দেশের মোট কনটেইনারবাহী পণ্য আমদানি-রপ্তানির মাত্র ৯ শতাংশ পণ্য পরিবহন করে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ৮ জাহাজ দিয়ে। তবে বাংলাদেশ পতাকাবাহী জাহাজ (স্বার্থরক্ষা) আইন ২০১৯ এর বিধিতে দেশি জাহাজ দিয়ে ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহনের কথা উল্লেখ করা আছে। কিন্তু ৯ শতাংশ পণ্য পরিবহনে সক্ষম ৮ জাহাজ দিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানির ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহনের চিন্তা করা অযৌক্তিক বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
সম্প্রতি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কাছে বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান স্বাক্ষরিত পাঠানো এক চিঠিতে ওয়েভার সনদ বিষয়ে জটিলতার কথা উল্লেখ করে আমাদনি-রপ্তানির ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহন দেশি জাহাজ দিয়ে করার চিন্তাকে অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে শঙ্কা প্রকাশ করে আরো উল্লেখ, যদি ওয়েভার সনদ জটিলতায় পড়ে বিদেশি জাহাজগুলো বাংলাদেশ বিমুখী হয়, তাহলে দেশের পণ্য পরিবহনের সাপ্লাই চেইনে বিপর্যয় নেমে আসবে।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ৮টি কনটেইনার জাহাজের মোট ধারণক্ষমতা ১০,৮৫০ টিইইউস। ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টগুলোর সাথে এই ৮টি জাহাজ যদি শতভাগ কনটেইনার নিয়ে মাসে দুইবারও যাতায়াত করে তাহলে বছরে মোট কনটেইনার পরিবহন হবে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন টিইইউস। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ইতিমধ্যে প্রতিবছর ৩ মিলিয়নের বেশি কনটেইনার পরিবহন হয়। তাই কোনভাবে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ দিয়ে এখনই পণ্য পরিবহনের চিন্তা করা ব্যবসা বান্ধব হবে না। চিঠিতে ওয়েভার সনদের বিষয়ের দুটি সুপারিশও করেছে বিজিএমইএ।
এদিকে ওয়েভার সনদ জটিলতা নিরসনে গত ১ মার্চ নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মো. নিজামুল হকের সভাপতিত্বে মেইন লাইন অপারেটর, শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশন, ফিডার ভেসেল অপারেটর, বাংলাদেশ ওশান গোয়িং শিপস ওনার এসোসিয়েশন ও এইচ আর লাইনের প্রতিনিধির সাথে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মো. নিজামুল হক ও চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ, ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ ইকবাল আলি (শিমুল), পরিচালক মুনতারি রুবাইয়্যাত ও তানজিল আহমেদসহ অন্যন্যরা।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশীয় পণ্যের নূন্যতম ৫০ শতাংশ বাংলাদেশ পতাকাবাহী জাহাজ দিয়ে পরিবহন করা হবে। পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্টরা নৌবাণিজ্য দপ্তরের কাছে ১৫ দিন আগে পণ্য বোঝাইয়ের জন্য ওয়েভার সনদের আবেদন করবেন। শিপিং এজেন্টের আবেদনের প্রেক্ষিতে নৌবাণিজ্য কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ওশান গোয়িং শিপস্ধসঢ়; ওনার এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের কাছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের প্রাপ্যতা নিশ্চিতের জন্য অনুরোধ করবেন। সেই অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ওই দুই সংস্থা সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের মতামত জানাবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের প্রাপ্যতার নিশ্চয়তা প্রদানে ব্যর্থ হলে নৌবাণিজ্য দপ্তর বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ নেই ধরে নিয়েই বিদেশি জাহাজের জন্য ওয়েভার সনদ জারি করবেন।
তবে এর পড়েও ওয়েভার সনদ ইস্যু নিয়ে কয়েকটি অভিযোগ উঠেছে। কোন কোন জাহাজকে ওয়েভার সনদ দেওয়া হয়নি। আবার কোন কোন জাহাজকে আমদানি বা রপ্তানির ওয়েভার সনদ দেওয়া হচ্ছে।
পূর্বকোণ/একে