চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় মাছধরা নৌযান

২০ মে থেকে মৎস্য আহরণ বন্ধ সাগরে

কর্ণফুলী সংবাদদাতা

৭ মে, ২০১৯ | ১১:১৭ অপরাহ্ণ

সামুদ্রিক মাছের প্রজনন মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আগামী ২০ মে থেকে শুরু হচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে বাণিজ্যিক মৎস্য জাহাজের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে আসছে সরকার। তবে এবার বাণিজ্যিক মৎস্য জাহাজের পাশাপাশি সাগরে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত সব ধরণের যান্ত্রিক, অযান্ত্রিক নৌযানের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর। নিষেধাজ্ঞার এ সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে মৎস্য আহরণখাতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে জানিয়েছে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর। এ বিষয়ে সর্ব সাধারণের অবগতির জন্য কর্ণফুলী নদী ও বন্দর সংলগ্ন বিভিন্ন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, বাজার সমূহ ও জনবহুল স্থানে মাইকিং করা হচ্ছে। সব ধরনের মৎস্যযান নিষেধাজ্ঞার আওতায় এলে বঙ্গোপসাগরে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মৎস্য আহরণে সংশ্লিষ্টরা ।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৭ মে ‘মেরিন ফিশারিজ অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩’ এর ৫৫ ধারা সংশোধন করে বিধি-১৯ সংযোজন করে সরকার। ওই বিধি অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও সর্বোচ্চ সংরক্ষণের স্বার্থে প্রত্যেক বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন যেকোনো প্রজাতির মাছ ও ক্রাস্টাশিয়ান (চিংড়ি, লবস্টার, কাটলফিশ ইত্যাদি) আহরণ নিষিদ্ধ করে ২০১৫ সালের ২০ মে একটি গেজেট প্রকাশ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। গত বছর পর্যন্ত শুধু বাণিজ্যিক জাহাজ আওতায় থাকলেও যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকায় সমুদ্রে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন বিঘ্নিত হচ্ছিল। ফলে এ বছর ৬৭, ৬৬৯ যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক মৎস্য নৌযানকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে ২৫৫টি বাণিজ্যিক জাহাজের সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে ইস্পাতের কাঠামোতে তৈরি ১৫৮ টি জাহাজ ও কাঠের কাঠামোতে তৈরি ৯৭ টি জাহাজ হয়েছে। তারমধ্যে ফিশিং এ নিয়োজিত ২৩৬ টি জাহাজ। এসব জাহাজ বঙ্গোপসাগরে ’বাংলাদেশের ব্লু ইকনোমিক জোন’ হিসেবে বিবেচিত কহিনুর পয়েন্ট, এলিফ্যান্ট পয়েন্ট, ওয়েষ্ট অব সেন্ট মার্টিনস, মিডল গ্রাউন্ড ও সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে ৪০ মিটারের বেশি গভীর এলাকা থেকে মৎস্য আহরণ করে থাকে। এ ছাড়াও ৬৭, ৬৬৯ যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক মৎস্য নৌযান বঙ্গোপসাগর থেকে মৎস্য আহরণ করে থাকে। তারমধ্যে ৩২,৮৫৯ টি যান্ত্রিক মৎস্য নৌযান এবং ৩৪,৮১০টি অযান্ত্রিক মৎস্য নৌযান। এসব মৎস্য নৌযান সাগরের ৪০ মিটারের কম গভীরতা অংশে মৎস্য আহরণ করে। বঙ্গোপসাগর হতে সর্বশেষ ২০১৭-১৮ মৌসুমে বাণিজ্যিক জাহাজ ১ লাখ ২০ হাজার ৮৭ টন ও অন্যান্য মৎস্যযান ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ টন মাছ আহরণ করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, সাগরে মাছ ধরতে প্রতিবার সমুদ্রযাত্রায় আমাদের দপ্তর থেকে অনুমতিপত্র নেয়া বাণিজ্যিক জাহাজসমূহের জন্য বাধ্যতামূলক। প্রতিবার সমুদ্রযাত্রায় ইস্পাতের কাঠামোতে তৈরি জাহাজগুলো সর্বোচ্চ ৩০ দিন এবং কাঠের কাঠামোতে তৈরি জাহাজগুলো সর্বোচ্চ ১৪ দিন সমুদ্রে মাছ ধরার অনুমতি দেয়া হয়। তবে অন্যদিকে যান্ত্রিক মৎস্যনৌযান সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর থেকে মৎস্য আহরণের লাইসেন্স নিলেও সমুদ্রযাত্রার জন্য অনুমতি নিতে হয় না। আবার অযান্ত্রিক নৌযানকে লাইসেন্সও নিতে হয় না। এ কারণে নিষেধাজ্ঞার সময় যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান প্রজনন মৌসুমে মৎস্য আহরণ করে আসছে। এ কারণে অনেক সময় সামুদ্রিক রেণু-পোনাসহ অপরিপক্ব মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ে। এতে জেলেরা সাময়িক লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ প্রবৃদ্ধি কমে আসছে। তাই এবার সারা দেশের সব ধরণের মৎস্য নৌযানকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার এ সিদ্ধান্ত মৎস্য আহরণখাতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফিশ গার্ডেন লিমিেিটড চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশনের সদস্য মোহাম্মদ আলী পূর্বকোণকে বলেন, আমাদের এসোসিয়েশন প্রথম থেকেই প্রস্তাব করে আসছিল নিষেধাজ্ঞার আওতায় যেন সব মৎস্যযানকে নিয়ে আসা হয়। কারণ সামুদ্রিক মাছ সাগরের ৪০ মিটারের কম গভীর যেসব অঞ্চলে ডিম ছাড়ে সেখানে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক মৎস্য নৌযান সমূহ অবাধ বিচরণ করে মাছ আহরণ করে। ফলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছিল না। এবার থেকে সব ধরনের মৎস্যযান নিষেধাজ্ঞার আওতায় এলে বঙ্গোপসাগরে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ।

সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় করে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগর হতে ২০১৫-১৬ মৌসুমে বাণিজ্যিক জাহাজ ১ লাখ ৫ হাজার ৩৪৮ টন ও অন্যান্য মৎস্যযান ৫ লাখ ২১ হাজার ১৮০ টন, ২০১৬-১৭ মৌসুমে বাণিজ্যিক জাহাজ ১ লাখ ৮ হাজার ৪৭৯ টন ও অন্যান্য মৎস্যযান ৫ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৭ টন এবং সর্বশেষ ২০১৭-১৮ মৌসুমে বাণিজ্যিক জাহাজ ১ লাখ ২০ হাজার ৮৭ টন ও অন্যান্য মৎস্যযান ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ টন মাছ আহরণ করে। অর্থাৎ বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর মাছ আহরণ দিন দিন বাড়লেও যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযানগুলোর সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের প্রবৃদ্ধি মন্থর।

চট্টগ্রাম সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক ড. মো. আবুল হাছানাত পূর্বকোণকে বলেন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য আহরণের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত আইন মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষকে বৈঠক করে অনুরোধ জানিয়েছি। বিভিন্ন বৈঠকে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান মালিকরা নিষেধাজ্ঞার সময় তাদের শ্রমিক ও জেলেদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছে। আমরাও বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানিয়েছি। সব ধরনের মৎস্যযান নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ না ধরলে আগামীতে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাড়বে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট