চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দুর্নীতি এড়াতে হার্ডলাইনে গণপূর্ত

প্রকল্প গ্রহণে পরিপত্র জারি ‘পরিপত্রের ইতিবাচক দিক দুর্নীতি করতে সাহস করবে না কেউ ও নেতিবাচক দিক অনেক সংস্থার পক্ষে প্রকল্প গ্রহণ করা কঠিন হবে’

ইফতেখারুল ইসলাম

১৯ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:৫৩ পূর্বাহ্ণ

রূপপুরের বালিশ কিংবা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে পর্দাকা-ের মতো ঘটনা এড়াতে প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে কঠোর অনুশাসন দিয়ে সম্প্রতি পরিপত্র জারি করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। প্রাক্কলনের সাথে রেট, শিডিউল/বাজারমূল্যের অসামঞ্জস্যতা থাকলে সংস্থাপ্রধান মনোনীত কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে। এই মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাসমূহ প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিপত্রের ১৪টি অনুশাসন অনুসরণ করবে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখা-১ এর সিনিয়র সহকারী প্রধান অনিমেষ সোম স্বাক্ষরিত এই পরিপত্র জারি হয়।

অনুশাসনসমূহ হল নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে যোগ্যতাসম্পন্ন তৃতীয় পক্ষ দ্বারা বিস্তারিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অর্থাৎ পরিবেশগত, সামাজিক ও কারিগরি প্রভাব এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষণসহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম আবশ্যিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় দলিলাদি সংযুক্তপূর্বক ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। দ্বিতীয় নম্বরে বলা হয়, স্থাপনা নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পসমূহের ক্ষেত্রে কারিগরি পরীক্ষা যেমন মৃত্তিকা পরীক্ষা, সাইট নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্যাদি ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। তৃতীয়ত বিশেষ কারণ ছাড়া চলমান প্রকল্পের ব্যয়, মেয়াদ বৃদ্ধি আন্তঃঅঙ্গ সমন্বয় এবং প্রকল্প সংশোধন করা যাবে না। জরুরি প্রয়োজন হলে মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্ববান কর্মকর্তা সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিপত্রের চতুর্থ নম্বর অনুশাসনে বলা হয়, প্রকল্পের ড্রয়িং ও ডিজাইন চূড়ান্ত করে মোট ব্যয় প্রাক্কলনের পর প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে। তার পূর্বে কোন অবস্থাতেই ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা যাবে না। পাঁচ নম্বরে বলা হয়, প্রকল্পের আইটেমের পরিমাণ এবং আইটেম অনুযায়ী প্রাক্কলিত ব্যয়ের সঠিকতা ও যথার্থতা সংস্থাপ্রধান এবং সংস্থাপ্রধান কর্তৃক মনোনীত উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা দ্বারা যৌথ প্রত্যয়িত হতে হবে। প্রাক্কলনের সাথে রেইট, শিডিউল/বাজার মূল্যের অসামঞ্জস্যতা থাকলে সংস্থাপ্রধান কর্তৃক মনোনীত কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। ছয় নম্বর অনুশাসনে বলা হয়, ভেরিয়েশন, পুনঃকার্যাদেশ, অতিরিক্ত কার্যাদেশসহ এ ধরনের সকল কার্যক্রম নিরুৎসাহিত করতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে যৌক্তিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ভেরিয়েশন, পুনঃকার্যাদেশ, অতিরিক্ত কার্যাদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে পিপিআর ৭৭, ৭৮ এবং ৭৯ ধারা যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবে প্রত্যয়ন সংযুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক। সাত নম্বরে বলা হয়, বিদ্যমান বিধি-বিধান অনুসারে গঠিত অধিদপ্তর/সংস্থার পণ্য সংশ্লিষ্ট সেবা কার্য ক্রয় সংক্রান্ত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি নিয়মিতভাবে পুনর্গঠন করতে হবে। প্রকল্পের আওতাভুক্ত কাজ বা ক্রয়সমূহের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে। প্রতিটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকায় সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করবেন এবং সংস্থাপ্রধানকে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। সংস্থাপ্রধানসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সিনিয়র কর্মকর্তাগণ নিয়মিতভাবে প্রকল্প এলাকা আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক বা আকস্মিকভাবে পরিদর্শন করবেন এবং চিহ্নিত সুনির্দিষ্ট অনিয়মসহ মন্ত্রণালয়/সংস্থায় প্রতিবেদন দেবেন। এছাড়া ক্রয়কারী কর্তৃক যোগ্যতাসম্পন্ন সরবরাহকারী বা ঠিকাদারের তালিকা সংরক্ষণ করতে হবে। প্রকল্প সাইটে সাইট অর্ডার বুকসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের সকল নথি/ডকুমেন্ট যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রকল্প সাইটের দৃশ্যমান স্থানে প্রকল্পের সমস্ত তথ্য সম্বলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে এবং প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন, নির্মিত, নিমিতব্য স্থাপনা অবকাঠামোসমূহের উপকরণসমূহের গুণগত মান উপযুক্ত ল্যাবরেটরিতে নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একাধিক প্রকৌশলীর সাথে আলাপকালে তারা পূর্বকোণকে জানান, এই পরিপত্রের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটি দিক রয়েছে। ইতিবাচক দিক হল প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন কাজ বা পণ্যের মাত্রাতিরিক্ত দাম দেখানোর সাহস কেউ করবে না। এর নেতিবাচক দিক হল, সংস্থাসমূহ প্রকল্প গ্রহণের সময় যদি নিজেদের অর্থায়নে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হয়, তখন এই খাতে বড় অংকের একটি খরচ হয়। এই খরচ যদি মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া না হয়, তাহলে অনেক সংস্থার পক্ষে প্রকল্প গ্রহণ করা কঠিন হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট