চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তূর্ণা নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ, নিহত ১৬

গভীর রাতে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা

৮ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ‘ঘুমে ছিলেন তূর্ণার চালক-গার্ডরা’

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ নভেম্বর, ২০১৯ | ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

সোমবার রাত ২টা ৪৮ মিনিট। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা শশীদল রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করে রওনা হয় মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের দিকে। মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার ট্রেনটিকে মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশের আগেই আউটারে সিগন্যাল দেয়।

অপরদিকে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসও ঢুকছিল মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে। তবে প্রবেশকালে স্টেশনমাস্টার ট্রেনটিকে মেইন লাইন ছেড়ে দিয়ে ১ নম্বর লাইনে আসার সংকেত দেন। সংকেত অনুযায়ী ওই ট্রেনের চালক ১ নম্বর লাইনে প্রবেশ করাতে শুরু করেন ট্রেনটি। ছয়টি বগি প্রধান লাইনে থাকতেই চলন্ত উদয়নকে ধাক্কা দেয় অপরদিক থেকে আসা তূর্ণা নিশীথা। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় উদয়ন ট্রেনের তিনটি বগি। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ১৬ যাত্রী। আহত হয় শতাধিক যাত্রী। দুর্ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার জাকের হোসেন চৌধুরী।

নিহতরা হলেন- চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের পশ্চিম রাজারগাঁওয়ের মুজিবুল রহমান (৫৫), হবিগঞ্জের ভোলার ইয়াছিন আরাফাত (১২), চুনারঘাটের তিরেরগাঁওয়ের সুজন আহমেদ (২৪), মৌলভীবাজারের জাহেদা খাতুন (৩০), চাঁদপুরের কুলসুম বেগম (৩০), হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের আল-আমিন (৩০), হবিগঞ্জের আনোয়ারপুরের আলী মোহাম্মদ ইউসুফ (৩২), হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের আদিবা (২), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সোহামনি (৩), চাঁদপুরের উত্তর বালিয়ার ফারজানা (১৫), চাঁদপুরের হাইমচরের কাকলী (২০), হবিগঞ্জের রিপন মিয়া (২৫), চাঁদপুরের হাইমচরের মরিয়ম (৪), নোয়াখালীর মাইজদির রবি হরিজন (২৩), চাঁদপুর সদরের ফারজানা (১৫) ও হবিগঞ্জের চুনুরঘাটের পিয়ারা বেগম (৩২)।
অন্যদিকে আহতরা কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকার মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এদিকে সিগন্যাল অমান্য করার দায়ে তূর্ণা নিশীথার চালকসহ তিনজনকে বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে তূর্ণা নিশীথার চালক, সহকারী চালক ও পরিচালককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয় বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মিয়া জাহান। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে বোঝা গেছে, তূর্ণা এক্সপ্রেসের চালক সিগন্যাল অমান্য করে ভুল লাইনে চলে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার কারণে ওই ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও পরিচালক (গার্ড) তিন জনকেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ঘুমে ছিলেন চালকসহ ট্রেন পরিচালকরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় মন্দবাগ রেল স্টেশনে চলন্ত উদয়নকে ধাক্কা দেয় অপরদিক থেকে আসা তূর্ণা নিশীথা। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় উদয়ন ট্রেনের তিনটি বগি। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ১৬ যাত্রী। আহত হয় শতাধিক যাত্রী। বিষয়টি নিয়ে প্রথমদিক থেকেই রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে রেলমন্ত্রীও গণমাধ্যমে জানিয়েছে তূর্ণা নিশীথা ট্রেনটির চালকের ভুলের কথা। তবে কী ঘটেছিল তা খোলাসা করেন নি কেউ।
বিষয়টি জানতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হয়। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথার চালক মন্দবাগ রেল স্টেশনে প্রবেশকালে সিগন্যাল দেখেননি। এমনকি তার সহকারি চালক ও গার্ডের নজরেও আসেনি জ্বলন্ত লাল লাইটটি। যার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ঐ সময় তারা তিনজনই গভীর ঘুমে ছিলেন।’
৮ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হয় ট্রেন চলাচল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বিশেষ ব্যবস্থায় চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিট থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এতে প্রায় ৮ ঘণ্টা পর রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়। মন্দবাগ রেলস্টেশনের মাস্টার জাকির হোসেন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিশেষ ব্যবস্থায় অন্য লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। আখাউড়া ও লাকসাম থেকে রিলিফ ট্রেন এসে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ৭ বগি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেখে উদয়ন ফিরল চট্টগ্রামে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুর্ঘটনায় কবলিত সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি চট্টগ্রামে পৌঁছেছে। দুর্ঘটনা কবলিত ৭টি বগি ঘটনাস্থলে রেখে অক্ষত ৯টি বগি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রামে পৌঁছে ট্রেনটি। ট্রেনটি পুনরায় চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস হয়ে সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা করেছে। যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম থেকে বাড়তি একটি ও আখাউড়া থেকে ৪টি কোচ নিয়ে সর্বমোট ১৪টি কোচ থাকবে পাহাড়িকায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. আবুল কালাম আজাদ।

ক্ষতিপূরণের ঘোষণা রেলমন্ত্রীর
মন্দবাগ রেল স্টেশনে তূর্ণা-নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আর আহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। গতকাল মঙ্গলবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে এ ঘোষণা দেন রেলমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি এবং রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে

চারটিসহ মোট তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি তূর্ণা-নিশীথার চালক সিগন্যাল অমান্য করায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেবে। এরপর কারণ জানা যাবে।’ এর আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশ দাফনের জন্য নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা জানান রেল সচিব।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট