চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ানোর নেপথ্যে ব্যবসায়ীরা

অনলাইন ডেস্ক

২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ৯:০৪ অপরাহ্ণ

বিশ্ববাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার অজুহাতে দেশের বাজারে অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়েছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। এছাড়া দেশীয় যোগান কম থাকায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন শুধু যোগান কম থাকার কারণেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে তা নয়, বরং কারসাজি করেই পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে।কখনো কখনো আমদানি মূল্যের দ্বিগুণ দামে ভোক্তারা পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজেদের বাজার সামাল দিতে ভারত রপ্তানিকৃত পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি করায় বাংলাদেশে আমদানিতে ধস নেমেছে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। লাগাতার মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। আর এ কারণে স্থানীয় বাজারে গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা গেছে, ১ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি টন ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ছিল ৪০৫ থেকে ৪১৫ ডলারের মধ্যে। কোনো সংকেত ছাড়াই ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ওই মূল্য বাড়তে বাড়তে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা দাঁড়িয়েছে ৮৫৫ ডলারে। আমদানি মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী আমদানিকারকরা পেঁয়াজের আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন।

পেঁয়াজ আমদানিকারকরা বলছেন, এতো মূল্য দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে পারছি না। তাই আমদানি কমিয়ে দিয়েছি। বন্যা ও বৃষ্টির কারণে ভারতে মালামালের দাম বেড়েছে। তাছাড়া বেনাপোল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি আগের তুলনায় কমে গেছে। আমদানি কম হওয়ায় স্থানীয় বাজারে প্রতিদিন সকাল-বিকেল বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।

আড়ৎদাররা বলছেন, অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে ব্যবসা করতে পারছেন না। স্থানীয় বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। কয়েকদিন আগে যে পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে সে পেঁয়াজ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এতে পেঁয়াজের বিক্রি কমেছে।’

হিলি ও বেনাপোল কাস্টম হাউজের কর্মকর্তারা বলছেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে যে পেঁয়াজ আমদানি হয় তা গড়ে প্রতিদিন ৭০-৮০ টন, সেই হিসাবে ১৫ দিনে ৫০০ মেট্রিক টনেরও বেশি। এছাড়া হিলি বন্দর দিয়ে হচ্ছে পেঁয়াজ আমদানি। পঁচনশীল পণ্য হিসেবে পেঁয়াজ দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করে থাকে কাস্টমস হাউসগুলো।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বন্দরে পেঁয়াজের চালান আসার পর সরকারি কিছু খরচসহ আনুষাঙ্গিক ব্যয় বাবদ প্রতি কেজিতে আরো এক টাকা খরচ হয় আমদানিকারদের। এ ছাড়া এসব পেঁয়াজ বন্দর থেকে রাজধানী পর্যন্ত আসতে কেজিপ্রতি আরো এক থেকে দেড় টাকা খরচ হয়ে থাকে। এরপর পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তা যায় খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে । আমদানির পর মাঝে তিন-চার হাত হয়ে ভোক্তাদের হাতে পৌঁছায় পেঁয়াজ। এর ফলে তাদের খরচটা বেশি হয়।

কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘অযৌক্তিকভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকেই এর সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে হবে। ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া দাম এত বেশি বাড়ার কারণ নেই। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে এমনটাই প্রত্যাশা আমদানিকারক, বিক্রেতা ও ভোক্তাদের।’

সূত্র: জাগরণ

পূর্বকোণ/আল-আমিন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট