চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘পুলিশ অহেতুক গুলি করলে বিচার হবে’

তৌহিদি জনতার ৬ দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

২২ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:১৩ পূর্বাহ্ণ

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবকের ফেসবুক আইডি থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট’ নিয়ে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদরে রণক্ষেত্রের ঘটনায় ‘তৌহিদি জনতা’র ছয় দফা দাবি মেনে নিয়েছে প্রশাসন। দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে ‘সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে ডাকা গতকাল বেলা ১১টায় ভোলা সরকারি স্কুল মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশও বাতিল করা হয়। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসে ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক জেলা ‘ঈমান আকিদা সংরক্ষণ কমিটির’ সভাপতি মাওলানা বশির উদ্দিন বলেন, ‘ভোলার নেতা তোফায়েল আহমেদ এমপি ও ডিসি মহোদয়ের অনুরোধে আমাদের সমাবেশ স্থগিত করেছি। তবে আমরা ৬ দফা দাবি দিয়েছি, তা আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব।’ ছয় দফা দাবি হলো- ১. জেলা ও থানা থেকে এসপি এবং ওসিদের প্রত্যাহার করতে হবে। ২. ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করার অনুমতি দিতে হবে। ৩. আহত লোকজনের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ৪. নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দিতে হবে। ৫. অভিযুক্ত বিপ্লব চন্দ্র শুভর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ফাঁসি দিতে হবে এবং ৬. গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে।

এদিকে বোরহানউদ্দিনে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ হাজার লোককে আসামি করে মামলা হয়েছে। বোরহানউদ্দিন উপজেলার পাশাপাশি পুরো জেলাতেই থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের সভা সমাবেশ বা মিছিল করা যাবে না। এদিকে

হ্যাক হওয়া একটি ফেসবুক একাউন্টের মেসেঞ্জারে দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে হতাহতের ঘটনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। ভোলার ঘটনা নজরে আসার পর গতকাল সোমবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে। ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পুলিশ আত্মরক্ষার্থেই ভোলায় গুলি ছুড়েছে। তবে গুলি করার অনুমতি কে দিয়েছে তা তদন্ত হবে। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ ঘটনার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশও করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ভোলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক চ্যাটিংয়ে নবীকে নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তার জের ধরে পুলিশ-জনতার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। এই ঘটনায় যারা মারা গেছেন এবং আহত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সরকার তাদের আর্থিক সহযোগিতা দেবে। তিনি বলেন, এই ঘটনায় আমি যতদূর জানি, পুলিশ আত্মরক্ষার্থেই গুলি ছুড়েছে। তবে গুলির অনুমতি কে দিয়েছে, এটা তদন্ত করে বের করা হবে। তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে, সে যেই হোক, তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। অহেতুক সাধারণ মানুষদের ওপর পুলিশ গুলি করে থাকলে অবশ্যই তার বিচার হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভোলার সংঘর্ষের ঘটনার সূত্রপাত যে ছেলের ফেসবুক চ্যাটিং থেকে হয়েছে, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কথোপকথনের তথ্য-উপাত্ত অধিকতর তদন্তের জন্য আমরা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সিঙ্গাপুর অফিসে পাঠিয়েছি। তাদের কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছি। এই ঘটনায় ফেসবুকে কার আইডি কে হ্যাক করেছে, কোথা থেকে এসব পোস্ট করা হয়েছে, তা খতিয়ে বের করা হবে। সেই অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। অপর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এই ঘটনায় কেউ কেউ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।

উল্লেখ্য ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদরে গত রবিবার সকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিতে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন- বোরহানউদ্দিন উপজেলার মহিউদ্দিন পাটওয়ারীর মাদ্রাসাছাত্র মাহবুব (১৪), উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দেলোয়ার হোসেনের কলেজ পড়ুয়া ছেলে শাহিন (২৩), বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহফুজ (৪৫) এবং মনপুরা হাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা মিজান (৪০)। গত রবিবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাবের টহল জোরদার করার পর বিকালেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট