চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী হলে বিএনপি’র অস্তিত্ব থাকত না : প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১০:০৭ অপরাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণ নির্বাচিত করে আমাকে সংসদে পাঠিয়েছে, আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি, যেখানেই থাকি না কেন আমি সবসময় মনে করি জনগণের ভালো-মন্দ দেখা আমার দায়িত্ব। তিনি বলেন, আমি ১২টায় ঘুম থেকে উঠি না। বলতে গেলে আমি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫ ঘণ্টা ঘুমের সময় পাই। সার্বক্ষণিক চেষ্টা করছি দেশের কোথায় কী হচ্ছে সেগুলোর নজর রাখার। এটা নিজের কর্তব্য বলে মনে করি। তাই বিদেশ থেকেও কাজটা করি।

তিনি আরও বলেন, এবার ডেঙ্গুটা শুধু বাংলাদেশে নয়, আশপাশের দেশগুলোতেও দেখা দিয়েছে। ফিলিপাইনে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৫০০ লোক মারা গেছে। মহামারি আকার সেখানে দেখা দিয়েছিল, তারা জরুরি অবস্থা জারি করেছিল। আমাদের দেশে সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে দেইনি, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কার্যকর ওষুধ আনা হয়েছে। এরআগে ওষুধ কেনার ব্যাপারে যারা দায়ী বা সত্যিকারে কেন কাজ হয়নি এ ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। মশার প্রজনন যেন না হয় সে বিষয়ে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব একাদশ সংসদের চতুর্থ বৈঠকে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে গণফোরাম দলীয় সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষ হত্যার রাজনীতি করে না। আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতেও বিশ্বাসী নয়। আমরা যদি তাই বিশ্বাস করতাম তাহলে এ দেশে বিএনপির অস্তিত্ব থাকত না। কারণ বিএনপির দ্বারা আমরা যে পরিমাণ হত্যা-নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তা আর কেউ হয়নি। আর প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হওয়ার কথা বলছেন? অকার্যকর রাষ্ট্রের উদাহরণ তো বিএনপির সৃষ্টি করেছিল। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসত রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়-এমন ব্যক্তির কাছ থেকে। প্রধানমন্ত্রী ঘুমিয়ে থাকতেন, সিদ্ধান্ত দিত তার পুত্র হাওয়া ভবন থেকে। মন্ত্রী সচিবরা হাওয়া ভবন থেকে নির্দেশের অপেক্ষায় প্রহর গুনতেন।
প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপির এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
রুমিন ফারহানা লিখিতভাবে জানতে চান, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুগ্রহ করে বলবেন কি দেশে বর্তমানে মানুষ হত্যা হইতে মশা মারা পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রয়োজন হয়, যাহা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাঙ্গিয়া পড়া, অকার্যকর হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা একটি কার্যকর রাষ্ট্রের পূর্ব শর্ত। এই অকার্যকর প্রতিষ্ঠান গুলো কি রাষ্ট্রপরিচালনায় সরকারের সার্বিক ব্যর্থতা চিত্র তুলে ধরে না?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সরকার প্রধানের দায়িত্ব হলো সকল মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয় করা। মন্ত্রীদের কাজের তদারকি করা। জনগণকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য। আরাম আয়াসের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ করিনি। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। যিনি তার জীবনটায় উৎসর্গ করেছিলেন এই দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। তার কন্যা হিসেবে জনগণের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা একটা আলাদা জায়গা রয়েছে। আমি সেটাই প্রতি পালনের চেষ্টা করি। সে জন্যই দিনরাত পরিশ্রম করি। কোনো প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর করার জন্য নয়, সকল প্রতিষ্ঠানকে আরও সক্রিয় রাখার জন্য আমি সদা সর্বদা সচেষ্ট থাকি।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নিরলস প্রচেষ্টা এবং আমাদের জনগণের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে একটা মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এসব আপনা আপনি হয়নি। সকলের পরিশ্রম হয়েছে। প্রতিষ্ঠান অকার্যকর থাকলে সব অর্জন সম্ভব হতো না। কারণ রাষ্ট্র একটি যন্ত্রের মত। এই যন্ত্রের বিভিন্ন কলকব্জা যখন সমন্বিতভাবে কাজ করে তখন রাষ্ট্র ভালো থাকে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে কারণ রাষ্ট্রযন্ত্র ভালোভাবে কাজ করছে। তিনি মানুষ হত্যা আর মশা মারাকে একই সমতলে নিয়ে এসেছেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রশ্ন উত্থাপনকারীর সদস্যের দলের নেত্রী খালেদা জিয়াও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার শাসনামলে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সময়ে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, মমতাজউদ্দীনসহ আমাদের ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকেসহ আওয়ামী লীগের পুরো নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। আইভি রহমানসহ আমাদের দলের ২২ নেতা-কর্মী সেদিন নিহত হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় মদদে খুনের নেশায় মত্ত হয়েছিল তার দল বিএনপি। এই সংসদে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন- আমি নাকি আমার ভ্যানিটি ব্যাগে করে নিয়ে জনসভায় ছুড়েছিলাম। এই সকল ধারণা থেকেই প্রশ্ন করে আমাকে খালেদা জিয়ার সমান্তরালে ফেলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাননীয় স্পিকার আপনি নিশ্চয়ই ভুলে যাননি ২০১৪ সালের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা। বিএনপি’র অগ্নিসন্ত্রাসের কথা। প্রশ্নকারী সংসদ সদস্যের দল বিএনপির নারী ও শিশুসহ ৫০০ জন নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। নির্মমভাবে হত্যা করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২৪ জন সদস্যকে। ৫৮২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তিন হাজার যানবাহন, ২৯ টি রেল, ৯ টি লঞ্চ এবং ৭০ টি সরকারি অফিসে অগ্নিসংযোগ করেছে। অসংখ্য বৃক্ষনিধনসহ গবাদিপশু আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। তাদের অগ্নি সন্ত্রাসের হাত থেকে রক্ষা পায়নি শিশু মহিলারাও।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই হত্যা, ক্যু’র অপরাজনীতির শুরু করে। সশস্ত্র বাহিনীর শত শত অফিস, সৈনিককে হত্যা করে। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাটের সংস্কৃতি চালু করে। এটা পুরো প্রজন্মকে নষ্ট করে দেয় জিয়াউর রহমান। তাই বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যের মুখে মানুষ মারার বিষয়টি অবলীলায় চলে। আসে এটাই তাদের দলীয় আদর্শ। তার স্ত্রী খালেদা জিয়া যে তার চেয়েও এক কাঠি সরেস-সে প্রমাণ তিনি রেখেছেন এ দেশে জঙ্গী সৃষ্টি, অগ্নি, সন্ত্রাস বোমা, হামলা মানি লন্ডারিং, এতিমের টাকা আত্মসাৎ সহ হেন অপকর্ম নেই যে তিনি তার পুত্রদ্বয় এবং তার দলের নেতারা করেননি।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি মো. রুস্তম আলী ফরাজীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এডিস মশার ডিম শুকিয়ে যাওয়ার পরেও দীর্ঘদিন জীবিত থাকে। আবার এক ফোঁটা পানি পেলেই লার্ভা হয়। আর এডিস মশা একটু এলিট শ্রেণির মতো। মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে, এসি, ফ্রিজ, কমোডের ব্যবহার বেড়েছে। কাজেই দেশবাসীকে বলব নিজ নিজ ঘর ও আশপাশ পরিষ্কার করুন। কোথাও পানি জমতে দেবেন না।

 

 

পূর্বকোণ/ এস

 

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট