চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

আড়াই মাসেই আমদানি বছরের অর্ধেক পেঁয়াজ

অনলাইন ডেস্ক

২২ নভেম্বর, ২০১৯ | ১১:১১ অপরাহ্ণ

দেশে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল ৯ লাখ ৫০ হাজার টন। গত অর্থবছরেও আমদানির পরিমাণ এর কাছাকাছি ছিল। অথচ চলতি অর্থবছরের আড়াই মাসেই পেঁয়াজের আমদানি ছাড়িয়েছে পাঁচ লাখ টন।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট ১ হাজার ৭২৮টি কনসাইনমেন্টের মাধ্যমে দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। ৪ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৯ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মোট আমদানির প্রায় অর্ধেক। এর বাইরে তিনদিন ধরে দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের আমদানীকৃত পেঁয়াজ দেশে আসা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ১২ হাজার ৫০০ টন এবং সিটি গ্রুপের প্রায় আড়াই হাজার টন শিপমেন্ট হয়ে গেছে। এছাড়া এস আলম গ্রুপ ৫৮ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করছে, যা এরই মধ্যে উড়োজাহাজে আসতে শুরু করেছে। ফলে মোট আমদানির পরিমাণ আরো বাড়বে। সূত্র: বণিক বার্তা।

বাংলাদেশে আমদানীকৃত পেঁয়াজের সিংহভাগই আসে ভারত থেকে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখতে ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে টনপ্রতি ৮৫০ ডলার মূল্য বেঁধে দেয় দেশটি। এর পরদিনই বাংলাদেশের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম এক লাফে বেড়ে যায়। এরপর হঠাৎ করে ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারতের বাণিজ্য দপ্তর। এর প্রভাবে বাংলাদেশের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে পণ্যটির দাম, যা প্রতি কেজি ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এ অবস্থায় পরিস্থিতি মোকাবেলায় অন্যান্য দেশ থেকে অবাধে পেঁয়াজের আমদানির সুযোগ করে দেয় সরকার।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অবাধে পেঁয়াজ আমদানির কারণে কৃষকের ক্ষতি হতে পারে বলে সম্প্রতি আভাস দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। চলতি সপ্তাহে তিনি সাংবাদিকদের জানান, মৌসুম শুরু হলে পেঁয়াজের আমদানিতে শুল্কারোপের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। কেননা মৌসুমের শুরুতেই আমদানি পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি থাকলে কৃষক দাম না-ও পেতে পারেন। এজন্য দ্রুতই আমদানির বিষয়ে বিধিনিষেধ দেয়ার পক্ষে জোর মতামত দিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, এরই মধ্যে পাকিস্তান থেকে ১৩৯ টন, চীন ১ হাজার ১৩২, মিসর ৩ হাজার ৯০৯, মিয়ানমার থেকে ৩৬ হাজার ৬২ টন ও ভারত থেকে ৪ লাখ ৩১ হাজার ২৪ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এছাড়া স্বল্প পরিসরে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, স্লোভেনিয়া, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাত থেকে আমদানি করা হয়েছে পণ্যটি। তবে ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হতে পারে তুরস্ক ও মিসর থেকে। দেশ দুটি থেকে এরই মধ্যে দেশের শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলেছে। আমদানি পেঁয়াজ বিমানে আনার জন্য উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৭ টনের অনুমতি নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৯২৫ টন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য এরই মধ্যে শিপমেন্ট হয়ে গেছে। গত সপ্তাহে সিটি গ্রুপের প্রায় আড়াই হাজার টন পেঁয়াজ তুরস্ক থেকে শিপমেন্ট হয়েছে। তিনটি জায়গা থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট হয়ে দেশে আসবে।

আমদানি যেমন বাড়ানো হচ্ছে, তেমনি কৃষকের দিকটিও খেয়াল রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি জানান, প্রতি বছর ৮-১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। তবে আমদানিনির্ভর না থেকে চাহিদার পুরোটাই দেশে উৎপাদনের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এজন্য কৃষকদের ভর্তুকি ও উৎসাহ প্রদান করা হবে। এছাড়া পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মৌসুমের সময় পেঁয়াজ আমদানির কারণে যাতে দেশের কোনো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে সময় পেঁয়াজ আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের উপযুক্ত মূল্য পান, তা নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে।

দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৪-২৫ লাখ টন। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন। ফসল-উত্তর ক্ষতি বাদ দিলে দেশেই উৎপাদিত পেঁয়াজের পরিমাণ প্রায় ১৭ লাখ টন। তাই আমদানি অবাধ রাখলে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, উৎপাদনকারী জেলাগুলো থেকে এরই মধ্যে আগাম জাতের পেঁয়াজ স্বল্প পরিসরে ওঠা শুরু হয়ে গেছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে। তার পরের ১৫ দিনের মধ্যে পুরো মৌসুম শুরু হয়ে যাবে। ফলে তখন আমদানি বেশি হলে কৃষকরা দাম না-ও পেতে পারেন। তাই ফসল ওঠার মৌসুমে কৃষক যাতে দাম পান, সে ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে কৃষকের জন্য এখনই একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।

 

 

 

পূর্বকোণ-রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট