চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সিডিএফের আঞ্চলিক সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান

বাংলাদেশকে ঋণ দিতে বিদেশিরা ঢাকায় ব্রিফকেস নিয়ে হাঁটছে

বিশ^ মন্দা অর্থনীতির একটু আঁচও লাগেনি বাংলাদেশে : ড. আতিউর

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২০ পূর্বাহ্ণ

দেশের মাইক্রোক্রেডিট প্রতিষ্ঠানসমূহের মাত্র ১ শতাংশ মূলধন ডোনার ফান্ড থেকে আসে উল্লেখ পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বাংলাদেশকে ঋণ দিতে হাজার হাজার লোক ঢাকায় ব্রিফকেস নিয়ে হাঁটছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি, আইএমএফ, চাইনিজ ব্যাংকসহ অন্যরা বাংলাদেশকে বিলয়নস অব ডলার ঋণ দিতে চায়। তাহলে কেনো আমরা ডোনার ফান্ড চাইবো? দেশের মাথাপিছু আয় দ্রুত বাড়ছে। প্রয়োজন হলে আমরা ঋণ নেবো এবং সময়মতো তা পরিশোধ করবো। গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগের ক্ষুদ্র অর্থায়ন পরিকল্পনাকারী সংস্থাসমূহের অংশগ্রহণে ‘ক্রেডিট এন্ড ডেভলেপমেন্ট ফোরাম’ সিডিএফ আয়োজিত আর্থিক অন্তর্ভুক্তি তথা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে ক্ষুদ্র অর্থায়ন সংস্থাসমুহের ভূমিকা শীর্ষক আঞ্চলিক

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে মাইক্রোক্রেডিট কার্যক্রম চালাতে গিয়ে চাঁদাবাজি, হয়রানি, সার্ভিস চার্জ কমানো এবং ঋণের সুদ সীমা বাড়ানোর জন্য সভায় উপস্থিত বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিদের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, এসব বিষয় নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো। দ্রুত যাতে এসব সমস্যার সমাধান হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবো।

তিনি বলেন, সরকার এনজিওকে (নন গর্ভমেন্ট অর্গানাইজেশন) প্রতিপক্ষ মনে করে না। এনজিওগুলো সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এনজিওগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। একসময় হয়ত এনজিওদের প্রাতিষ্ঠানিক রুপ ছিল না, স্বীকৃতি ছিল না সেভাবে। কিন্তু এনজিও বিষয়ক ব্যুরো হওয়ার পর তারা তাদের স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে।

ব্রাকের সিনিয়র উপদেষ্টা এবং সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবদুল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর প্রফেসর ড. আতিউর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু মুখার্জী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইএনএম এর নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী।
মূল প্রবন্ধে এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত সমন্বিতভাবে কাজ করার সুপারিশ তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়, সরকারের আন্তরিকতা আর জনসাধারণের কার্যকর অংশগ্রহণে এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ সফলতা দেখিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এসডিজি অর্জনে সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে বেসরকারি সংস্থাসমূহ কাজ করছে।

তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক বড় শক্তি হচ্ছে যুবশক্তি। এই যুবশক্তিকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারলে আমাদের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব হবে। আমাদের দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণীও আরেকটি বড় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে বলেও তিনি তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, অনেক বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ মনে করছেন আরেকটি বিশ^ অর্থনীতি মন্দা আমাদের দ্বারপ্রান্তে। এটা মানতেই হবে। পুরো বিশ^ অর্থনীতির অবস্থা অবশ্যই টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন বানিজ্যিক যুদ্ধ, ইউরোপের ব্রেকজিট বিতর্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা এ পরিস্থিতিকে আরও গুরুতরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক এবং সামাজিক উন্নয়নের বিচারে বাংলাদেশের অবস্থা যত ভালোই হউক কিংবা বিদেশি বিনিয়োগের প্রভাব যতই বেগবান হক না কেন এক ধরণের আশংকা আমাদের মনে থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের অর্থনীতির নিম্ম গতি এ আশংকাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যেই অর্থনীতি মন্দার দিকে গেলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরা শুধু ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি তাই নয়, বরং অর্থনীতিকে আগের তুলনায় বহুগুণ গতিশীল এবং উন্নয়নকে অনেক বেশি মাত্রায় অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে সক্ষম হয়েছি। তাই ওই সময়ে বিশ^ মন্দা অর্থনীতির একটু আঁচও বাংলাদেশে লাগেনি।

সিডিএফের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুল আউয়াল এর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখে ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশানের প্রধান নির্বাহী (ইপসা) মো. আরিফুর রহমান, মমতার প্রধান নির্বাহী রফিক আহামদ, ব্যুরো বাংলাদেশ পরিচালক (অর্থ) মো. মোশাররফ হোসেন, পেইজ ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লোকমান হাকিম, কোডেকের সহকারী নির্বাহী পরিচালক কমল সেনগুপ্ত, অন্তর সোসাইটি ফর ডেভেলপমেন্ট প্রধান উপদেষ্টা মো. এমরানুল হক চৌধুরী প্রমুখ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট