চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

জাপায় দেবর-ভাবী মুখোমুখি

স্পিকারকে পাল্টা চিঠি আজ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন রওশন

শিবুকান্তি দাশ হ ঢাকা অফিস

৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:৩৪ পূর্বাহ্ণ

বিরোধীদলীয় নেতার পদকে ঘিরে আবারো জাতীয় পার্টিতে শুরু হয়েছে উত্তেজনা, চলছে রশি টানাটানি। এ নিয়ে দলের ভেতরে বিদ্রোহ এখন তুঙ্গে। রয়েছে দল ভাঙার আশঙ্কা। বিশেষ করে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে জিএম কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা বানানোর জন্য সংসদের স্পিকার বরারব চিঠি দেয়ার একদিন পরই পাল্টা চিঠি দিয়েছেন রওশন এরশাদ। গতকাল বুধবার বিকালে স্পিকারের কার্যালয়ে এ চিঠি পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এতে জিএম কাদেরের চিঠির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা গ্রহণ না করার অনুরোধ করা হয়েছে। স্পিকারের দফতর থেকে রওশন এরশাদের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুও চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সিনিয়র চেয়ারম্যান ও বর্তমান সংসদ উপনেতা রওশন এরশাদ বুধবার স্পিকারকে একটি চিঠি দিয়েছেন।’ তবে এতে বিরোধীদলীয় নেতা করার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

চুন্নু বলেন, ‘জিএম কাদেরের চিঠিটি যথাযথভাবে পাঠানো হয়নি এবং সংসদীয় দল বা পাটির কোনও পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই চিঠি পাঠানো হয়নি, সেটা জানিয়েই এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় পাটির পার্লামেন্টারি কমিটির কোনও বৈঠক ছাড়া স্পিকারকে দেওয়া জিএম কাদেরের চিঠির কোনও দাম নেই।’ জানা গেছে, স্পিকার বরাবর রওশনের চিঠি পৌঁছে দেন রওশনপন্থী বলে পরিচিত ফখরুল ইমাম। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার রওশন এরশাদ তার গুলশানের বাসভবনে বেলা ১১টায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। মঙ্গলবার জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য পার্টির ১৫ জন এমপি স্বাক্ষরিত চিঠিটি স্পিকারের দপ্তরে পৌঁছে দেন কাজী ফিরোজ রশীদ। এসময় জাপার সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, নাজমা আকতার, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, মেজর অব. রানা মোহাম্মদ

সোহেল ও আদেলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। চিঠিতে তারা ছাড়াও আরো স্বাক্ষর করেছেন- পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অধ্যাপিকা মাসুদা রশিদ চৌধুরী, লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দীন চৌধুরী, গোলাম কিবরিয়া টিপু, নুরুল ইসলাম তালুকদার, সালমা ইসলাম ও পনির উদ্দিন আহমেদ।
চিঠির খবর রওশন এরশাদের কাছে পৌঁছলে তিনি দলীয় এমপিদের সন্ধ্যায় নিজ বাসায় আসতে বললেও মাত্র ৪ জন হাজির হন। বুধবার দুপুরেও নিজ অনুসারীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন রওশন। সেখানে ৪ জন এমপি উপস্থিত ছিলেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়।
বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান, পার্টি সংসদীয় কোনো সভা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারে না। ম্যাডাম (রওশন) আগামী ৮ সেপ্টেম্বর সংসদে আমাদের সংসদীয় দলের সভা ডেকেছেন। সেখানেই আমরা বিরোধী দলের নেতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গত ১৪ জানুয়ারি মারা গেছেন। এর আগে তিনি তার অবর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ভাই জিএম কাদের দায়িত্ব পালন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন, এর কোনও সুরাহা করে যাননি।

জিএম কাদেরের চেয়ারম্যান হওয়ার বিষয়টি এরশাদ আগে জানিয়ে গেলেও রওশনপন্থীরা সেটা মেনে নিতে রাজি হননি। ফলে এরশাদের মৃত্যুর পরপরই দলটির প্রেসিডেন্ট ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা মনোনয়ন নিয়ে জিএম কাদের ও রওশনপন্থীদের মধ্যে টানাটানি শুরু হয়। দেওয়া হয় বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি।

অবশ্য জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নিতে রওশনপন্থীরা কিছুটা নমনীয় হলেও তাকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে চান না। তাদের দাবি, রওশনই হবেন বিরোধীদলীয় নেতা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট