চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আবরার ও আবিদ হত্যা অভিন্ন

মন্তব্য প্রতিবেদন

নওশের আলী খান

১২ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:০৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যাকা-ে সমগ্র জাতি বিস্মিত, মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। দেশের সবচেয়ে মর্যাদা সম্পন্ন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাঙ্গনে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা বিশ^ বিবেককেও নাড়া দিয়েছে। এখানে একটি মায়ের বুক খালি কিংবা একটি পরিবারের আজীবনের হাহাকারের বিষয় শুধু নয়, শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হয়েছে কলংকিত, ক্ষুণœ হয়েছে মর্যাদাও। বুয়েটের আবরার এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের আবিদ হত্যার মধ্যে হুবহু মিল রয়েছে। দু’জনই মেধাবী। দু’জনের নামের আদ্যাক্ষর এক। দু’জনকে দফায় দফায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দু’টি ঘটনাই অক্টোবর মাসে। এমনকি সময়ও প্রায় এক। শুধু বছরটা ভিন্ন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম ব্যাচের বিডিএস তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবিদুর রহমান আবিদকে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর মেডিকেল হোস্টেলে তিন দফা পিটানো হয়। প্রথমে দুপুর ২ টা, সন্ধ্যা ৭টা ও রাত ১০টা। ২১ অক্টোবর রাত ৮টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবিদ মারা যায়। আবিদ চকরিয়ার উত্তর বড়ইতলী গ্রামের মৃত নুরুল কবির চৌধুরীর পুত্র। এই ঘটনায় আবিদের মামা নেয়ামত উল্লাহ বাদি হয়ে ছাত্রলীগের ২২ জনের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ৮ বছর মামলা চলার পর চলতি ২০১৯ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রায় ঘোষণা করে ১২ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস প্রদান করে। মামলার সাক্ষীগণ আসামি শনাক্ত করতে না পারায় এবং জেরায় আসামিদের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেয়া হয়েছে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেছেন। প্রকাশ্যে পিটিয়ে একটি ছেলেকে হত্যার পরও কোন আসামির সাজা হল না। আবিদের হতভাগ্য মায়ের সান্ত¡না পাওয়ারও কিছু রইল না। সন্তান হারানোর বেদনা বয়ে বেড়াতে হবে আমৃত্যু। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন গত ১০ বছরে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে ৮ জন, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ৪ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ১ জন, সিলেট শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয়ে ১ জন এবং সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ১ জনসহ মোট ১৫ জন শিক্ষার্থী খুন হয়েছে। কিন্তু একটি হত্যাকা-েরও বিচার হয়নি।

গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েট শেরে বাংলা হলে আবরারকে ছাত্রলীগ কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনায় আবরারের পিতা ৭ অক্টোবর ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। পুলিশ এরইমধ্যে ১৭ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আবিদসহ ১৫ জন বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মত আবরার হত্যারও একই পরিণতি ঘটবে কিনা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট