চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

‘সমালোচনায়’ আটকে গেলো কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ

১০ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

প্রকল্পের আওতায় সড়ক সংস্কার ও গাছ লাগানো শিখতে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান ভ্রমণের আবদার করা হয়েছিল। এ আবদার মেটাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল দেড় কোটি টাকা। এসব টাকা খরচ করে সরকারি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের জনবহুল শহর হনুলুলু ও জাপানের পর্যটন নগরী টাকামাৎসু ভ্রমণ করতেন।

এজন্য এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রকল্প বিষয়ক শিক্ষা ভ্রমণ বাবদ এ অর্থ চাওয়া হয়েছিল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। তবে, কত জন বিদেশ ভ্রমণ করবেন, কেন করবেন ইত্যাদি বিষয় পরিকল্পনা কমিশনের কাছে অস্পষ্ট ছিল।-বাংলানিউজ

এমন অবাস্তব আবদার করা হয় ‘কক্সবাজার জেলার হলিডেমোড়-বাজারঘাটা-লারপাড়া (বাসস্ট্যান্ড) প্রধান সড়ক সংস্কারসহ প্রশস্তকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায়। প্রকল্পের আওতায় ভ্রমণ বাবদ শুধু দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ রাখতে বলা হয়েছিল। এ অবাস্তব ব্যয় রেখে প্রকল্পও পাস হয়েছিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক)। তবে নানা ধরণের সমালোচনার কারণে ভ্রমণ থেকে সরে এসেছেন সংশ্লিষ্টরা।-বাংলানিউজ

ফলে আর বাস্তবে ভ্রমণ নয়, ইউটিউবে হনুলুলু ও টাকামাৎসু দেখে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এখন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান ভ্রমণের খরচ বাবদ রাখা টাকা অন্য খাতে ব্যয় করা হবে। শেষ পর্যন্ত ইউটিউবে হনুলুলু ও টাকামাৎসু দেখে এসব শহরের আদলে নির্মাণ করা হবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি। প্রকল্পের আওতায় ফুটপাত, সাইকেল ওয়ে, সবুজায়ন, ফুটওভার ব্রিজ, সড়ক বাতি স্থাপন, ড্রেন নির্মাণ, ব্রিজ, কালভার্ট, সিসি ক্যামেরা এবং ওয়াফাই সংযোগ দেওয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে যানজট নিরসনের পাশাপাশি পর্যটন নগরীর সৌন্দর্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।

প্রকল্পের আওতায় ভ্রমণ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম সার্কেল অফিস) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় টাকা খরচ করে আলাদা করে যুক্তরাষ্ট্রের হনুলুলু ও জাপানের টাকামাৎসু ভ্রমণের দরকার নেই। এসব স্থানের ছবি ও ভিডিও যথেষ্ট পরিমাণে ইউটিউবে আছে। সুতরাং নতুন করে যাওয়ার দরকার নাই। ইউটিউব দেখেই সড়কের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হবে। এ খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যয় হবে।’

প্রকল্প প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম সার্কেল অফিস) আরও বলেন, ‘প্রকল্পের টেন্ডার আবহ্বান হয়েছে। আমাদের প্রস্তুতিও শক্তিশালী। প্রকল্পের অন্যতম কাজ পর্যটন শহরের প্রধান সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ। এছাড়াও তিন মিটার করে ফুটপাত দৃষ্টিনন্দন করা। সড়কে যাত্রী ছাউনি করবো। সড়কে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপন করা হবে। যেন কক্সবাজার ঢুকেই পর্যটকেরা বুঝতে পারেন এটা একটা ট্যুরিস্ট স্পট। ডলফিন মোড় দৃষ্টিনন্দন করা হবে।’
প্রকল্পের আওতায় ব্যয় শেষ পর্যন্ত ২৫৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে সওজ-এর প্রস্তাবিত ব্যয় কাটছাঁট করে পরিকল্পনা কমিশন।

সূত্র জানায়, প্রথমে সওজ-প্রকল্পের সম্মানী ব্যয় ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছিল, পরে পরিকল্পনা কমিশনে কমিয়ে ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করে। একইভাবে ল্যাবরেটরি পরীক্ষা বাবদ ১০ লাখ টাকার পরিবর্তে ৫, সার্ভে, নকশা বাবদ ৫০ লাখের পরিবর্তে ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জ্বালানি বাবদ ৩০ লাখ টাকার আবদার করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এ আবদার বাতিল করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ২৯টি খাতে ২৫৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম আপ্যায়ন খাতে ৫ লাখ, একটি গাড়ি ভাড়া বাবদ ৪৫ লাখ, দু’টি মটরসাইকেল কেনা বাবদ ৪ লাখ ও আরবরিকালচার কাজে ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এছাড়াও ওয়াইফাই সংযোগ বাবদ ৮ কোটি ৫৪ লাখ, সিসি ক্যামেরা বাবদ ২ কোটি ৪৫ লাখ, ইউটিলিটি স্থানান্তরে ২১ কোটি ৫৩ লাখ, সার্ভিস ড্রেন নির্মাণে ২৪ কোটি ৫৩ লাখ ও আরসিসি ড্রেন কাম ফুটপাত নির্মাণে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সড়ক প্রশস্তকরণ, মাটি কাটা, মিডিয়ান নির্মাণ, সিগন্যাল পোস্ট ও রোড মার্কিংয়ে ৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ১০০ ফুট প্রশস্ত সড়কে একটি ফুট ওভারব্রিজ বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪ কোটি টাকা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট