চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হ্যালো পার্টি’র ভয়ঙ্কর প্রতারণা

অনলাইন ডেস্ক

১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ৯:১৬ অপরাহ্ণ

হ্যালো পার্টির সদস্যদের এক ফোনেই সর্বনাশ হতে পারে যে কারও। কেউ বুঝতেও পারবেন না যে তিনি প্রতারিত হচ্ছেন। চক্রটি এতটাই ধুরন্দর যে, তাদের বিশ্বাস অর্জন করাতে ভিকটিমকে মন্ত্রীর কণ্ঠও নকল করে শোনাবে। হ্যালো পার্টি চক্রের একজন সদস্য প্রথমেই টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে রবি বা বাংলালিংক বা জি কোম্পানির পরিচয়ে ফোন দিয়ে বলবে, আপনি তাদের লটারিতে একটি দামি গাড়ি পেয়েছেন।

টার্গেটকৃত ব্যক্তি তা বিশ্বাস করলে এরপর তারা সেই গাড়ির চার্জ, রেজিস্ট্রেশন, লাইসেন্স, ট্যাক্স ও ভ্যাটের নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেবে। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরই ফোন নম্বরগুলো বন্ধ করে দেবে। পরে সংশ্লিষ্ট টার্গেটকৃত ব্যক্তি বুঝতে পারবেন যে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। চক্রটি এভাবে ফোনে লটারির কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে বিকাশে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিষয়টি এতদিন গোপন থাকলেও গত বছরের জুনে তা প্রকাশ পেয়ে যায়। খিলগাঁও থানায় দীন মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি একটি প্রতারণার মামলা করেন। সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে হ্যালো পার্টির প্রতারণার বিষয়টি।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে, এই চক্রের সঙ্গে বাবা, মা, ভাই-বোন, জামাই, বৌ, শ্বশুর ও ছেলেও জড়িত। কারও কারও পুরো পরিবারই এই চক্রটির সঙ্গে জড়িত। তারা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে আসছিল। চক্রটি শুধুমাত্র বনশ্রী এলাকার আদ্বদীন নামের এই ব্যক্তির কাছ থেকেই ৫৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর বাইরেও অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

সম্প্রতি ৬ সেপ্টেম্বর (ïµevi) ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে চক্রটির দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এর আগেও আরও সাত সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে মূল হোতা ছিলেন সুমন সিকদার নামের এক ব্যক্তি। সুমনের আদালতে দেওয়া জবানবন্দির সূত্র ধরেই ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে রুবেল মুন্সি (৩২) ও মোহাম্মদ মিরাজকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে রুবেলের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে।

অন্যদিকে, মিরাজের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চর পশ্চিম কামারকান্দি গ্রামে। এর আগে গ্রেফতার হয় সুমন সিকদার, সাব্বির হোসেন (২৩), সাগর খান (২০), নাসির (২৫), সুমন সাহা (২৬), কাজী মর্তুজা (৩৮) ও শিমুল রহমান (২৮)। এদের সবার বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও লালমনিরহাটে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চক্রটি প্রতারিত দীন মোহাম্মদের কাছ থেকে ৫৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তবে এই টাকা থেকে মাত্র ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আর এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে ১২২টি বিকাশের সিম। যেগুলো বিভিন্ন জায়গার ঠিকানা ব্যবহার করে নামে-বেনামে তোলা হয়েছিল।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া, দক্ষিণ ব্রাহ্মণপাড়া ও মধ্য ব্রাহ্মণপাড়ার তিন গ্রামের উঠতি বয়সের যুবকরাই এই হ্যালো পার্টিতে জড়িত। এসব গ্রামের মানুষজনও জানে তারা হ্যালো পার্টির সদস্য। এই তিন গ্রামে পুলিশ আসামি ধরতে গেলে মুহূর্তে সে খবর ছড়িয়ে যায় গ্রামে। ফলে আসামি ধরাও কঠিন হয়ে পড়ে। সর্বশেষ প্রতারক রুবেল মুন্সিকে ধরতে গিয়ে ঘাম ঝরে সিআইডির সদস্যদের। কারণ রুবেলের বাড়ি একখানে হলেও সে থাকত আরও ২০ বাড়ি পর। আর বাড়ির সদস্যরা কখনই বাড়িতে থাকত না। রুবেলকে একটি ভাঙ্গা বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

সিআইডির ঢাকা মেট্রোর (পূর্ব) বিশেষ পুলিশ সুপার কানিজ ফাতেমা বলেন, চক্রটি এতটাই চালাক যে, তাদের গ্রেফতার করতে গেলে তারা সতর্ক হয়ে যায়। সবাই গা ঢাকা দেয়। পরিবারের সদস্যরাও কোনো তথ্য দিতে চায় না। এরা একটি সিন্ডিকেট। বাকিদেরও ধরার চেষ্টা চলছে।

সিআইডির ঢাকা মেট্রোর (পূর্ব) ডেমরা ইউনিটের উপপুলিশ পরিদর্শক আকসাদুদ জামান বলেন, হ্যালো পার্টির সদস্যরা সবাই উঠতি বয়সের যুবক। এরা ঘরে বসে, মাঠে বসে সাধারণ মানুষকে লটারির নাম করে ফোন করে। এরপর সুযোগ বুঝে বিকাশের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর ফোন বন্ধ করে দেয়। প্রতারণা করাই এদের পেশা। সূত্র: সময়ের আলো

 

 

পূর্বকোণ/ রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট