চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

‘শুদ্ধি অভিযানে’ স্থবিরতা!

অনলাইন ডেস্ক

১৭ নভেম্বর, ২০১৯ | ১১:০৭ অপরাহ্ণ

অবৈধ ক্যাসিনো, ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া সরকারের ‘শুদ্ধি অভিযান’ হঠাৎ করেই ঝিমিয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানের ভয়ে যারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আত্মগোপন করেছিল, তারা আবারও প্রকাশ্য হচ্ছে। চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও নানা অপকর্মের হোতা হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত অনেকেই আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে পোস্টারিং করছে। এমনকি এই শুদ্ধি অভিযান যাতে চলমান না থাকে সে লক্ষ্যেও কিছু প্রভাবশালী নানা কৌশলে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র : সময়ের আলো।

সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়েই সরকার এই শুদ্ধি অভিযান শুরু করে। হঠাৎ হঠাৎ করেই অভিযান মোড় নিতে পারে। সেক্টর বা বিভিন্ন পর্যায় টার্গেট করে অভিযান চালানো হবে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, শুদ্ধি অভিযান চলবেই। অপকর্মে যারাই জড়িত কেউই ছাড় পাবে না। এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বুধবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সরকার এ বিষয়ে কঠোর বার্তা দিলেও সম্প্রতি কয়েকদিন অবৈধ ক্যাসিনো বা অনিয়ম-দুর্নীতিসহ অপকর্মবিরোধী অভিযান তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। সাধারণ মানুষ মনে করছেন সরকারের শুদ্ধি অভিযান হয়তো থমকে গেছে। অনেকেরই ধারণা, শুদ্ধি অভিযানকে ভুলিয়ে দিতে শক্তিশালী কোনো অসাধু সিন্ডিকেট ‘পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করে ইস্যু’ সৃষ্টি করে থাকতে পারে। এরই মধ্যে জানা যাচ্ছে রাজধানীর অনেক এলাকায় ফের প্রকাশ্যে আসছেন অভিযানের আতঙ্কে আত্মগোপনে থাকা অপকর্মের হোতারা।

রাজধানীর উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু এলাকায় তারা আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়া সংক্রান্ত ছবি পোস্টারিং করছে। এমনকি ক্যাসিনো কাণ্ডের গডফাদার খ্যাত যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াদের নাম ব্যবহার করে এখনও তাদের অনুসারীরা চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়।

চলমান শুদ্ধি অভিযানে মূল ভূমিকা পালনকারী এলিটফোর্স র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফট্যান্যান্ট কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম জানান, অবৈধ ক্যাসিনো, জুয়া, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে যে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছিল, তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এ অভিযান চলবেই। সরকারের নির্দেশনামতে, র‌্যাব এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে। যারা প্রকৃত অপরাধী তারা কেউই ছাড় পাবে না।

১৮ সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ ক্যাসিনোবিরোধী কঠোর অভিযান শুরুর পর ঢাকার বিভিন্ন খেলাধুলার ক্লাবে অবৈধ জুয়া, ক্যাসিনো, মদের বার পরিচালনা ও বিভিন্ন সেক্টরে চাঁদাবাজি- টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িতরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অভিযানের কারণে ঢাকার একাধিক কাউন্সিলর ও একাধিক প্রভাবশালী রাজনীতিক ভয়ে দেশ ছাড়েন। অথচ এই প্রভাবশালীদের ভয়ে কিছুদিন আগেও সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপক আতঙ্কে থাকতেন। তারাই যখন পালিয়ে বেড়াতে শুরু করেন তখন সরকারের এই সদিচ্ছার প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায় সব শ্রেণির মানুষ। অভিযানে ধরা পড়েন যুবলীগের মহাপ্রতাপশালী নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জিকে শামীমসহ বেশ কয়েকজন রাঘব-বোয়াল।

অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে একছত্র আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত শতাধিক রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। মাঝখানে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) অভিযানে নামলেও শেষ পর্যন্ত সমালোচনা নিয়ে অভিযান থেকে প্রায় বিরতিতে চলে গেছে। এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে কৃষক লীগের নেতা শফিকুল আলম শামীম, বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেন ও সেলিম প্রধানসহ অন্তত দেড় ডজন প্রভাবশালী। তবে অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই আত্মগোপনে চলে গেছে যুবলীগ নেতা সম্রাটের অন্যতম সহযোগী কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মোল্লা আবু কাওছার ও গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা দুই ভাই এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়াসহ আরও অনেকেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ গডফাদারদের কেউ বিদেশে কেউ বা দেশেই আত্মগোপন করেছেন। কেউ আটক হলেও প্রকাশ করা হচ্ছে না বলেও গুঞ্জন রয়েছে। তবে তাদের আটক বা গ্রেপ্তারে তেমন প্রকাশ্য তৎপরতা দেখছেন না সাধারণ মানুষ।

রাজধানীতে অবৈধ ক্যাসিনোর সংখ্যা প্রায় ৬০টির মতো। যার অধিকাংশেরই নিয়ন্ত্রক যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও স্থানীয় পর্যায়ের আ. লীগের নেতারা। তবে এ নেতাদের নেপথ্যেও রয়েছে বড় বড় রাঘব-বোয়ালরা। তাদের নাম পরিচয় নিয়ে নানা গুঞ্জন ওঠলেও প্রকাশ্যে আনা হয়নি তাদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম জানান, ক্ষমতাসীন নিজ দলের লোকদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা অবশ্যই একটি দৃষ্টান্ত বটে। এতে করে অবৈধ ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অভিযানে সরকারের ভাবমূর্তি বেড়েছে। তবে এই অভিযান বা কঠোর পদক্ষেপ ধরে রাখতে হবে। তা না হলে অভিযানের ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

 

 

পূর্বকোণ-রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট