চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এবার বৃক্ষরোপণে দুর্নীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ১০:২৮ অপরাহ্ণ

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্দা কেলেঙ্কারির রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বৃক্ষরোপণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপণে ২০ লাখ ২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু নামমাত্র হাসপাতাল ও মেডিকেল চত্বরে কিছু ফল ও ফুলের গাছ লাগিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাট করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালের প্রথম দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পে বৃক্ষরোপণে ২০ লাখ ২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বৃক্ষরোপণ প্রকল্পটি গণপূর্ত বিভাগের আরবরিকালচার ঢাকার তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। নামমাত্র কাজ শেষে সিকিউরিটি মানি রেখে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৭ লাখ ২ হাজার ৩১৯ টাকার বিল দেয়া হয়। নামমাত্র কিছু গাছের চারা লাগিয়ে প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাট করা হয়েছে।

ফরিদপুর গণপূর্ত বিভাগের এক পত্র থেকে জানা যায়, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পে বৃক্ষরোপণে ২০ লাখ ২ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। প্রকল্পের মধ্যে ছিল গাছ লাগানো উপযোগী মাটি সরবরাহ, সার সংগ্রহ ও রোপণ স্থানে প্রয়োগ, গাছের চারা ক্রয়, ঘাস কাটার মেশিনসহ যন্ত্রাংশ ক্রয়। ওই সময় প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এস এম খবিরুল ইসলাম জানান, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নির্মাণকাজের প্রকল্প পরিচালক যিনি ছিলেন বিষয়টি তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। গাছের চারা লাগানোর কাজটি গণপূর্ত বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্প পরিচালক কাজটি বুঝে নিয়েছেন। তারাই ভালো বলতে পারবেন।

গাছের চারা রোপণ প্রকল্প চলাকালীন ফরিদপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন মানিক লাল সরকার। বর্তমানে তিনি যশোর গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত।

এ বিষয়ে তিনি জানান, গাছের চারা রোপণ প্রকল্পটি সরাসরি ঢাকা গণপূর্ত বিভাগের আরবরিকালচারের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তারাই প্রকল্পটি তদারকি করেছে। কাজের বিল ফরিদপুর অফিস থেকে দেয়া হয়েছে।

মানিক লাল সরকার আরও জানান, গাছের চারা রোপণ প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ২০ লাখ ২ হাজার টাকা। সিকিউরিটি মানি রেখে ১৭ লাখ ২ হাজার ৩১৯ টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়। ঢাকা গণপূর্ত বিভাগের আরবরিকালচারের প্রধান বৃক্ষপালনবিদ শেখ মো. কুদরত-ই-খোদার নির্দেশে ফরিদপুর থেকে কাজের বিল দেয়া হয়।

এর আগে, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পর্দা কেলেঙ্কারিসহ সরঞ্জামাদি কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। আলোচিত পর্দা কেলেঙ্কারিসহ সরঞ্জামাদি ক্রয়ে দুর্নীতি ও ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ছয়জনকে আসামি করে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী দুই প্রতিষ্ঠানের মালিক, মেডিকেল কলেজের একজন সহযোগী অধ্যাপক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হাসপাতালের একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও সাবেক প্যাথলজিস্টকে মামলায় আসামি করা হয়।

দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে এ মামলা করা হয়। মামলার বাদি দুদকের ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী।

মামলার আসামিরা হলেন- মেসার্স অনিক ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর আব্দুল্লাহ আল মামুন, মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মুন্সী ফররুখ হোসাইন, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক (দন্ত বিভাগ) ডা. গণপতি বিশ্বাস, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ডা. মিনাক্ষী চাকমা ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক প্যাথলজিস্ট ডা. এ এইচ এম নুরুল ইসলাম।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পর্দা কেলেঙ্কারিতে ছয়জনকে আসামি করে মামলার অনুমোদন দেয় দুদক। গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়।

দুদক জানায়, দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী বাদি হয়ে দণ্ডবিধির ৪০৯/৫১১/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি করেন।

পূর্বকোণ-রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট