চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

প্রাক্তন নেতাদের ইন্ধনে স্থগিত ছাত্রদলের কাউন্সিল

অনলাইন ডেস্ক

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ৮:৪২ অপরাহ্ণ

দীর্ঘ ২৭ বছর পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিএনপির অন্যতম সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে। সদ্যবিলুপ্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক জনৈক আমান উল্লাহ আমান কর্তৃক আদালতে মামলা দায়েরের পর এ প্রক্রিয়াটি মুখ থুবড়ে পড়ে। আজ শনিবার সংগঠনটির কাউন্সিল ও শীর্ষ দুই পদ- সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বিকালে হঠাৎ করেই আদালতের নির্দেশে এ কাউন্সিল ও নির্বাচন স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিএনপি।

ছাত্রদলের এ নির্বাচন স্থগিতে আদালতের নির্দেশকে সরকারের গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছে বিএনপি। দলের নেতাদের বক্তব্য, ছাত্রদলের কাউন্সিল ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে সংগঠন গুছিয়ে বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানোকে ব্যাহত করতেই সরকার এ ষড়যন্ত্র করেছে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, বিএনপিকে রাজনীতি করতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা দলকে পুনর্গঠনের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সুসংগঠিত করছি। এ জন্য যে কাউন্সিল করা দরকার সেই কাউন্সিল করতে অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। আমরা আমাদের দলে, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করতে চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টাকেও আজকে সরকার নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। আপনারা দেখেছেন, ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। সেটিও বন্ধ করতে কোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ সব সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ।

আদালতের নির্দেশে ছাত্রদলের কাউন্সিল ও নির্বাচন স্থগিতের পর থেকে আলোচনা চলছে- আদালতে মামলা করা কে সেই আমান উল্লাহ আমান। যার আর্জিতে কাউন্সিলের মাত্র একদিন আগে বৃহস্পতিবার এক মামলায় কাউন্সিলের ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দেন ঢাকার চতুর্থ সহকারী জজ আদালত। এই আদেশের পর থেকে ছাত্রদলসহ বিএনপি নেতাদের মধ্যে আমানই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন। সন্দেহ করা হচ্ছে, আমান মামলা করলেও এই মামলার পেছনে ছাত্রদলের সাবেক কয়েক নেতা ও বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কোনো নেতারও ইন্ধন থাকতে পারে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিলের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা ‘সরকারের মাস্টারপ্ল্যানে’র অংশ বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহর দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিতাদেশ সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক। কারণ ছাত্রদলের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহ ১৪ সেপ্টেম্বরের কাউন্সিলে প্রতিযোগী ছিলেন না এবং প্রতিযোগিতার জন্য আবেদন করেননি কিংবা তিনি কাউন্সিলরও নন। সুতরাং কোনো বিচার বিশ্লেষণ ও যুক্তিতর্ক ছাড়া তার করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিতের আদেশ দেয়া গভীর চক্রান্তমূলক। সরকারের কারসাজিতেই এহেন আদেশ প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে, কাউন্সিল ও নির্বাচন স্থগিতের পর থেকেই বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে কাদা ছোড়াছুড়ি। ছাত্রদলেরও এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের বিরুদ্ধে যোগ দিয়েছে কাদা ছোড়াছুড়িতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এটা বেশি হচ্ছে।

বিএনপির এক নেতা এ বিষয়ে বলেন, ছাত্রদলের পর যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি হবে। দলের হাইকমান্ড প্রতিটি সংগঠনের কমিটিই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। ওইসব সংগঠন ও কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের অনুসারীদের মধ্যেই এই কাদা ছোড়াছুড়ি বেশি হচ্ছে।

ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন আমানউল্লাহ আমান। তার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায়। লেখাপড়া করেছেন ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায়।

২০০৯ সালের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও আমিরুল ইসলাম আলীম কমিটি ঘোষণার পর ওই কমিটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কমিটিতে স্থান না পাওয়া ছাত্রদলের একটি গ্রুপ। নরসিংদী অঞ্চলের এক নেতা মূলত ওই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। তখন এই আমান সেই বিদ্রোহে তার গ্রুপে যোগ দিয়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এরপর ওই নেতার গ্রুপেই ছিলেন তিনি। পরে ২০১২ সালের আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল-হাবিবুর রশীদ হাবিবের নেতৃত্বে কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। ওই কমিটিতে আমান পদ না পেয়ে বরিশাল অঞ্চলের এক নেতার গ্রুপে যোগ দেন। এরপর কিছুদিন তিনি ওই গ্রুপেই সক্রিয় থাকেন।

২০১৪ সালের রাজিব আহসান ও আকরামুল হাসান মিন্টুর নেতৃত্বে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। তখন আমান আবার নরসিংদী গ্রুপে যোগ দেন। এবার তিনি সফলও হন। রাজিব-আকরাম কমিটিতে তাকে সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক করা হয়।

এ ছাড়াও আমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের প্রভাবশালী এক নেতার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করে চলতেন বলে ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়। তবে, আমানের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সফল হওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জানান, মামলার আগে থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এখনও তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।

ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির একজন যুগ্ম সম্পাদক বলেন, আমান ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে পড়াশোনা করেছেন বলে পরিচয় দিতেন। বিভিন্ন সময়ে মাজারকেন্দ্রিক ওরসে তার যাতায়াত ছিল। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গ্রুপে তাকে দেখা গেলেও কার্যত ছাত্রদলের কোনো গ্রুপেই সে স্থির থাকেনি। বারবার গ্রুপের সঙ্গেও ‘পল্টি’ মেরেছে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) আদালতের নির্দেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল স্থগিত করা হয়। আমানের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার চতুর্থ সহকারী জজ আদালতের বিচারক নুসরাত জাহান সাথী এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জবাব দেয়ার জন্য ৭ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন আদালত। বিএনপির মহাসচিবসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ১০ নেতাকে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সূত্র: দৈনিক জাগরণ

পূর্বকোণ/আল-আমিন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট