চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বাবা-চাচাসহ তিনজন রিমান্ডে

তুহিনকে বাবার কোলেই হত্যা করা হয়!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস

১৬ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:৩৪ পূর্বাহ্ণ

দিরাইয়ে বীভৎসভাবে শিশু তুহিন হত্যার ঘটনায় তার বাবা আব্দুল বাছির, চাচা আব্দুল মছব্বির ও প্রতিবেশী চাচা জমশেদ আলীর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শ্যাম কান্ত সিনহা এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে গতকাল সন্ধ্যায় নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের জানান, শিশু তুহিনকে ঘুমন্ত অবস্থায় তার বাবা আবদুল বাছির রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যান। এরপর তার বাবা, তার আরেক চাচা ও এক চাচাতো ভাই মিলে তাকে হত্যা করেন। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘পৃথিবীতে শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান বাবার কোল। কিন্তু তুহিনকে বাবার কোলেই হত্যা করা হয়েছে। পরে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কেটে ফেলা হয়। এরপর পেটে দুটি ছুরি ঢুকিয়ে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়।’ আবদুল বাছিরের সঙ্গে তার ভাই নাসির মিয়া ও ভাতিজা শাহরিয়ার ছিলেন বলে জানান তিনি। গতকাল বিকেলে পুলিশ তুহিনের বাবা আবদুল বাছির (৪০), চাচা আবদুল মছব্বির (৪৫) ও প্রতিবেশী জমসের আলীকে (৫০) তিন দিনের রিমান্ডে নেয়। একই সময় আদালতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তুহিনের আরেক চাচা নাসির উদ্দিন (৩৪) ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার (১৭)। এই পাঁচজন গত সোমবার দুপুরে থেকে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

পুলিশ তুহিনের মা মনিরা বেগমের করা মামলায় আবদুল বাছির, আবদুল মছব্বির ও জামসের আলীকে বিকেলে সুনামগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের হাজির করে প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড নেওয়ার আবেদন করা হয় । আদালতের বিচারক শ্যাম কান্ত সিনহা প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই সময় সুনামগঞ্জের বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. খালেদ মিয়ার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তুহিনের চাচা নাসির মিয়া ও শাহরিয়ার। এরআগে তুহিনের মা মনিরা বেগম অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে দিরাই থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।

নির্মম হত্যাকা-ের শিকার শিশু তুহিন মিয়ার বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউরা গ্রামে। গত রবিবার রাতে ওই হত্যাকা- হয়। পরেরদিন সোমবার সকালে পুলিশ শিশু তুহিনের লাশ উদ্ধার করে। কদমগাছের ডালে ঝুলছিল তুহিনের রক্তাক্ত নিথর দেহ। গলায় রশি বাঁধা ছিল। পেটে ঢোকানো দুটি লম্বা ছুরি। বর্বরতার এখানেই শেষ নয়, তার দুটি কানও কেটে ফেলা হয়েছে।

এদিকে সোমবার দুপুরে তুহিনের বাবা আবদুল বাছির সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে তুহিন দ্বিতীয়। ১৫ দিন আগে তাঁদের এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। রবিবার রাতে খেয়ে দেয়ে সন্তানদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তাঁরা। রাত আড়াইটার দিকে তাঁর এক ভাতিজি ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলে তাঁদের ঘরের দরজা খোলা। এরপর সবাই জেগে ওঠে দেখেন তুহিন নেই। তখন প্রতিবেশীদেরও ডেকে তোলা হয়। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। এক পর্যায়ে বাড়ির পাশে রাস্তায় একটি কদমগাছের ডালে তুহিনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান তাঁরা।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। এর সামনে পেছনে যারাই আছে, সবাই ধরা পড়বে। কেউ ছাড় পাবে না। খুব দ্রুত এই মামলায় পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দেবে।’
উল্লেখ্য, নির্মম ওই হত্যাকা-ের ঘটনায় পুলিশ শুরু থেকেই তার পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ করে এসেছিল। যে কারণে প্রথমদিনেই আটক করা হয়েছিল শিশু তুহিনের বাবা, চাচা, চাচিসহ বেশ কয়েকজনকে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট