চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সমুদ্রের ওপারে সমরেশ মজুমদার

বাদল সৈয়দ, কথা সাহিত্যিক

৯ মে, ২০২৩ | ১২:০২ অপরাহ্ণ

কিছুদিন আগে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলো। কানে নিয়ে বললাম, হ্যালো, কে বলছেন? ওপার থেকে হাসতে হাসতে বললেন, বলুন তো আমি কে?
আমিও হাসতে হাসতে বললাম, সমরেশ দা…
তিনি আরো জোরে হেসে উঠে বললেন, দেবাশিষ বলল আপনি নাকি আরো বড় কর্তা পদে উন্নীত হয়েছেন, এখন আর আমার গলা চিনবেন না, তাই আরেক বন্ধুর ফোন থেকে পরীক্ষা করলাম চিনেন কিনা?
কী যে বলেন দাদা, তা বাংলাদেশে আসবেন কখন?
জুলাই মাসে আসতে পারি, একটি পত্রিকা নিমন্ত্রণ জানিয়েছে, তবে থাকব কিন্তু আপনি এবং দিপংকরের সাথে।
অবশ্যই, দাদা।
আমাকে কিন্তু এবার সমুদ্র এবং পাহাড় দেখা যায় এমন জায়গায় নিতে হবে।
কক্সবাজারে প্যাঁচার দ্বীপে নিয়ে যাব, দাদা, দুটোই দেখবেন। চা বাগান যাবেন না?
যাবো তো, কাজল বাবুতো বলেই রেখেছেন, আবার আরেক ডাক্তার এসেছিলেন, কী যেন নাম, ও, মনে পড়েছে আতাউর, ডাক্তার আতাউর। তার ওখানেও যাব।
নিয়ে যাব, দাদা।
তাহলে, কথা রইল সমুদ্র দেখাবেন, আবার চা বাগানে আড্ডা হবে।
নিশ্চয় দাদা।
বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি সমরেশ মজুমদারের সাথে আমার পরিচয় ২০১৬ এর দিকে। বাতিঘরের দিপংকরদা’র মাধ্যমে। তারপর থেকে কীভাবে যেন তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমার লেখার জগতের গাইড এবং ফিলোসোফার। কঠিন নির্দেশ দিয়েছিলেন, প্রতিদিন অন্তত ছয়শ শব্দ লেখার। ২০১৯ সালে আমার জন্মজয় বইটির ‘বাতিঘর সংস্করণ’ প্রকাশিত হলে উড়ে এসেছিলেন সেটির পাঠ উন্মোচনের জন্য। সেবার আমরা উঠেছিলাম কুলাউড়ার গগন টিলায় গাজীপুর চা বাগানের বাংলোয়। সন্ধ্যায় বাংলোর উঠোনে বসে আছি।
সমরেশ মজুমদার
দেবাশিষ ভৌমিক।
বাতিঘরের দিপংকর দাশ।
বাগানের ম্যানেজার কাজল দা।
চৈতন্য প্রকাশনীর রাজিব।
আমার স্ত্রী লিজা এবং আমি।
আকাশভরা জ্যোৎস্না।
কী আশ্চর্য! সে জ্যোৎস্নাকে ভাসিয়ে দিয়ে অঝর বৃষ্টি নামলো।
টিনের চালে অপূর্ব মূর্ছনা।
আমি মুগ্ধ হয়ে বৃষ্টি আর জোৎস্নার মাখামাখি দেখছি।
আহা! কেবল মানুষই এমন প্রবল অনুভুতিপ্রবণ হয়!
হঠাৎ সমরেশ দা’ বললেন, বাদল আপনি তো দেখি খুব ব্যস্ত থাকেন- প্রতিদিন লিখতে পারেন?
না, দাদা পারি না।
এটা ঠিক না, বাদল। লেখা হচ্ছে মায়ার ভক্ত। প্রতিদিন এর যত্ন না নিলে সে অভিমান করে। হাত থেকে ছুটে যায়।
দাদা, সময় যে পাই না…
বেশি লেখার দরকার নেই। প্রতিদিন অন্তত ৬০ লাইন লিখবেন, প্রতিটি লাইনে থাকবে ১০ শব্দ। তাহলে ডেইলি ৬০০ শব্দ লেখা হয়ে যাবে। এটা তেমন কঠিন কিছু নয়। মনে রাখবেন ভগবান আপনার আঙুলে যে অসীম ক্ষমতা দিয়েছেন তা সবাইকে দেন না। এর অপচয় করবেন না।
না, এমন আড্ডা আর হবে না। জুলাই মাসে সমরেশ দা বাংলাদেশে আসবেন না। আর কখনোই আসবেন না।
আজ তিনি সমুদ্রের ওপারে চলে গেছেন, যেখান থেকে কেউ ফিরে না। আচ্ছা, ওই পারে কি চা বাগান আছে? চায়ের কাঁচা পাতার গন্ধ যে সমরেশ মজুমদার বড্ড ভালোবাসতেন!

পূর্বকোণ/এ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট