চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগের সিদ্ধান্ত

অনলাইন ডেস্ক

২০ নভেম্বর, ২০১৯ | ৭:২৪ অপরাহ্ণ

নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পিএসসিকে চিঠি দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। গুরুত্বপূর্ণ কারিগরি পদটি ইতঃপূর্বে যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হলেও এবারই প্রথম সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এ প্রক্রিয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। প্রচলিত বিধি ভঙ্গ করে এভাবে মুখ্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলে সংস্থার যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

অন্যদিকে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এসোসিয়েশন। সম্প্রতি নৌ-সচিবকে লেখা এক চিঠিতে এসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী এ দাবি জানান। সূত্র: সময়ের আলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অঙ্গ সংস্থা হলেও নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তা পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রগামী ও উপকূলীয় জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব এই সংস্থার ওপর ন্যস্ত। যে কারণে নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তা পদে সবসময় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন পেশাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ পর্যন্ত নিয়োগ পাওয়া প্রত্যেকেই নৌপরিবহন অধিদপ্তর কিংবা এর কোনো অঙ্গ সংস্থার কর্মকর্তা ছিলেন। চলতি বছরের ১ মার্চ মুখ্য কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম অবসর-উত্তর ছুটিতে যাওয়ায় পদটি শূন্য হয়। এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এক চিঠিতে শূন্য পদে স্থায়ী নিয়োগের আগ পর্যন্ত কর্মরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে একজনকে চলতি দায়িত্ব প্রদানের জন্য নৌ-সচিবকে অনুরোধ করেন। মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফুল ইসলামের দপ্তর থেকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওই চিঠির সঙ্গে মুখ্য কর্মকর্তা পদে বিদ্যমান নিয়োগ বিধিও সংযুক্ত করা হয়।

এতে দেখা যায়, শূন্য পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। প্রথমত, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর কিংবা নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের একজন নটিক্যাল সার্ভেয়ারকে পদোন্নতি প্রদান। দ্বিতীয়ত, এই দুই সংস্থার একজন ‘ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার’কে পদোন্নতি প্রদান। তৃতীয়ত, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ারকে বদলি করে মুখ্য কর্মকর্তা পদে পদায়ন। চতুর্থত, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে মুখ্য কর্মকর্তা পদে বদলি। পঞ্চম বা সর্বশেষ বিকল্পে বলা হয়েছে, যদি পদোন্নতি বা বদলি করার মতো উপযুক্ত কর্মকর্তা না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে সরাসরি নিয়োগ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়সসীমা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার বাধ্যবাধকতাও উল্লেখ রয়েছে নিয়োগ বিধিতে।

তবে সংস্থার মধ্যে পদোন্নতি পাওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তা থাকলেও নৌ-মন্ত্রণালয় প্রথমদিকে সে প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। ১ মার্চ মুখ্য কর্মকর্তার পদটি শূন্য হলে মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট সাজিদ হোসেনকে এই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তবে তিনি সমুদ্রগামী জাহাজ সার্ভে (ফিটনেস পরীক্ষা), রেজিস্ট্রেশন, সমুদ্রবন্দরে যাতায়াতকারী জাহাজের ছাড়পত্র প্রদান এবং নাবিকদের পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ছিলেন না। ফলে সংস্থার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নৌ-মন্ত্রণালয় গত ৬ অক্টোবর নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কন্ট্রোলার অব মেরিটাইম এডুকেশন (সিএমই) ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিনকে নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তা পদে নিয়োগ (চলতি দায়িত্বে) দেয়।

অন্যদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যেই এ পদে সরাসরি নিয়োগের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পিএসসিকে চিঠি দিয়েছে নৌ-মন্ত্রণালয়। বিষয়টি জানাজানি হলে নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রচন্ড হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক মুখ্য কর্মকর্তা ও সাবেক এক চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার জানান, নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ কারিগরি জ্ঞানসমৃদ্ধ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে। যে কারণে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত নৌ-অধিদপ্তর অথবা নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই পদটি পূরণ করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এসোসিয়েশনের চিঠিতে বলা হয়, নৌ-মন্ত্রণালয় যে দুটি শর্ত জুড়ে দিয়ে নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের প্রধান নির্বাহী পদে সরাসরি নিয়োগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, সে শর্ত ১৯৯০ সালে যুক্তরাজ্য বাতিল করেছে। পদটির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এবং বাস্তবতা উপলব্ধি করেই দেশটি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে এসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী মন্তব্য করেন। তিনি অবিলম্বে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের জোর দাবি জানান।

 

 

পূর্বকোণ-রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট