চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ভেরিফিকেশন ধাপ পার কীভাবে!

রোহিঙ্গা পাসপোর্টে সহায়তা চার পুলিশ অভিযুক্ত দুইজন বরখাস্ত

নাজিম মুহাম্মদ

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশি হিসাবে শনাক্ত করে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তার অভিযোগে নগর পুলিশের বিশেষ শাখার চার পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দুই জনের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তদন্ত চলছে। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশের দুই সদস্য হলেন, সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) আবদুল কুদ্দুস ও উপ পরিদর্শক (এসআই) বেলায়েত হোসেন। এছাড়া এএসআই রিপন ও এসআই মঙ্গল বিকাশ নামের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।

নগর পুলিশের বিশেষ শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) আবদুল ওয়ারিশ বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তার অভিযোগে দুইজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আরো দুই জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অন্য দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, প্রায় সাতমাস আগে সৌদি আরবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে একসঙ্গে ২২ জন রোহিঙ্গা নাগরিক ধরা পড়েন। তখন তাদের বাংলাদেশেই ফেরৎ পাঠানো হয়। এসব রোহিঙ্গা কীভাবে বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেল তা যাচাই করার উদ্যোগ নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাসপোর্ট অফিসগুলোতে রক্ষিত কাগজপত্র অনুসন্ধান করে দেখা যায়, তারা সবাই চট্টগ্রাম জেলা, মহানগর ও কক্সবাজার থেকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট নিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী তাদের দেওয়া ঠিকানা যাচাই বাছাই করে পুলিশের বিশেষ শাখা তাদেরকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসাবে প্রতিবেদন দেয়। নাম ঠিকানা যাচাইয়ের পুলিশ প্রতিবেদন পাওয়ার পর পাসপোর্ট অফিস আবেদনটি পাসপোর্ট তৈরির জন্য গ্রহণ করে। রোহিঙ্গাদের পাসপোর্টগুলোর আবেদনপত্রেও ‘সঠিক’ বলে পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দেন।

চট্টগ্রাম জেলা, মহানগর ও কক্সবাজার জেলা থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত হলেও জেলায় কোনো পুলিশ শাস্তি পাননি। কক্সবাজার জেলার চিত্রও একই রকম।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, জেলা এসবির কোনো পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আসেনি। কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনও একই ধরনের মন্তব্য করেন।

তবে নগর পুলিশের বিশেষ শাখার সাময়িক বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমরা প্রথমেই দেখি আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সঠিক আছে কিনা। অনলাইনে তা সঠিক পাওয়া গেছে। আমার বিরুদ্ধে ৭০ বছরের এক মহিলার আবেদন ফরম তদন্তের ব্যাপারে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই মহিলা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেছেন। তার দেওয়া চান্দগাঁও এলাকার ঠিকানায় গিয়ে কথা বলি। তিনি বলেছেন, চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবেন। এরপর ওমরাহ করবেন। যেহেতু তার এনআইডি ঠিক পাওয়া গেছে, আমি সেটি সঠিক বলেই প্রতিবেদন দিয়েছি। এসআই বেলায়েত বলেন, আমি এর আগে চট্টগ্রামে চাকরি করিনি। ফলে এখানে ভাষার যে জটিলতা এবং চট্টগ্রামের মানুষের আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আঞ্চলিক ভাষার পার্থক্য বুঝিনি।

পাসপোর্টের আবেদন ফরম যাচাই করার জন্য পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে ১৮টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর প্রথমটিই হলো ২০০০ সালের আগে জন্মগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে এনআইডি যাচাই করা এবং আবেদনকারীর এনআইডি অনলাইনে যাচাই করা। এর বাইরে আবেদনকারীর পিতা মাতার এনআইডি ও পাসপোর্ট, সরেজমিনে স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা যাচাই, আবেদনকারীর ফরমে থাকা ছবির সত্যতা যাচাই, আবেদনকারীর আবেদন ফরম সত্যায়নকারীর ঠিকানা সরেজমিন উপস্থিত হয়ে যাচাই ও সত্যায়ন করেছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া, বিভিন্ন পরীক্ষার সনদ যাচাই করা ইত্যাদি। এই নির্দেশনার ১৬ নম্বরে আছে, আবেদনকারী রোহিঙ্গা কিনা তা জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। তবে ১৮টি নির্দেশনা সবসময় সঠিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয় না বলে একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

নগর পুলিশের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোহিঙ্গারা এনআইডি সার্ভারে যুক্ত হওয়ায় বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ঠিক কী পরিমাণ রোহিঙ্গা এনআইডি সার্ভারে যুক্ত হয়েছে তা বের করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রাম মনছুরাবাদ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এই ধরনের ৫৪টি ফাইল শনাক্ত করেছে যারা রোহিঙ্গা অথচ বাংলাদেশি হিসেবে এনআইডিও সঠিক। পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্টে ৫৮টি ফাইল পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে মনছুরাবাদ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের পরিচালক আবু সাইদ বলেন, এনআইডি সঠিক থাকা সত্ত্বেও আমরা ৫৪টি আবেদন ফরম সন্দেহবশত আটক করি। পরে যাচাই করে শতভাগ নিশ্চিত হই তারা রোহিঙ্গা। তিনি বলেন, কেবল রোহিঙ্গাই নয়, যেকোনো দেশের নাগরিক বাংলাদেশের পাসপোর্ট যাতে নিতে না পারে এ ব্যাপারে কঠোর নিদের্শনা রয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট