চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

খালেদ-শামীমের তথ্যে ঘুম হারাম অনেকের

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২৪ পূর্বাহ্ণ

যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ও জি কে শামীম রিমান্ডে থাকাবস্থায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। ক্যাসিনো চালানো ও টেন্ডার ভাগিয়ে নেয়াসহ এ দু’জনের অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্তদের মধ্যে ১০৭জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে একটি সংস্থা। জড়িতরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সে জন্য সর্তক রয়েছেন সংশ্লিস্ট সংস্থার কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ও জি কে শামীম জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ক্যাসিনো ও টেন্ডার থেকে যারা নিয়মিন চাঁদা আদায় করতো এদের মধ্যে ১০৭ জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই তালিকায় বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন প্রজেক্টের পিডিদের নাম রয়েছে। এরই মধ্যে ওই তালিকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সকল ইমিগ্রেশনে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে ওই তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের সম্পক্তিসহ সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করছে বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।

রিমান্ডে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। ক্যাসিনো চালাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক ও বর্তমান অনেক কর্মকর্তা তাকে সহযোগিতা করতেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তার দেয়া তালিকা নিয়ে তদন্তে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।

খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এমন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডিএমপির সাবেক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মতিঝিল, রমনা, তেজগাঁও, মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা বিভাগের অনেক কর্মকর্তা বিভিন্ন ক্যাসিনো ও জুয়ার আসরের টাকার ভাগ নিতেন। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তাদের টাকার ভাগ দিয়েই এই ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন যুবলীগ নেতা খালেদ। ওই তালিকায় ওসি, এসি, এডিসি ও ডিসি ছাড়াও পুলিশের কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার নামও বলেছেন তিনি। এমনকি পুলিশের একজন কমিশনারের নামে খালেদের কাছ থেকে চাঁদার টাকা নেয়া হতো বলে খালেদ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। সূত্র জানায়, এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের নতুন কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ক্যাসিনো পরিচালনায় পুলিশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন কর্মকর্তাদের। একই সাথে তিনি ডিএমপির সব থানার ওসি ও ক্রাইম ডিভিশনের কর্মকর্তাদের জু’য়া ও ক্যাসিনো বন্ধের কঠোর নির্দেশনাও দেন।

ছয় মন্ত্রীকে ফোন দিয়েছিলেন শামীম : যুবলীগ নেতা ও প্রভাবশালী ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। গ্রেফতারের আগে ছয় মন্ত্রীকে ফোন দিয়েছিলেন টেন্ডার কিং জি কে শামীম। ঘনিষ্ঠ কজন শীর্ষ নেতার সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কারও কাছ থেকেই তেমন কোনো সাড়া পাননি শামীম। শেষমেশ তার হাতের শেষ অস্ত্রটি কাজে লাগান। র‌্যাব কর্মকর্তাকে ঘুষের প্রস্তাব দিয়ে বসেন। বলেন, ‘১০ কোটি টাকা দিবো, বিনিময়ে আমাকে গ্রেফতার করা যাবে না। অফিস-বাসা কোথাও তল্লাশিও চলবে না।’ টেন্ডার কিং এর এমন ঘুষের প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হন র‌্যাব কর্মকর্তা। শামীম বুঝতে পারে, এবার আর কোনো কিছুতেই শেষ রক্ষা হবে না। ধরা তাকে পড়তেই হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, রিমান্ডে থাকা শামীমের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্যে পুলিশ কর্মকর্তারাও বিব্রত হচ্ছেন। ক’জন মন্ত্রী ও নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় নাম ভাঙিয়ে প্রভাব খাটাতেন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে। মন্ত্রীদের বাসায় তার যাতায়াত ছিল নিয়মিত।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে শামীম গণপূর্ত অধিদফতরের ২০ জন সাবেক সরকারি কর্মকর্তার নাম বলেছেন, যাদের মাসে ২-৫ লাখ টাকা দিতেন তিনি। এর বদলে তারা শামীমকে ঠিকাদারির কাজের টেন্ডার পেতে সাহায্য করতেন। প্রাাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ যুবলীগ নেতা সরকারি বড় বড় প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকা ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে শামীম জানান, ঠিকাদারির কাজ পাইয়ে দিতে তিনি দুই কর্মকর্তাকে এখন পর্যন্ত শত কোটি টাকা দিয়েছেন। সরকারি বড় বড় প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিতে শামীম ও সাঙ্গপাঙ্গোরা সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিতেন। সূত্র মতে, জিজ্ঞাসাবাদে শামীম দাবি করেছেন যে দুই প্রকৌশলী ছাড়াও যুবলীগের অন্তত দু’জন শীর্ষ নেতাকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিতেন তিনি। শুধু তাই নয় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসন প্রকল্পের বালিশ দুর্নীতিতে জিকে শামীম জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট