চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রাজধানীতে রহস্যজনক মৃত্যু

ছেলে-মেয়েসহ মায়ের লাশ মেঝে-বিছানায়

পূর্বকোণ ডেস্ক

১৩ মে, ২০১৯ | ২:৩৪ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীর উত্তরখান এলাকার একটি বাসা থেকে গতকাল রবিবার রাতে দুই সন্তানসহ এক মায়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা হলেন মা জাহানারা বেগম মুক্তা (৪৮), ছেলে কাজী মহিব হাসান রশ্মি (২৮) ও মেয়ে আফিয়া সুলতানা মিম (২০)। পুলিশ ওই বাসার টেবিল থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করেছে, যাতে তারা আত্মহত্যা করেছেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা আত্মহত্যা করেছেন নাকি তাদের কেউ হত্যা করেছে, তা বলার সময় এখনও হয়নি। একসঙ্গে তিন লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণখান জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হাফিজুর রহমান রিয়েল জানান, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে দরজা ভেঙে বাসার ভেতরের একটি কক্ষে মা ও দুই সন্তানের লাশ পাওয়া যায়। লাশ দেখে মনে হয়েছে দুই-তিন দিন আগে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, উত্তরখান এলাকার ময়নারটেক মহল্লার চাপানেরটেক এলাকার একতলা একটি বাড়িতে চলতি মাসের প্রথম দিকে (রোজার দ্বিতীয় দিন) ভাড়ায় ওঠেন জাহানারা বেগম। গতকাল রবিবার ইফতারের পর স্থানীয় লোকজন ওই বাসা থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে উত্তরখান থানার পুলিশ গিয়ে বাসার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পায়। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে শয়নকক্ষের মেঝেতে ছেলে মহিব হাসান রশ্মির মৃতদেহ এবং বিছানায় মা জাহানারা বেগম ও মেয়ে আফিয়া সুলতানা মিমের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তিন কক্ষের ওই বাসার দরজা-জানালা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল।
একসঙ্গে তিনটি লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে পুলিশেরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে ছুটে যান। আলামত সংগ্রহের জন্য খবর দেওয়া হয় সিআইডির ক্রাইম সিন বিভাগের সদস্যদের। র‌্যাব, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), মহানগর গোয়েন্দা পুলিশসহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলেও ছুটে যান।
লাশ উদ্ধার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ঘরের মেঝেতে শুকিয়ে যাওয়া রক্ত ছড়িয়ে আছে। ছেলেটির লাশ মেঝেতে ওপর পড়ে ছিল। আর বিছানাতে পাশাপাশি মা-মেয়ের লাশ ছিল। তাদের শরীরের কোথায় ক্ষত চিহ্ন রয়েছে, প্রাথমিকভাবে তা বোঝা যায়নি। তিন-চার দিন আগেই মৃত্যু হওয়ার কারণে মরদেহগুলোতে পচন ধরে গেছে। লাশের শরীরে মাছি ভনভন করছিল।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ওই বাসার যে কক্ষ থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেই কক্ষের টেবিলে মোবাইল দিয়ে চাপা দিয়ে রাখা একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। সেই চিরকুটে লেখা ছিল ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য আমাদের ভাগ্য এবং আমাদের আত্মীয়-স্বজনের অবহেলা দায়ী। আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের সম্পত্তি গরিব মানুষকে দান করা হোক। ইতি জাহানারা বেগম মুক্তা।’
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এই চিরকুটের লেখা নিহত ব্যক্তিরাই লিখেছেন নাকি অন্য কেউ তাদের হত্যার পর মোটিভ অন্যদিকে নেওয়ার জন্য লিখেছে তা তদন্তের বিষয়। নিহতদের আত্মীয়-স্বজনদের খবর দিয়ে পুরো ঘটনা জানার চেষ্টা চলছে। খুব শিগগিরই এই মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করা হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত মা জাহানারা বেগমের স্বামীর নাম মৃত ইকবাল। তার বাবার নাম জহিরউদ্দিন আহমেদ। তাদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানাধীন জগন্নাথপুরে। জাহানারা বেগমের ছেলে মহিব সম্প্রতি শেষ হওয়া ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। মেয়েটি কোথায় পড়াশোনা করতেন, তা জানা যায়নি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট