিলাম। আমি এটার কোনো অগ্রগতি এখনো দেখি না। আপনার (ঢাবি উপাচার্য) মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে অনুরোধ করবো, এই ব্যাপারটা আরও গভীরভাবে চিন্তা করবেন।’
ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তাকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরের ফোনালাপ প্রকাশ করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচার হয়। ওইসব ফোনালাপে অবৈধ আর্থিক লেনদেন ও তদবিরের তথ্য প্রকাশ হয়েছে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়। ভিপি-জিএসের নাম উল্লেখ না করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বলেন, ‘ডাকসু নেতাদের ব্যাপারে এমন সব কথা শুনি, যেগুলো আমার ভালো লাগে না। এর বেশি বলে আমি কাউকে হেয়প্রতিপন্ন করতে চাই না। তবে তাদের কর্মকা- আমার ভালো লাগে না। তাদের এমন কিছু করা উচিত, যা সাধারণ ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করে। সেটা তাদের সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া উচিত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে সান্ধ্যকালীন (ইভিনিং) শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছে। রাষ্ট্রপতি জানান, টাকার বিনিময়ে এই সান্ধ্যকালীন শিক্ষা কার্যক্রম তার ভালো লাগে না। তিনি বলেন, অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে সরকারি আর রাতে বেসরকারি চরিত্র ধারণ করেছে। বিশ্বদ্যিালয়গুলো সন্ধ্যায় মেলায় পরিণত হয়। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আবার কিছু শিক্ষক নিয়মিত কোর্সের ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। কিন্তু ইভিনিং কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার ব্যাপারে তারা খুবই সিরিয়াস। কারণ, এগুলোতে নগদ প্রাপ্তি থাকে। সান্ধ্যকালীন শিক্ষা কার্যক্রমের অনিয়ম তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি শুনেছি, তাদের একটা বিষয় ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস। এতে তাদের ২২টা কোর্স। প্রতি কোর্সে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। এতে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকার ওপরে হয়। এর অর্ধেক শিক্ষকরা পান, আর অর্ধেক বিভাগ পায়। বিভাগের টাকা কী হয় জানি না, কিন্তু শিক্ষকরা পাচ্ছেন। আমি এটাও জানি, যাদের শুধু পিএইচডি আছে, শুধু তারাই ক্লাস নেয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো কোনো শিক্ষালয় নয়। বাঙালির ইতিহাসের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগ। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের ইতিহাসে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভূত্থান, সর্বোপরি ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।’ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তোমাদের মা-বাবা অনেক আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। এমন অনেক পরিবার আছেন যারা সর্বস্ব দিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের মানুষ করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। তোমাদের মূল দায়িত্ব হলো লেখাপড়া করা এবং দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলা। তোমরা এমন কোনো কাজ করবে না যাতে তোমাদের পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুণœ হয়।’ এ সময় রাষ্ট্রপতি যেসব শিক্ষার্থী স্নাতকে ভূষিত হলেন এবং যারা গবেষকের স্বীকৃতি পেলেন তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল্লাহ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিনেট, সিন্ডিকেট, হল প্রভোস্টসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট