চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অবকাঠামো সুবিধার অভাবে হাতছাড়া বিপুল বিদেশি মুদ্রা

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি

ইমাম হোসাইন রাজু

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:৩০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্যের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু অবকাঠামোগত সুবিধার অভাবে রপ্তানি হচ্ছে না এসব পণ্য। যার কারণে হাতছাড়া হচ্ছে বিপুল বিদেশি মুদ্রা। তবে এ সকল সমস্যা সমাধান হলে রপ্তানির শীর্ষে পৌঁছাতে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে প্রচুর পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব। ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের মতে, অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা না থাকা এর অন্যতম কারণ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি ও আমাদনির সাথে জড়িত থাকা উদ্ভিদ সংগনিরোধের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে দেশের বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানির সময় রোগ বালাইয়ের পরীক্ষা করে রাজস্ব আয় করেছে ৩৫ কোটি ২৭ লাখ ১৪ হাজার ৬৯৯ টাকা। তবে পরবর্তী অর্থবছরে তথা ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৫২ লাখ ২৩ হাজার ৮২১ টাকা। এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলেই দেখা যায় কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির হার কিছুটা কমেছে।

তথ্য মতে, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কৃষিজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বন্দর থেকে কোন পণ্য রপ্তানি বা আমদানি করতে হলে উদ্ভিদ সংগনিরোধের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়ে থাকে। ছাড়পত্র নেয়ার আগে এসব কৃষিজাত পণ্যের একাধিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়। এরমধ্যে গুণগত মান সম্পন্ন না হলে এসব পণ্য বাতিল করে বিভাগটি। তবে সুখের খবর হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে যথাযথভাবে নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে রপ্তানিকৃত কোন কৃষিজাত পণ্যই এখন পর্যন্ত বাতিল হয়নি। যদিও ২০১৪ সালে রাশিয়ায় রপ্তানি করা আলুতে ব্রাউন রুট ব্যাকটোরিয়া শনাক্ত করার পর থেকে বাংলাদেশ থেকে আলু রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা করেন দেশটি। অথচ বাংলাদেশের আলু রপ্তানির জন্য রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে বাজার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

উদ্ভিদ সংগনিরোধের এক তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানির প্রস্তুতকৃত একাধিক কৃষিজাত পণ্যকে ছাড়পত্র বাতিল করেছে বিভাগটি। এরমধ্যে এসব পণ্যে গুণগত মানসহ বিভিন্ন সমস্যা থাকায় বাতিল করা হয়। এরমধ্যে বিগত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মালয়েশিয়ায় ১৩, ভিয়েতনামে ২, দুবাই ২, কাতারে ১ ও সিঙ্গাপুরে ১টি কন্টেইনারসহ মোট ১৯টি কন্টেইনার আলু রপ্তানি বাতিল করা হয়। এসব আলু রপ্তানির ক্ষেত্রে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পোঁকা ও গুণগত মান ঠিক না থাকায় তা বাতিল করে সংশ্লিষ্ট বিভাগটি। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মালয়েশিয়ায় রপ্তানির জন্য ৪টি কন্টেইনার আলু গুণগত মান সম্পন্ন না হওয়ায় বাতিল করা হয়। সর্বশেষ চলতি মাসে আরব আমিরাতে রপ্তানি করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি কন্টেইনার আলুর চালান বাতিল করে রোগতত্ত্ব এই বিভাগটি।
কৃষিজাত পণ্যের সাথে সংশ্লিষ্টদের মতে, অনুন্নত উৎপাদন কৌশল, পণ্য সংরক্ষণে অদক্ষতা, পরিবহন সমস্যা, মোড়ক ও প্যাকেটজাতকরণে নি¤œমান, দক্ষ জনবলের অভাবে রপ্তানির হার কমে যাচ্ছে। তবে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত গবেষণাগারের বৃদ্ধি এবং মানসম্পন্ন কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারলে তা রপ্তানিতে কোন সমস্যায় থাকবে না।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোদ কেন্দ্রের রোগতত্ত্ব ও কৃষিবিদ সৈয়দ মুনিরুল হক এ প্রসঙ্গে পূর্বকোণকে বলেন, আধুনিক গবেষণাগারের অপ্রতুলতা, অধিকাংশ ফসলের বালাই ঝুঁকি বিশ্লেষণ কার্যক্রম না থাকা এবং কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের আমাদনির মাধ্যমে নতুন নতুন বালাইয়ের অনুপ্রবেশ, বিস্তার ও ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়া এর মধ্যে অন্যতম। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্যের কাটিং প্রসেসিং, প্যাকেজিং, গ্রেডিং, টেস্টিং সুবিধা সমূহ রপ্তানি কার্যক্রমকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাছাড়া রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্যের গুণগত মান রক্ষাসহ আমাদানিকারকদের বেঁধে দেয়া মানদ-গুলো অনুসরণ না করাও এর আরেকটি কারণ।

অন্যদিকে রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা সরকারি সুযোগ-সুবিধাকেই দায়ী করছেন। এরমধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগের অনুন্নত ব্যবস্থা এবং পচনশীল পণ্য সংরক্ষণও তাদের প্রধান সমস্যা বলে উল্লেখ করছেন ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফ্রুট্স এন্ড ভেজিটেবল এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব রানা পূর্বকোণকে বলেন, ‘দিনদিন কৃষিপণ্য রপ্তানির হ্রাস হওয়ার পেছনে দায়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা। পণ্য পরিবহনে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এখানে ভাড়া কয়েকগুণ বেশি। এছাড়া পণ্যগুলো সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করতে হলে সাধারণ বাজারের তুলনায় দামও বেশি পড়ে। যার কারণে এ পণ্য রপ্তানি করতে গেলে সাধারণ বাজারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দাম বৃদ্ধি পায়। যার কারণে দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে পণ্য সংগ্রহে অনাগ্রহী হয়ে পড়েন’।

বর্তমানে কৃষিপণ্যে ভারত মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে দেশের সরকার পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে তাদের অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। যেকোন ব্যবসায়ী পণ্য রপ্তানি করতে চাইলে সরকারিভাবে কৃষকদের থেকে সংগ্রহ থেকে শুরু করে রপ্তানি কাজ সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত তারা নিজেরাই তদারকি করে থাকেন। অথচ আমাদের অনেক সুযোগ থাকলেও আমরা তা পারছি না। সরকারিভাবে যদি এ বিষয়ে বেশি নজর দেয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশও কৃষিপণ্য রপ্তানিতে শীর্ষে পৌঁছাতে পারবে বলে মনে করেন এই রপ্তানিকারক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট