চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

অবশেষে মিলল বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১ এপ্রিল, ২০২৩ | ১২:৪০ অপরাহ্ণ

নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দিয়েছে সরকার। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দিয়ে মৎস্য বিভাগের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে ভেনামি চিংড়ি চাষের জন্য ‘বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভেনামি চিংড়ি চাষ নির্দেশিকাও’ জারি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম বড় খাত চিংড়ি রপ্তানিতে নতুন দিনের আশা দেখছেন চিংড়ি রপ্তানিকারকরা।  ভেনামি চিংড়ির পোনা ছাড়ার ৮০ তম দিনে এক একটি চিংড়ি গড়ে ৩০-৩২ গ্রাম ওজন হয়। যা ৮০ দিনেই বিক্রি করা সম্ভব। আর গলদা বা বাগদা চিংড়ি বিক্রিযোগ্য হতে ১২০ দিন লাগে। অন্যান্য চিংড়ির চেয়ে ভেনামি চিংড়ি চাষে খরচও প্রায় অর্ধেক। এমন পরিস্থিতিতে গত দুই বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবেই এই চিংড়ির চাষ হচ্ছিলো। এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষের অনুমোদন পাওয়ায় এই চিংড়ির চাষ বিস্তার লাভ করবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বের ৬২টি দেশে বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ির চাষ হয়। এর মধ্যে এশিয়ার দেশ রয়েছে ১৫টি।

এশিয়ার চিংড়ি রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ির চাষ ছিলো না। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয় ২০০৮ সালে। বিশ্বে চিংড়ি বাণিজ্যের ৭৭ শতাংশ দখল করে আছে ভেনামি চিংড়ি। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান শূন্য। এখন এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা রপ্তানিকারকদের। দেশে ভেনামির চাষ বাড়াতে ২০১৮ সালে কারিগরি কমিটি গঠন করে সরকার। এরপর ২০২০ সালে প্রথম পরীক্ষামূলক ভেনামি চাষের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২২ সাল পর্যন্ত ১২টি প্রতিষ্ঠান অনুমতি পেয়ে ভেনামি চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছে। গলদা ও বাগদা চিংড়ির চাষ বছরে একবার করা গেলেও ভেনামি চাষ বছরে তিনবার করা যায়। সাধারণ পুকুরে প্রতি হেক্টরে ৩০০-৪০০ কেজি বাগদা চিংড়ি উৎপাদন করা গেলেও একই পরিমাণ জমিতে ৭-৮ হাজার কেজি ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব।

 

চিংড়ি রপ্তানিকারকরা বলছেন- গত অর্থবছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানি হয়। এর সবগুলোই গলদা ও বাগদা চিংড়ি। দেশে চিংড়ি চাষের যে অবকাঠামোগত সক্ষমতা রয়েছে এর মাত্র অর্ধেক ব্যবহার করে এসব চিংড়ি উৎপাদন করা হয়। ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষ শুরু হলে চিংড়ি চাষের অবকাঠামোগত সক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এতে দেশের চাহিদা পুরোপুরি মিটিয়ে বিদেশে চিংড়ি রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে। চিংড়ির রপ্তানি আয়ও বেড়ে যাবে।

 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ সোহেল পারভেজ পূর্বকোণকে বলেন, বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দিয়ে সরকার আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করেছে। ভেনামি চিংড়ির চাষ শুরু হলে দেশে চিংড়ির চাহিদা পুরোপুরি মেটানো যাবে। রপ্তানিতে আমরা ভারত, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে টেক্কা দিতে পারবো। চিংড়ির রপ্তানি আয় বাড়বে।

 

তিনি বলেন, ভেনামি চিংড়ির খাবার ও পোনা আমদানি নির্ভর। পুরোপুরি আমদানি নির্ভরতা না কাটালে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিরা ভেনামি চিংড়ি চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন না। তাই এই জায়গায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশে কয়েকটি বড় হ্যাচারির পোনা তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। তাদের পোনা তৈরির অনুমতি দিতে হবে। তবেই ভেনামি চিংড়ি ঘিরে রপ্তানিকারকরা চিংড়ি রপ্তানিতে যে নতুন দিনের আশা দেখছেন তা পূরণ হবে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট