চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

কে এই সাধনা ?

নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা অফিস

২৬ আগস্ট, ২০১৯ | ১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

যৌন কেলেঙ্কারিতে বিতর্কিত ডিসি আহমেদ কবীরকে ওএসডি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গতকাল এই আদেশ জামালপুরে পৌঁছার আগেই জনরোষ আতংকে আগের রাতেই জামালপুর ছেড়েছেন তিনি। জানা গেছে, বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শনিবার গভীর রাত ৩টায় তিনি জামালপুর ত্যাগ করে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরে আশ্রয় নেন। এদিকে হদিস পাওয়া যাচ্ছে না সাধনা নামের সেই আলোচিত নারীরও। এখন নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা নিজ থেকে আত্মগোপন

করেছেন, নাকি আহমেদ কবীর তাকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার স্বক্ষরিত আদেশপত্র জামালপুরে পৌঁছে গতকাল দুপুর দেড়টায়। সেই আদেশে আহমেদ কবীরকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়েছে। তার স্থলে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করছেন পরিকল্পনা মন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ এনামুল হক।

এদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে, একজন ডিসি হচ্ছেন তার জেলার জন্য অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার কাছ থেকে এরকম অনৈতিক কর্মকা- কখনও কাম্য না। তার বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমুলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাকে এর আগে শুদ্ধাচার পদক দেয়া হয়েছিলো। সেটা ফিরিয়ে নিবো।

আগামীতে ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্র নৈতিকতা বিবেচনা করে নিয়োগ দেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অধিকতর তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি যে নারীর নাম এসেছে তাকেও তদন্তের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে আলোচিত নারী অফিস সহকারী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা গতকাল কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজিব কুমার সরকার। সাধনার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি। সাধনা এখন কোথায়, সঠিক হদিস বলতে পারছে না কেউ। স্থানীয় সাংবাদিকরা সাধনার পরিবারের যোগাযোগ করলে তার মা নাসিমা আক্তার বলেন, মেয়ে বেড়াতে গেছে। কিন্তু কোথায় বেড়াতে গেছেন, সে বিষয়ে মুখ খুলেননি তিনি।

এদিকে, ডিসি আহমেদ কবীরের ওএসডির খবর চাউর হলে গতকাল জেলা প্রশাসকের দপ্তরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য ভিড় জমান স্থানীয় সাংবাদিকরা। উৎসুক মানুষও এসেছেন চাউর হওয়া নারী কেলেঙ্কারীর সর্বশেষ খবর জানতে। বিশেষ নিরাপত্তায় ডিসি অফিস প্রাঙ্গণ ও আশপাশে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। সেখানে দমকল বাহিনীর গাড়ীও রাখা ছিল। ডিসি অফিসের বারান্দায় বসানো হয়েছিল ভিক্ষুক মুক্ত জামালপুরের প্রচারণায় একটি এলইডি টিভি। সেখানে ডিসি আহমেদ কবীরের বক্তব্য থাকায় হামলার আশংকায় টিভিটি সরিয়ে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজিব কুমার সরকার বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেছেন দু’দিন বন্ধ থাকায় টিভিটি খুলে রাখা হয়েছে। কিন্তু গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত টিভিটি দেখতে পাওয়া যায়নি।

কে ছিলেন এই সাধনা, কি ছিল তার খুঁটির জোর ?

পিয়ন পদে চাকরি করলেও ডিসি অফিসে দোর্দ- প্রতাপে দাপিয়ে বেড়াতেন সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা। তার প্রভাবের মুখে সব সময় কর্মকর্তা কর্মচারীরা থাকতো তটস্থ। শুধু কর্মচারীরাই নয়, উর্ধতন কর্মকর্তাদেরও থোড়াই কেয়ার করতেন তিনি। চাকরি হারানোর শংকায় প্রতিবাদ করতে সাহস পেতেন না কেউ। তবে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবিরের সঙ্গে অশ্লীল ভিডিও ভাইরালের পর ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ ক’জন কর্মকর্তা কর্মচারী স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, সাধনা ২০১৮ সালে উন্নয়ন মেলায় হস্তশিল্পের স্টল বরাদ্ধ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক আহমেদ কবিরের সাথে দেখা করেন। তার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিনামূল্যে স্টল বরাদ্দ দেন জেলা প্রশাসক। উন্নয়ন মেলা চলাকালীন তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে যা শারীরিক সম্পর্কে রূপ নেয়। এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তাদের। ইতোমধ্যে আহমেদ কবিরকে ওএসডিও করা হয়েছে।

পরে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডিসি অফিসে ২৭ জনকে অফিস সহায়ক পদসহ ৫৫ জনকে নিয়োগ করা হয়। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা নিজে এবং তার দুই আত্মীয় রজব আলী ও সাবান আলীকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাইয়ে দেন। সাধনা অফিস সহায়ক পদে যোগদান করার পর জেলা প্রশাসকের অফিস রুমের পাশে খাস কামরাটিতে মিনি বেডরুমে রূপান্তর করতে খাট ও অন্যান্য আসবাবপত্রসহ সাজ্জসজ্জা করেন। সেই রুমেই চলতো তাদের রঙ্গলীলা।
অফিস চলাকালীন সময়ে তাদের রঙ্গলীলা অবাধ করতে সেই কামরার দরজায় বসানো হয়েছিল লাল ও সবুজ বাতি। রঙ্গলীলা চলাকালে লালবাতি জ্বলে উঠতো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো বিশ্বস্ত পিয়ন। এই সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার জন্য প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ সময় তার অফিসের বাইরে ফাইলপত্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকতো কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেকেই। লীলা শেষে পরিপাটি হয়ে যখন চেয়ারে বসতো তখন জ্বলে উঠতো সবুজ বাতি। সবুজ বাতি জ্বলে উঠার পরেই শুরু হতো দাপ্তরিক কার্যক্রম। ডিসি অফিসে গুঞ্জন রয়েছে, ছায়া ডিসি সাধনার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ডিসির প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্নি দপ্তরে বদলি, নিয়োগ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত কাজে সাধনাকে ম্যানেজ করতো সুবিধাভোগীরা। সবার মাঝেই ছায়া ডিসি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন এই প্রভাবশালী পিয়ন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট