চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এবার নজর ইসির ১০ কর্মকর্তার দিকে

অনুসন্ধানের অনুমতি পেয়েছে দুদক হ তিন জেলার একাধিক জনপ্রতিনিধি চসিকের দশ কাউন্সিলরও রয়েছেন

ইমাম হোসাইন রাজু

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২৭ পূর্বাহ্ণ

রোহিঙ্গাদের অবৈধ উপায়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনায় দুদকের জালে ফেঁসে যাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ পর্যায়ের দশ কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে তাঁদের সম্পদ অর্জন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক ব্যবস্থা নিতে অনুমতি দিয়েছে দুদক কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের এই দশ কর্মকর্তা ছাড়াও তালিকায় রয়েছেন তিন জেলার একাধিক জনপ্রতিনিধি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রায় দশটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও। এছাড়া দুদকের অভিযানে উঠে আসা নির্বাচন কমিশনের কর্মচারীদের তালিকা ধরেও অনুসন্ধান করার কথা জানিয়েছে দুদক কমিশন।

এর আগে গত সপ্তাহে একাধিক অভিযানে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার তথ্য পায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে তিনদিনের অভিযানে নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য পায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। তবে দুদক কমিশনের অনুমতি না থাকায় এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। এরপর গত বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর এনফোর্সমেন্ট টিম রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূুক্তির বিষয়ে প্রতিবেদন দুদক প্রধান কার্যালয়ে পাঠায়। প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধিক অনুসন্ধানের অনুমতি চায় দুদকের গঠিত এনফোর্সমেন্ট টিম। এ বিষয়ে গতকাল রবিবার দুপুরে দুদক প্রধান কার্যালয়ের গঠিত কমিশনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান অনুসন্ধানের অনুমতি দেন।

সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার পেছনে ইউনিয়ন চেয়াম্যান, মেম্বার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের অনেকেই জড়িত রয়েছেন। যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থের বিনিময়ে এমন অবৈধ কাজ করেছেন। যাদের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার নির্বাচন অফিসের দশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক হলেও বাকিরা সবাই চলতি দায়িত্বে আছেন বলেও জানিয়েছে দুদক সূত্র।
এ প্রসঙ্গে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, এই অনুসন্ধানে নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্মকর্তারা ছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের দশটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও রয়েছেন। যারা রোহিঙ্গাদের নাগরিক সনদপত্র দিয়েছেন। এরমধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ড রয়েছে যাদের ওয়ার্ডে শতশত রোহিঙ্গা জন্ম সনদ নিয়েছে। এ সকল বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত আগে থেকে সংগ্রহ করা আছে। এখন যেহেতু দুদক কমিশন অনুসন্ধানের অনুমতি দিয়েছে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের অবৈধ উপায়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের সাথে শুধুমাত্র কর্মচারীরা জড়িত আছে বলে নির্বাচন কমিশন দাবি করলেও এর সাথে সরাসরি নির্বাচন অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জড়িত রয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক সূত্র।

ইতোমধ্যে কাউন্টার টেরোরিজমের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী জয়নাল আবেদিনও কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি গত শনিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগেও গত ১৯ সেপ্টেম্বর দৈনিক পূর্বকোণে ‘দুদক থেকে বাঁচতে জয়নাল গ্রেপ্তার!’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদেও কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এরমধ্যে দুদক কমিশনও তাদের প্রতিবেদনে কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কর্মচারীরা এমন অবৈধ কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করে।

অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন লিখিত চিঠি আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। অনুমতি দেয়া হলে আমরা দ্রুত অনুসন্ধানে নামবো এবং এতে যাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাবো তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দুদক চেয়ারম্যানের :
অনুসন্ধানের অনুমতির বিষয়ে দুদকের বিশ^স্ত সূত্র জানায়, গতকাল রবিবার দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাপ্তাহিক কমিশন বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে জানতে চায় দুদক চেয়ারম্যান। পরে দুদক চট্টগ্রাম অফিস থেকে পাঠানো এনফোর্সমেন্ট টিমের প্রতিবেদনের বিষয়টি সভায় উপস্থাপন করা হয় এবং বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে দুদক চেয়াম্যান অনুমতি দেন। সূত্র বলেন, দুদক চেয়াম্যান দ্রুত এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগকে নির্দেশনা দেন এবং এতে যারা জড়িত আছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেও বলেন তিনি।
দায় এড়ানোর সুযোগ নেই ইসির :

রোহিঙ্গা ভোটার ইস্যুতে দুদকের তৎপরার ঠিক একদিন পর নির্বাচন কমিশন তাদের তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার এবং থানায় মামলা করলেও এটাকে অনেকটাই কৌশল হিসেবে উল্লেখ করছেন দুদকের অনেক কর্মকর্তা। তাদের মতে, জড়িত মূল হোতারা নিজেদের আড়ালে রাখতেই তড়িঘড়ি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তবে কর্মকর্তাদের গাফেলতির কারণেই এমনটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক। তাই এতে কর্মকর্তারা তাদের দায় এড়ানো সুযোগ নেই। যা দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

তাতে বলা হয়, চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালে ৪৩৯১ যে ল্যাপটপটি হারিয়েছে, তাতে কত জন রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে তা নির্বাচন কর্মকর্তারা জানাতে পারেনি। কিন্তু ল্যাপটপটি কার নামে এনডোর্স ছিলো, কোথায় কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে এবং সর্বশেষ কাস্টোডিয়ান কে ছিল তাও তারা জানাতে পারেন নি। তাছাড়া ২০১৪ সালে ল্যাপটপটি হারিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনএ বিষয়ে কোন জিডি করে নি। এমনকি ফরম নং-২ এর সিরিয়াল ন! ৪১৮৬৬৩৩৩ হতে ৪১৮৬৬৩৯৩ পর্যন্ত ৬০ জনসহ একই সিরিয়ালে মোট ৬৮ জন নাগরিক অন্য জেলা/উপজেলার স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করে বাঁশখালী উপজেলায় ভোটার নিবন্ধিত হওয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। যা জেলা নির্বাচন কমিশন কোনভাবে তাদের দায়ভার এড়াতে পারে না। কারণ ফরম-২ সবগুলোই জেলা নির্বাচন অফিসের সংরক্ষিত নিবন্ধিত ফরম ও বাঁশখালী উপজেলার জন্য সংরক্ষিত ছিল।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট