চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

১৩ ক্লাবের জুয়া খেলা চলছে আপিল বিভাগের আদেশ নিয়েই

অনলাইন ডেস্ক

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:৪৫ অপরাহ্ণ

ঢাকা ক্লাবসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ১৩টি অভিজাত ক্লাবে টাকা বা অন্য কিছুর বিনিময়ে তাস, ডাইস ও হাউজি খেলার ওপর হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দিলেও আপিল বিভাগের আদেশ নিয়ে এসব ক্লাবে চালানো হচ্ছে জুয়া খেলা। যদিও আপিল বিভাগ জুয়া খেলা বন্ধে হাইকোর্টের জারি করা রুল ৮ সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে সকল পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই সময় একশ ৪১ সপ্তাহ পার হয়েছে। কিন্তু কোনো পক্ষই রুলের ওপর শুনানির উদ্যোগ নেয়নি। ফলে আপিল বিভাগের নিষেধাজ্ঞা নিয়েই ওই অভিজাত ১৩টি ক্লাবে চালানো হচ্ছে জুয়া খেলা। দীর্ঘদিনেও বিষয়টি শুনানির উদ্যোগ কেন নেয়া হয়নি সে বিষয়ে মূলত রিট আবেদনকারীপক্ষের গাফিলতি ও বিবাদীপক্ষের চাতুরতাকেই দায়ী করছেন আইনজীবীরা। দেশের সংবিধানে জুয়া খেলার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রতি নির্দেশ থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। আর একারণে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে চলছে জুয়া খেলা।

আপিল বিভাগ যে ১৩টি ক্লাবের ক্ষেত্রে আদেশ দেন সেগুলো হলো- ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, ধানমন্ডি ক্লাব, গুলশান ক্লাব, বনানী ক্লাব, অফিসার্স ক্লাব(ঢাকা), লেডিস ক্লাব(ঢাকা), ক্যাডেট কলেজ ক্লাব(গুলশান-১), নারায়ণঞ্জ ক্লাব, চিটাগাং ক্লাব, চিটাগাং সিনিয়র্স ক্লাব, সিলেট ক্লাব ও খুলনা ক্লাব। হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর এক আদেশে টাকা বা অন্য কিছুর বিনিময়ে ১৩টি ক্লাবে তাস, ডাইস ও হাউজি খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরির্দশক, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকসহ ১২ জনকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। অন্তবর্তকালীন এই নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি আদালত রুল জারি করেন। রুলে টাকা বা অন্য কোনো বিনিময়ে জুয়া জাতীয় অবৈধ ইনডোর গেইম যেমন তাস, ডাইস ও হাউজি খেলা অথবা এমন কোনো খেলার আয়োজকদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, র‌্যাব মহাপরিচালক, পুলিশ কমিশনার (ঢাকা, খুলনা ও সিলেট) এবং জেলা প্রশাসককে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট ও নারায়ণগঞ্জ) চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সামিউল হক ও এডভোকেট রোকন উদ্দিন মো. ফারুকের করা এক রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে এ আদেশ দেয়া হয়।

হাইকোর্টের এই নিষেধাজ্ঞার আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করে ঢাকা ক্লাব। আদালত বিষয়টির ওপর ৮ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। একইসঙ্গে ওইদিন পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। নির্ধারিত দিনে আপিল বিভাগে শুনানি হয়। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশের মেয়াদ না বাড়িয়ে ঢাকা ক্লাব কর্তৃপক্ষকে লিভ টু আপিল আবেদন দাখিল করতে বলেন। এরপর ঢাকা ক্লাব লিভ টু আপিল আবেদন দাখিল করে। এ আবেদনের ওপর ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। এবিষয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ৮ সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তির জন্য উভয়পক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়। তখনকার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এই আদেশ দিলেও আজ পর্যন্ত ওই রুলের ওপর শুনানি হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ বা রিট আবেদনকারী পক্ষ বা ক্লাবগুলোর পক্ষে কেউই ওই রুল নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়নি।

ঢাকা ক্লাবের আইনজীবী ব্যারিষ্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল জানান, আপিল বিভাগ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অনুমতি দেন। এখনো ওই রুল নিষ্পত্তি হয়নি। তাই আপিল বিভাগের আদেশ বহাল রয়েছে। ফলে ওইসব ক্লাবের খেলার অনুমতি বহাল রয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/ময়মী

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট