চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বুলবুল’র অজুহাতে বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম

অনলাইন ডেস্ক

১১ নভেম্বর, ২০১৯ | ৯:৫৭ অপরাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল-এর কারণে সরবরাহ কমে গেছে, এই অজুহাতে চট্টগ্রামে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। রেয়াজুদ্দিন বাজার ও অলিগলির দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। অথচ একসপ্তাহ আগেও এ দর প্রতি কেজিতে ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে।
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানার আগে মহাবিপদ সঙ্কেত জারির পর শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে কোনো জাহাজে পণ্য খালাস হয়নি। তবে রোববারই বন্দর আবার বন্দরে কাজ পুরোদমে শুরু হয়।- বিডিনিউজ
খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মার্কেট কাঁচামাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিচ বলেন, “ঘূর্ণিঝড় হওয়ায় ডেলিভারি কম হয়েছে পেঁয়াজের। চট্টগ্রাম ও টেকনাফ বন্দরে আমদানি করা পেঁয়াজ খালাস হয়নি। এ কারণে বাজারে সরবরাহ কম হয়েছে।”
গত সেপ্টেম্বরে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে; ৩০ টাকা কেজির পেঁয়াজ কয়েক দিনেই পৌঁছে যায় ১০০ টাকায়।
তখন সরকার মিয়ানমার থেকে আমদানি শুরু করে। এছাড়া টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি এবং আড়তগুলোতে অভিযানের পর দাম কিছুটা কমলেও পরে আবার দাম বাড়তে শুরু করে।
এখন তুরস্ক ও মিশর থেকে আমদানি করে পেঁয়াজের বাজার সহনীয় করার চেষ্টা করছে সরকার। এই পেঁয়াজই আসছে জাহাজে। নতুন পেঁয়াজ আমদানির পর দাম ৮৫ টাকায় নেমে আসার আশা শোনালেও তা ঘটেনি।
আড়তদার ইদ্রিচ বলেন, “আমরা প্রশাসনের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিলাম পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮৫ টাকায় বিক্রি করব। তবে দরের ক্ষেত্রে কমিটমেন্টের সাথে কোনো মিল নেই। এর সুযোগ হয়তো খুচরা দোকানদাররা নিয়েছে।” তবে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে সোমবার কত দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে, তা সরাসরি বলতে চাননি।
খাতুনগঞ্জের অন্য এক আড়তদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাইকারিতে ভাল মানের পেঁয়াজ ১১০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হয়েছিল সোমবার।
নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি করছিলেন ১২০ ও ১৩০ টাকায়। অন্যদিকে নগরীর চেরাগী পাহাড়ের লাকী স্টোরে বিক্রি হচ্ছিল প্রতি কেজি ১৪০ টাকায়। খুচরা বিক্রেতাদের বক্তব্য, সোমবার খাতুনগঞ্জে গিয়ে তারা চাহিদা মাফিক পেঁয়াজ কিনতে পারেননি।  আড়তদার ইদ্রিচ বলেন, ঝড়ের কারণে জাহাজের পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় তাদের হাতে পেঁয়াজ কম ছিল।
গত দেড় মাসে বিদেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৬৫ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এসেছে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন। কৃষিজাত পণ্যের ঋণপত্র খোলার পূর্বে আমদানির অনুমতি নিতে হয় চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ কেন্দ্র থেকে। পণ্য আমদানির পর খালাসের আগেও তাদের কাছ থেকে ছাড়পত্র নেওয়া হয়।
উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছে ৬৫ হাজার ৯৩০ টনের। এর বিপরীতে এসেছে চার হাজার ৮১৫ টন।
মোট ৩৯টি আমদানি অনুমতির বিপরীতে এসব পণ্য আসবে। এস আলম গ্রুপের সোনালী ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠান পাঁচটি ঋণপত্রের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করছে। সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আসবে মিশর থেকে ৫৮ হাজার ১৮৮ টন। এছাড়া চীন থেকে চার হাজার ৫২২ টন, পাকিস্তান থেকে দুই হাজার দুইশ টন, তুরস্ক থেকে ৮২০ টন, উজবেকিস্তান থেকে আনা হচ্ছে ২০০ টন।
ইতোমধ্যে মিশর থেকে ২ হাজার ৪৪৬ টন, চীন থেকে ৮৪৭ টন, মিয়ানমার থেকে এক হাজার ২২৮ টন, আরব আমিরাত থেকে এসে পৌঁছেছে ১১২ টন।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৩৬ ঘণ্টা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। রোববার দুপুর থেকে বন্দরে পণ্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিক হয়েছে। বিভিন্ন জাহাজে করে পণ্য আসছে এবং সেখানে বিভিন্ন কন্টেইনারে পেঁয়াজও রয়েছে।”
তিনি বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দুই দিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পেঁয়াজ খালাস হয়নি। সোমবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৭৫ টন পেঁয়াজ ছাড় হয়েছে। অনুমতি নেওয়া বাকি আমদানির চালান চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশে এসে পৌঁছাবে। ওইসব পণ্যের ছাড়পত্র দ্রুত দেয়া হচ্ছে।”

 

পূর্বকোণ/ এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট