চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

খালাসের আগেই ট্রলারে পচে যাচ্ছে আমদানিকৃত পেঁয়াজ

টেকনাফ বন্দর

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ

৯ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:২০ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ টেকনাফ স্থল বন্দরে খালাসের আগেই ট্রলারে পচে যাচ্ছে। এজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন আমদানিকারকরা। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে টেকনাফ স্থল বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, পচা পেঁয়াজের গন্ধে বন্দরের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এছাড়া খালাসের অপেক্ষায় বন্দরে ৮টি পেঁয়াজবাহী ট্রলার নোঙ্গর করা রয়েছে। সরকার পেঁয়াজ আমদানিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও টেকনাফ স্থল বন্দরে পচনশীল এই পণ্য পেঁয়াজ ট্রলার থেকে খালাসে যে ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার কোনটিই নেই। পর্যাপ্ত জেটি ও শ্রমিকের অভাবে মূলত ট্রলার থেকে পেঁয়াজ খালাস করতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে বন্দরে নোঙ্গর করার দুই-তিন দিন পেরিয়ে গেলেও ট্রলার থেকে পেঁয়াজ খালাস করা যাচ্ছে না। গত মাসের শেষের দিকে হঠাৎ করে

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় দেশীয় বাজারে সংকটের সৃষ্টি হয়। এর ফলে পেঁয়াজের দর দ্রুত বাড়তে থাকে। এসময়ে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করা শুরু করে ব্যবসায়ীরা। প্রথম দিকে পেঁয়াজের চালান দ্রুত দেশের আভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ করা হলেও এখন শ্রমিক সংকট ও দুইটি মাত্র জেটি দিয়ে আমদানি-রপ্তানির মালামাল লোড-আপলোডের কারণে দীর্ঘ সূত্রিতায় শত শত বস্তা পেঁয়াজ ট্রলারেই পঁচে যাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। ফলে ব্যবসায়ীদের কাছে পেঁয়াজ আমদানিতে অনাগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে।
আমদানিকারক এএফ এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. সেলিম জানান, খালাস করতে দেরী হওয়ার কারণে মঙ্গলবার তাঁর ট্রলারের আমদানিকৃত ৮০০ বস্তা পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সেসব পেঁয়াজ থেকে ভালো পেঁয়াজ বাছাই করে কোনরকমে লোকসান কমানোর চেষ্টা করছি। একইভাবে অন্যান্য প্রায় ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে।
এই দীর্ঘসূত্রিতার পেছনে স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের অসৎ উদ্দেশ্যও রয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী। সময়ক্ষেপণ করে ট্রাকে লোড করা পণ্য বিকাল ৫টার পর স্কেলে তোলা গেলে একেকটি ট্রাক থেকে নাইট চার্জ হিসাবে বন্দরের অতিরিক্ত আয় হয় সাড়ে ৫ হাজার টাকার মতো। আবার রাতের শ্রমিকদের দিতে হয় অতিরিক্ত চার্জ। এটাও দীর্ঘসূত্রিতার অন্যতম কারন।
টেকনাফ স্থল বন্দরের ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন জেটি ও শ্রমিক সংকটের কথা অস্বীকার করে জানান, বন্দরে কোন ধরনের শ্রমিক সংকট নেই। দু’টি জেটি দিয়ে দ্রুত সময়ে পেঁয়াজ খালাস করা হচ্ছে। মূলত মিয়ানমার থেকেই পচা পেঁয়াজ আসছে। তিন-চারদিন পর্যন্ত ট্রলার নোঙ্গর করে থাকলে কেন খালাস হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি জানান, আমদানি ঘোষণা পত্র (আইজিএম) ও অন্যান্য ডকুমেন্ট দ্রুত জমা দিতে না পারায় দেরী হচ্ছে। এমনকি পেঁয়াজ খালাসের জন্য রাতে অতিরিক্ত শ্রমিক এনেও ব্যবসায়ীরা আনলোড করতে রাজি না হওয়ায় শ্রমিকদের ফেরত যেতে হয়েছে।
টেকনাফ স্থল বন্দর সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ এহেতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ‘জাহাজ বন্দরে নোঙ্গর করার সাথে সাথেই আইজিএম জমা দেওয়া হয়। কাঁচা পণ্য হিসাবে যত দ্রুত পেঁয়াজ খালাস করার কথা, বন্দর কর্তৃপক্ষ শত চেষ্টা চালিয়ে গেলেও তাদের সেই সামর্থ্য না থাকায় আসলে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। ফলে পেঁয়াজের মতো বাজার অস্থিতিশীল করা পণ্য পচে যাচ্ছে ট্রলারেই। এতে ব্যবসায়ীরা লোকসানের শিকার হচ্ছেন’।
উল্লেখ্য, টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে গত ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৭ হাজার ৫৭৯.৩৩৯ মেট্রিক টন পিঁয়াজ মিয়ানমার থেকে আমদানি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ৫০০ মেট্রিক টনের মতো পেঁয়াজ খালাস হয়েছে। তবে এদিন মিয়ানমার থেকে কোন পেঁয়াজের ট্রলার আসেনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট