চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ২০ ও ২১ ডিসেম্বর

ছাত্রলীগের নেতৃত্বে জয়-লেখক

‘বিতর্কিত’ শোভন-রাব্বানী বাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা অফিস

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:৩০ পূর্বাহ্ণ

নানা বিতর্কের পর অবশেষে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং গোলাম রাব্বানীকে। এর আগে গতকাল শনিবার কেন্দ্রীয় সভাপতির পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে গোলাম রাব্বানী পদত্যাগ করেন। গত সন্ধ্যায় তারা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তাদের পদত্যাগপত্র তুলে দেন। পরে, গতরাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এই দুই নেতার জায়গায় অন্য দু’জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সভাপতি পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আল নাহিয়ান খান জয়কে আর সাধারণ সম্পাদক পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন লেখক ভট্টাচার্য। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে ডিসেম্বরের ২০ ও ২১ তারিখে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গণভবন সূত্র জানায়, পদাধিকার বলে আল নাহিয়ান খান জয় ছাত্রলীগের ১ নম্বর ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ায় সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। আর লেখক ভট্টাচার্য এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থাকায় তিনিই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাদেরকে দ্রুততম সময়ে সম্মেলন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, শোভন-রাব্বানী সন্ধ্যায় গণভবন গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে যান। এ বিষয়ে পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বহাল থাকবে। কমিটির প্রথম সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব পালন করবেন। তারা ছাত্রলীগের কাউন্সিলের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।

জানা গেছে, গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফোনে পদত্যাগের নির্দেশনা দিয়ে বলেন তারা যেন সন্ধ্যায় গণভবনে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পদত্যাগ পত্র তুলে দেন। অবশ্য রাতে ওবায়দুল কাদেরও জানান শোভন ও রাব্বানীকে পদত্যাগের জন্য আমরা বলেছি।

বলা বাহূল্য, বিরোধী মতাদর্শীদের অর্থের বিনিময়ে সংগঠনে অনুপ্রবেশ ঘটানো, স্বেচ্ছাচারিতা, ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন, দুপুর পর্যন্ত ঘুমানো, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের অগ্রাহ্য করা, মাদক সেবন, টেন্ডার ও তদবির বাণিজ্যসহ অসংখ্য অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শনিবার দলের সভাপতিম-লীর সভায় তিনি কমিটির র্শীষ দুই পদে নতুন নেতৃত্ব আনার আভাস দেন। এরপরই একের পর এক দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসে শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে।
নিয়ম অনুযায়ী অক্টোবরেই আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে সেটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। আগামী ডিসেম্বরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহীর সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরের ২০ ও ২১ তারিখে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের দল তাই দেশ ও জাতির কল্যাণে সব সময়ই সংগঠনটি নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এক দশকে বাংলাদেশ যা অর্জন করেছে তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে। এখন বাংলাদেশ নিয়ে সারা বিশ্বের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের যে আস্থা এবং বিশ্বাস তৈরি হয়েছে তা ধরে রাখতে হবে। ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি খুব আশাবাদী। আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। একটি কথা মনে রাখতে হবে- আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। কাজেই আমাদের দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই কথা মাথায় রেখেই সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায় থেকে সুসংগঠিত করে তুলতে হবে এবং আওয়ামী লীগের সম্মেলনটা যাতে নিয়মিত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের যে উপ-কমিটিগুলো আছে তাদেরকেও দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। কেউ নষ্ট করতে পারবে না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় সভাপতিম-লীর সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক, সম্পাদক এবং কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট