চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইয়াঙ্গুনে দুর্ঘটনা তদন্তে যুক্ত হবে বাংলাদেশ

আহতদের ছাড়াই ফিরলো বিমানের বিশেষ ফ্লাইট

১০ মে, ২০১৯ | ২:৩৮ পূর্বাহ্ণ

প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীর বর্ণনায় দুর্ঘটনার মুহূর্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে দুর্ঘটনাকবলিত উড়োজাহাজের কোনো যাত্রীকে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। তাঁদের ছাড়াই বিমানের বিশেষ ফ্লাইটটি গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকায় ফেরত এসেছে। বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিল জানান, আহত যাত্রীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, মিয়ানমারের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যাত্রীদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। ছাড়পত্র দেওয়া হলে দ্রুতই তাঁদের ফিরিয়ে আনা হবে। জানা গেছে, মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরের রানওয়েতে ছিটকে পড়া বিমানের আহত ১৪ জন যাত্রী সেখানকার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহত বাকি চার যাত্রী চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। তবে দুর্ঘটনাকবলিত কোনো যাত্রীকে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। তাঁদের ছাড়াই বিমানের বিশেষ ফ্লাইটটি গতকাল ভোরে ঢাকায় ফেরত এসেছে।
এদিকে, গত বুধবার মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে দুর্ঘটনাকবলিত বাংলাদেশ বিমানের ড্যাশ-৮ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। ছয় সদস্যের এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিমানের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি) ক্যাপ্টেন শোয়েব চৌধুরীকে। বিমানের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ (জনসংযোগ) গতকাল এ তথ্য জানান। বাংলাদেশ সময় গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটে ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বৈরী আবহাওয়ার কারণে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশের ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ। ওই উড়োজাহাজে এক শিশুসহ ২৯ জন যাত্রী, দুই পাইলট ও দুজন কেবিন ক্রু ছিলেন। বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে উড়োজাহাজটি ঢাকা থেকে ইয়াঙ্গুনের উদ্দেশে উড্ডয়ন করেছিল। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৮ জন। পরে দুর্ঘটনাকবলিত বিমানের যাত্রীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে রাত ১১টা ২৫ মিনিটে বিমানের বিশেষ ফ্লাইট মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা দেয়।
দুর্ঘটনা তদন্তে যুক্ত হবে বাংলাদেশ : এদিকে ইয়াঙ্গুনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে তদন্তে নামছে মিয়ানমার এয়ারক্রাফট ইনভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ। এ তদন্তে দেশটিকে সহায়তা করবে বাংলাদেশের এয়ারক্রাফট এক্সিডেন্ট ইনভিস্টিগেশন গ্রুপ (এএআইজি)। দুটি সংস্থার মধ্যে এ বিষয়ে চিঠি আদান প্রদান হয়েছে। আগামীকাল শনিবার মিয়ানমার যাচ্ছেন বাংলাদেশের এয়ারক্রাফট এক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন গ্রুপের (এএআইজি) প্রধান ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন এম রহমতউল্লাহ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের এয়ারক্রাফট এক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন গ্রুপের (এএআইজি) প্রধান ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন এম রহমতউল্লাহ বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারে চিঠি দিয়েছি, তারাও আমাদের দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অরগানাইজেশনের (আইকাও) এনেক্স ১৩ অনুসারে যে দেশের বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হবে সেদেশের প্রতিনিধি তদন্ত কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারবে। আমি শনিবার মিয়ানমার যাবো, পরবর্তীতে কমিটিতে আরও প্রতিনিধি যুক্ত হতে পারবে।’
দুর্ঘটনা তদন্তে বিমানের কমিটি : মিয়ানমারে বিমানের একটি ফ্লাইট দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ার বিষয়টি তদন্তে কমিটি করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। সংস্থাটির চিফ অব ফ্লাইট সেফটি শোয়েব চৌধুরীকে প্রধান করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানান, ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করবে। কমিটিতে আরও রয়েছেন, বিমানের ম্যাজোর (কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ) নিরঞ্জন রায়, ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন সৈয়দ এম মুয়িম, ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার (লাইন মেইন্টিন্যান্স) মোহাম্মদ হানিফ, ম্যানেজার (ফ্লাইট সেফটি) মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি।
উড়োজাহাজ সরাতে সাহায্য করবে ওয়াইএসিএল : ইয়াংগুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষ ও এয়ার অপারেটরদের সবরকম সহায়তা করার ঘোষণা দিয়েছে বিমানবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইয়াংগুন এরোড্রোম কোম্পানি লিমিটেড (ওয়াইএসিএল)। গত বুধবার প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি একথা জানায়। বিবৃতিতে ওয়াইএসিএল বলেছে, ‘তাৎক্ষণিক আমরা উড়োজাহাজটির যাত্রী এবং ক্রুদের নিরাপত্তা ও সুস্থতা নিশ্চিত করার বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। এর পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে আমরা কর্তৃপক্ষ এবং এয়ার অপারেটরদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব যেন ঘটনাস্থল থেকে যত দ্রুত সম্ভব সহজেই বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটি সরিয়ে নেয়া যায়।’ এ ঘটনায় মিয়ানমারের ডিপার্টমেন্ট অব সিভিল এভিয়েশন (ডিসিএ) এবং এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ (এআইআইবি) মিলে তদন্তকাজ শুরু করেছে বলেও জানানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীর বর্ণনায় দুর্ঘটনার মুহূর্ত : বিবিসি জানায়, দুর্ঘটনা কবলিত বিমানের ওই ফ্লাইটটিতে থাকা আহত যাত্রীদের একজন ঢাকার রেজওয়ানা খান, যিনি একজন প্রযুক্তি বিষয়ক উদ্যোক্তা। তিনি ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা। আজ শুক্রবার মিয়ানমারে একটি ব্যবসায়িক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু বিমান দুর্ঘটনার কারণে এই মুহূর্তে তিনি ইয়াঙ্গুনের বেসরকারি এআরওয়াইইউ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখান থেকে টেলিফোনে গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, বিমানটি যখন রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে সেই সময়কার মুহূর্ত কেমন ছিল। তিনিসহ অন্য যাত্রীরা প্রথম দিকে বিপদের আশংকা আঁচ করতেও পারেননি। ‘আমরা তো নরমাল ছিলাম। কারণ এরকম থান্ডার-স্টর্ম (বজ্রপাত) তো অনেক সময়ই হয়।’ তিনি বলেন, একটা সময় বিমানটি জোরে একটি ঝাঁকুনি খায় এবং তারপর আছড়ে পড়ে। তার আগে আমরা বুঝতেই পারিনি কী ঘটতে যাচ্ছে। রেজওয়ানা খান বলেন, প্রথমে থান্ডার-স্টর্ম হচ্ছিল, পাইলট আধঘণ্টার বেশি আকাশে চক্কর দিচ্ছিলেন। নামার চেষ্টা করেও নামতে পারছিলেন না, তখন অন্যদিকে ঘুরে যান। তিনি আরও বলেন, পাইলট একটা সময় ইঞ্জিন বন্ধ করে দেন; যে কারণে বিমানে আগুন লাগেনি বলে আমরা মনে করছি। তাদেরকে বারবার বলা হচ্ছিল এক্সিট ডোর খোলার চেষ্টা করতে। রেজওয়ানা বলেন, আমি বিমানের পেছনের দিকে ছিলাম। আমাদের বলা হচ্ছিল আপনারা এক্সিট ডোর পুল করেন, শুরুতে পারছিলাম না। অনেক চেষ্টার পর ডানদিকেরটা পুল করতে পারলাম। তিনি জানান, বিমানটি আছড়ে পড়ে জোরে একটা ঝাঁকুনি লাগায় তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন। এরপর তাদের দ্রুত বের করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে তার মুখে সেলাই লেগেছে বলে জানান তিনি। চোখে চশমা থাকায় আমার নাক কেটে গেছে, ব্লিডিং হচ্ছিল, স্টিচ লেগেছে। তবে তিনি মনে করেন, পাইলটের দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তায় তারা বেঁচে গেছেন।
প্রসঙ্গত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা থেকে ইয়াঙ্গুনগামী ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের ফ্লাইটটি (বিজি ০৬০) বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা ত্যাগ করে। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে ইয়াঙ্গুনে অবতরণের সময় বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে রানওয়ে থেকে ছিটকে যায়। এ ঘটনায় ১৯ যাত্রী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৮ জনকে মিয়ানমারের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট