চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

অপপ্রচারে কান দেবেন না

২২ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:১৬ পূর্বাহ্ণ

গুজব ছড়িয়ে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে অপপ্রচারে কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে আমরা দেখি কিছু অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয়। আমি সবার কাছে একটা কথা বলব- অপপ্রচারে কান দেবেন না।-বিডিনিউজ

ভারত সেপ্টেম্বরের শেষে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর এক লাফে দাম ছাড়িয়ে গিয়েছিল ১০০ টাকা। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই পেঁয়াজের দাম দুই দিনে উঠে যায় আড়াইশ টাকায়। সরকারের হুঁশিয়ারি আর বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানির খবরে রাতারাতি তা বেশ খানিকটা কমেও যায়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা লাভের চেষ্টায় বড় ধরনের ক্ষত তৈরি হয় ভোক্তাদের বিশ্বাসে। এই পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার রাত থেকে লবণ সঙ্কট ও দাম বৃদ্ধির গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সেই গুজবে কান দিয়ে লবণ কিনতে দোকানে দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মানুষ। সুযোগ বুঝে অনেক বিক্রেতা দাম বাড়িয়ে দেন। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর আকার ধারণ করে যে সরকার মঙ্গলবার প্রেস নোট দিয়ে জানায়, বাজারে লবণের সংকট নেই, গুজব ছড়িয়ে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে।

সেই প্রসঙ্গ টেনে বৃহস্পতিবার সকালে আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ নেই, লবণ নেই, এটা নেই, সেটা নেই- নানা ধরনের কথা প্রচার হয় এবং এভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফেলার চেষ্টা করা হয়। এটা করবে আমি জানি। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেটাকে মোকাবেলা করেই আমাদের চলতে হবে। আমরা সেভাবেই চলছি।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর নয়জন, নৌবাহিনীর দুইজন এবং বিমান বাহিনীর তিনজন সদস্যকে ২০১৮-২০১৯ সালের শান্তিকালীন পদকে ভূষিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, আজকে আমাদের মাছ উৎপাদন বেড়েছে, তরিতরকারি উৎপাদন বেড়েছে। খাদ্য ও পুষ্টির দিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি। কমিউনিটি ক্লিনিকে সারা বাংলাদেশে আমরা ৩০ প্রকার ওষুধ বিনা পয়সায় দিচ্ছি। প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য আমরা যথাযথ কাজ হাতে নিয়েছি এবং এটা আমরা অব্যাহত রাখব।

বিজয়ী জাতি হিসেবে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম জানতে পারে, সে বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, যারা এখানে মুক্তিযোদ্ধা আছেন বা মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের আমি একটা অনুরোধ করব। আপনারা আপনাদের ছেলে, মেয়ে, নাতিপুতি অথবা এলাকাবাসী- তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলবেন। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে প্রতিটি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স করে দেওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিজয়ের ইতিহাস নতুন প্রজন্ম জানবে, বিজয়ী জাতি হিসেবে তাদের মধ্যেও আত্মমর্যাদাবোধ গড়ে উঠবে, মাথা উঁচু করে চলতে তারা শিখবে। কারো কাছে হাত পেতে নয়, আমরা আমাদের নিজেদের সম্পদ দিয়ে নিজেদেরকে গড়ে তুলব। বিশ্বসভায় আমরা মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে চলব।

মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে যেখানে আমাদের যুদ্ধ হয়েছে, গণহত্যা হয়েছে, সেই গণহত্যার খবরগুলো খুঁজে বের করা বা যেখানে যেখানে গণহত্যা হয়েছিল, সেই জায়গাগুলো সংরক্ষণ করার চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের সদস্য এবং ১০১ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীরা এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আবু মোজাফফর মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট