চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

জিকে শামীমের প্রকল্পে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

৯ অক্টোবর, ২০১৯ | ১০:১৯ অপরাহ্ণ

 

র‌্যাবের শুদ্ধি অভিযানে আটক হওয়া আলোচিত ঠিকাদার জিকে শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্স (জিকেবি) গণপূর্ত অধিদপ্তরের যে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখেছে সেগুলোর কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। এতে করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। দরপত্রের শর্ত ভেঙে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার কারণে গণপূর্ত অধিদপ্তর নোটিশ পাঠাবে জিকেবিকে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নোটিশের জবার পাওয়ার পর নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, কোনো ঠিকাদারের অপারগতার কারণে আটকে থাকবে না সরকারি কোনো উন্নয়ন কাজ। আমরা আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে নোটিশ পাঠাবো। তিনি যদি কাজ এগিয়ে নিতে না পারেন, কি পরিমাণ কাজ তিনি করেছেন সেটাকে আমরা পরিমাপ করে দেখবো। প্রয়োজন হলে চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করব। এসব কাজ  কোনোভাবেই বন্ধ থাকবে না।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা জানান, চুক্তি বাতিল করে নতুন করে কাজ শুরু করতে গেলে সময় লাগবে একটু বেশি। গত ১০ বছরে গণপূর্ত অধিদপ্তরে জিকে শামীমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ৩৭টি প্রকল্পের দরপত্রে কাজ পেয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ২৫টি প্রকল্পের কাজ ৯৮-৯৯ শতাংশ শেষ দেখানো হলেও পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় বেশিরভাগ প্রকল্পই হস্তান্তর হয়নি। চলমান কাজ রয়েছে ১২টি প্রকল্পের ১ হাজার ৭০২ কোটি টাকার। তবে জিকে শামীম গ্রেপ্তার এবং তার ব্যাংক একাউন্ট জব্দ হওয়ার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে সচিবালয়ের ক্যাবিনেট ভবন, র‌্যাব হেডকোয়ার্টার ও বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স ভবনসহ ১২টি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ।

প্রকৌশলীরা জানান, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা নির্মাণকাজের ভৌত অগ্রগতি ৯০ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের চারটি অংশের গড় ভৌত অগ্রগতি ৭১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৫১ দশমিক ১৭ শতাংশ, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় নির্মাণকাজের ভৌত ৯৫ শতাংশ ও আর্থিক ৯২ শতাংশ, গাজীপুরে পাঁচটি র‌্যাব কমপ্লেক্স এবং একটি র‌্যাব ট্রেনিং স্কুল নির্মাণ প্রকল্পের ভৌত ৯৯ শতাংশ, আর্থিক ৯৪ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে, সচিবালয়ের নির্মাণাধীন নতুন ২০ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলা থেকে ২০ তলা পর্যন্ত পূর্ত এবং অভ্যন্তরীণ স্যানিটারি ও বৈদ্যুতিক কাজের ভৌত ৮০ শতাংশ এবং ৫২ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সম্প্রসারণ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৩২ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৩১ শতাংশ, আজিমপুরে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য শতাংশ। সচিবালয়ে নতুন ২০ তলা ক্যাবিনেট ভবনের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৩ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি শূন্য দশমিক ০৪ শতাংশ, নারায়ণগঞ্জের আলীগঞ্জে প্রায় ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৭২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০০ বেড হাসপাতালকে ৫০০ বেডে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, সব কিছু করতে হবে চুক্তি অনুযায়ী নিয়ম মেনে। জিকেবির দায়িত্ব এই কাজ শেষ করা। তারা কাজ শেষ করতে না পারলে চুক্তি অনুযায়ী আমাদের যা করার তা করব। তাকে নিয়ম অনুযায়ী শোকজ করব, আরও কিছু প্রসেস আছে সেগুলোও করা হবে। তারপর সে কাজ না করতে পারলে চুক্তি ক্যান্সেল হবে। অনেক সময় লাগবে এগুলো করতে।

অন্যদিকে ঢাকার দুটি জোনের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল দে ২৪ সেপ্টেম্বর ওএসডি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই জোনে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয় দুজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীক। তা সত্ত্বেও গত ১৪ দিনেও তিনি কাউকেই দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। এমনকি জিকে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি অধিদপ্তরে এসে করছেন না হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও।

অভিযোগ রয়েছে অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সংস্থাপন) নন্দিতা রানী সাহা সাক্ষরিত ত্রুটিপূর্ণ অফিস আদেশের কারণে গত ১৪ দিন ধরে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন জোন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শূন্য থাকায় আটকে রয়েছে বিভিন্ন ফাইল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অধিদপ্তরের অফিস আদেশে সবসময় দায়িত্ব হস্তান্তর করার নির্দেশনার সঙ্গে ‘অন্যথায় নির্ধারিত তারিখ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত হয়েছে গণ্য হবেন’ এই কথাটি লেখা থাকে। কিন্তু উৎপল দে’র দায়িত্ব হস্তান্তরের আদেশের চিঠিতে এই কথাটি না লেখা থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে তিনি দায়িত্ব থেকে অবমুক্ত হননি। অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করে বলেন, অভিযুক্ত প্রকৌশলীর স্বার্থেই এমন ত্রুটিপূর্ণ চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে ১৪ দিন ধরে দায়িত্ব হস্তান্তর না করলেও ওএসডি হওয়া এই প্রকৌশলী রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় রমনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর ক্যাম্প অফিসে বসে গোপনে ব্যাকডেটে বিভিন্ন ফাইলে স্বাক্ষর করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া জানা গেছে বিভিন্ন মহল থেকে তদবিরের মাধ্যমে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ফিরে আসছেন।

সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় থেকে তার ওএসডি আদেশ প্রত্যাহার করে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন আদেশ জারি করার প্রক্রিয়া চলছে। জিকে শামীমের টেন্ডার সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে পরিচিত প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে’র বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকার পরও ওএসডি হওয়ার মাত্র কয়েকদিনের মাথায় বহাল তবিয়তে ফিরে আসার খবরে সাধারণ প্রকৌশলীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কারাগারের দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।

 

পূর্বকোণ/রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট