চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

মেঘনায় ভরা মৌসুমে ইলিশের হাহাকার, দেনার দায়ে ডুবছেন জেলেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮ মে, ২০১৯ | ৭:১৬ অপরাহ্ণ

জুলাই ও আগস্ট ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু এখনও মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের খোঁজ না পেয়ে বিপদে পড়েছেন জেলেরা। ঋণ করে ইলিশ শিকার ও ব্যবসায় যারা নেমেছেন, তাদের এখন মাথায় হাত। বাকিতে রসদ কিনে সময়মতো ঋণ শোধ করতে না পেরে দেনায় ডুবছেন জেলেরা।

 

জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার ১০০ কিলোমিটার নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করেন সরকার। এজন্য ওই এলাকায় সব ধরনের জাল ফেলা নিষিদ্ধ করা হয়। জাটকা নিধন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ১ মার্চ থেকে দুই মাস মেঘনায় সব ধরনের জাল ফেলা বন্ধ করে দেয়। মাছ ধরাই একমাত্র পেশা হওয়ায় নিষেধাজ্ঞার দিনগুলোতে অলস সময় পার করতে হয়েছে তাঁদের। নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় ৩০ এপ্রিল রাত ১২টার পর। কিন্তু গত সাত দিনেও কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে হতাশ লক্ষ্মীপুর জেলার জেলেরা।

দৌলতখান উপজেলার বটতলা এলাকার বেশ কয়েকজন জেলে জানান, এ অঞ্চলের ছোট পুঁজির জেলেদের এরই মধ্যে ৪০-৫০ হাজার টাকা দেনা হয়ে গেছে। ইলিশ পাওয়ার আশায় প্রতিদিন ধারদেনা করে নদীতে যাচ্ছেন তারা। এতে দেনার পরিমাণ বাড়ছেই। আবার অনেকে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে নৌকা বা জাল কিনেছেন। সমিতিকে প্রতি ১০ হাজার টাকায় মাসে ২ হাজার টাকা সুদ দিতে হয়। রায়পুর উপজেলার চর বংশী গ্রামের জেলে শাহাজালালসহ  ১৪ জন জেলে সারারাত  মেঘনার হাইমচর এলাকায় দুবার জাল ফেলেন। সাত ঘণ্টা পর ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ছোট ছোট ইলিশ মেলে চারটি। অথচ জেলেদের মজুরি বাদে ইঞ্জিনচালিত নৌকার জ্বালানিসহ খরচ হয় পাঁচ হাজার টাকা । কিন্তু চারটি ইলিশ বিক্রি হয় মাত্র এক হাজার টাকায়। জেলে রহম আলী দুঃখ করে বলেন, আমাদের দিকে তাকানোর কেউ নেই। কীভাবে আমাদের দিন কাটে পরিবার নিয়ে, সরকারের সেদিকে কোনো নজর নেই। হারুন মাঝি বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে নদীতে পড়ে আছেন, ইলিশের দেখা নেই। এমনকি অন্য মাছও অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে। চর রমনী গ্রামের জেলে মাহাবুব বলেন, নদীতে ইলিশ মিলছে না। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত জাল ফেলেও ২-১ হাজার টাকার বেশি ইলিশ উঠছে না। এতে তাঁদের লাভের চেয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে বেশি।


লক্ষ্মীপুর জেলায় ৫০ হাজার ২৫২ জন জেলে রয়েছেন। তাঁদের একমাত্র পেশাই মাছ ধরা। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমনী গ্রামের মাছের আড়তদার আমান ইসলাম বলেন, বিগত বছর মাছের ঘাটগুলো থেকে এ সময়ে প্রতিদিন ২০-৩০ টন ইলিশ দেশের বাজারে সরবরাহ করা হতো। অথচ গত সাত দিনে ১ টন ইলিশও সরবরাহ করতে পারেননি। রাধাবল্লব ঘাটের এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, জেলেদের তেমন পুঁজি নেই। প্রত্যেক জেলেই এ সময় বিভিন্ন এনজিও ও সমিতি থেকে ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে জাল ও নৌকা তৈরি করে ইলিশ ধরতে নদীতে যান। কিন্তু এখন ইলিশ না পাওয়ায় তাঁদের দেনা শুধু বাড়ছেই। ভোলা সদর উপজেলার মেঘনার তীরবর্তী মাছঘাটগুলোতেও মাছ আসছে না।

মৎস বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইলিশের মৌসুম কিছুটা পিছিয়ে গেছে। আরো কয়েকদিন পর নদীতে ইলিশের পরিমাণ বাড়তে পারে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্যাহ বলেন, অর্ধলক্ষাধিক জেলে দুই মাস বেকার ছিলেন। তাঁরা নদীতে নেমে মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। তবে নদীতে পানি বাড়লে ও ভারী বৃষ্টি হলে ইলিশ বেশি ধরা পড়বে বলে তিনি আশাবাদী।

ইলিশ গভীর পানির মাছ। পুরো নদীতে চর জেগে পানির গভীরতা কমে গেছে। এতে আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি থেকে শুরু করে চাঁদপুরের ষাটনল, মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত নদীতে ড্রেজিং জরুরি হয়ে পড়েছে। পানি আরো বাড়লে ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশা অনেকের।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট