চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিধান করার সুপারিশ

অনলাইন ডেস্ক

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৮:১৬ অপরাহ্ণ

ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্বাচনী আইনে নতুন বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।

 

বিদ্যমান আইনে প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারেন। তবে পোলিং এজেন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আইনে সুস্পষ্ট কিছু বলা নেই।

 

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গত শনিবার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব প্রকাশ করে।

 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনা। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। ইতিমধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন নিজ নিজ প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। এসব কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব গত শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

 

উল্লিখিত ছয় সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আগামীকাল শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে অন্তর্বর্তী সরকার। এই আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটি পথনকশা আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

পোলিং এজেন্টের নিরাপত্তা নিয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশটি বাস্তবায়ন করতে হলে বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে তা করতে পারবে। এ ছাড়া আরপিওতে আরও কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।

 

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন মনে করে, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে এমনিতেই বিদ্যমান আরপিওতে সংশোধনী আনতে হবে।

 

নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্বাচনের সময় প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে থাকেন তাঁর মনোনীত পোলিং এজেন্ট। ভোটার শনাক্ত করা, কোনো অনিয়ম বা জাল ভোট হচ্ছে কি না, তা তিনি প্রার্থীর পক্ষে দেখভাল করতে পারেন। কিন্তু বিভিন্ন সময়, বিশেষ করে গত দেড় দশকে অনুষ্ঠিত জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে দেখা গেছে, ভোটকেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের বাইরে অন্য প্রার্থীদের এজেন্টদের দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি। নির্বাচনের আগেই অন্য প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানো, ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া, ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার মতো ঘটনা এই সময়ে ছিল সাধারণ বিষয়। তবে এসব ঘটনায় নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

 

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের অনেকেই ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিতে পারেননি। হুমকি, মামলা ও পুলিশের ধরপাকড়ের ভয়ে তখন অনেকে পোলিং এজেন্ট হতে রাজি হননি।

 

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভোট দিতে গিয়ে তাঁরা প্রধান বিরোধী জোটগুলোর কোনো পোলিং এজেন্ট দেখতে পাননি।

 

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল মূলত আওয়ামী লীগ, দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তখনকার ক্ষমতাসীন দলটির মিত্রদের মধ্যকার নির্বাচন। এই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বাইরে অনেকে ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারেননি। ৭ জানুয়ারি কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে তখনকার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভোটকেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীদের এজেন্ট ছাড়া তিনি অন্য কারও এজেন্ট দেখতে পাননি।

তবে অতীতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়া, ভয়ভীতি দেখানো নিয়ে অভিযোগ করলেও ইসি কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

 

জাতীয় নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট দেওয়ার বিষয়ে বলা আছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট (প্রধান এজেন্ট) ভোট শুরুর আগে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য একজন করে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারবেন। তাঁরা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে লিখিতভাবে নোটিশ দেবেন। তবে পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই।

 

 

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট