চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছোলার দামে সর্বকালের রেকর্ড

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৪ মার্চ, ২০২৩ | ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ

ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় প্রত্যাশিত ছোলা আমদানি করতে পারেননি আমদানিকারকেরা। এবার দেশীয় চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ ছোলা এসেছে। সারাদেশের মতো খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারও এখন ভারতীয় ছোলার উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে ছোলার দাম সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

 

খাতুনগঞ্জে অন্তত ৫০ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছেন হাজি স্টোরের মালিক হাজি মো. ইউসুফ মিয়া। গতকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যায় তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভারত থেকে আমদানি করা ছোলা (উন্নতমানের সাদা ছোলা) কেজিতে ৮৭ টাকা টাকা দরে বিক্রি করেছি। মধ্যমানের (লাল) ৭৫ টাকা ও অস্ট্রেলিয়ার ছোলা ৭০ টাকা দরে বিক্রি করেছি।’ তাঁর ব্যবসায়ী জীবনে এই দামে ছোলা বিক্রি করেননি বলে জানান তিনি। একই কথা বললেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এহসান উল্লাহ জাহেদী। তিনি বলেন, ‘২৬ বছরের জীবনে ৮০ টাকার ওপরে ছোলা বিক্রি করিনি।’

 

প্রবীণ ব্যবসায়ী হাজি ইউসুফ ও ব্যবসায়ী নেতা এহসান উল্লাহ বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে ব্যাংক এবার এলসি দেয়নি। এখানকার আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা চাহিদার সিকিভাগ ছোলাও আমদানি করতে পারেনি। এই সুযোগে ভারতীয় ছোলা একচেটিয়ে দেশীয় বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে ছোলার দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।’ ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম ও খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক-ব্যবসায়ীরা সারাদেশে রমজানে ছোলা সরবরাহ করতো। এখন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা সীমান্ত এলাকা ও ঢাকার ব্যবসায়ীদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলসি না খোলার সুযোগে এবার ভারত ও বাংলাদেশের একটি সিন্ডিকেট কৌশলে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণ ছোলা আমদানি করে। বড় কয়েকটি শিল্পগ্রুপ কৌশলে একচেটিয়া ছোলার বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

 

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাহী সদস্য জয়নাল আবেদীন মিন্টু বলেন, ‘গত কয়েক বছরে সর্বোচ্চ ৭৮ টাকা দরে ছোলা বিক্রি করেছি। এবার ৮২-৮৬ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে।’

 

ব্যবসায়ীরা জানান, খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে এখন ভারত, তানজানিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা ছোলা বিক্রি হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার ছোলা এসেছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। তা পর্যাপ্ত নয়। আর ভারত থেকে ছোলা আসছে স্থলবন্দর দিয়ে। তিন দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে ছোলা ঢোকায় এবার ছোলা নিয়ে কোনো সংকট নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

 

হাজি স্টোরের জয়নাল আবেদীন মিন্টু বলেন, ‘ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন ১০-১৫ ট্রাক ছোলা ঢোকছে। কিন্তু বেচাকেনা খুবই কম। ভারতীয় ছোলা সীমানা বন্দর ও ঢাকা থেকে সারাদেশে ঢোকেছে। চাহিদা কম থাকায় বেচাকেনা একেবারেই কম। আগে খাতুনগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ২০-৩০ ট্রাক দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হতো। এখন শুধু চট্টগ্রামেই বিক্রি হচ্ছে।’

 

ব্যবসায়ীরা বলেন, মূলত ঋণপত্র খোলা নিয়ে সংকটের খবরে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আগেভাগে ছোলা আমদানি করেছেন। এখন বাংলাদেশে রপ্তানি করছেন তারা। ভারতের স্থলবন্দরে বিপুল পরিমাণ ছোলা দেশে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ছোলার দাম কিছুটা কমতির দিকে রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে ভারতের উন্নতমানের ছোলা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৮২ টাকা দরে। কয়েকদিন আগে তা ৮৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মধ্যমানের ছোলা ৭৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তা কয়েকদিন আগে ৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ছোলা ৮৬ টাকা থেকে কমে এখন ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

রমজানের নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর পেছনে মহাসড়কের ওজন স্কেলকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা।

 

ব্যবসায়ী নেতা এহসান উল্লাহ জাহেদী বলেন, ‘সারাদেশে ২০-৩০ টন ওজনের পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করছে। শুধু চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে ১৩ টনের অধিক পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ ঢাকা বা দেশের অন্য জেলা থেকে একই সড়কের ফেনী পর্যন্ত ২০-৩০ টন ওজনের পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে। ওজন স্কেলের কারণে পরিবহন ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে পড়ার প্রভাব পড়ছে ভোগ্যপণ্যের ওপর।

 

ছোলা ছাড়াও ভারত থেকে আসছে রোজার আরেক অনুসঙ্গ ডালও। মসুর ডাল (মোটা) ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮৯ টাকা, চিকন দানার মসুর ১২৮ টাকা থেকে ১৩২ টাকা, মটর ৬১ টাকা থেকে ৬৪, খেসারি ৭৩ টাকা থেকে ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতের ছোলা দেশে ঢোকার পর গত সপ্তাহ থেকে দেশীয় বাজারে দাম কমতির দিকে রয়েছে। এর ফলে বাজারে বেচাকেনাও কমে গেছে। বাজার থমকে আছে। তারা বলেন, ভারত ছোলা রপ্তানিকারক দেশ নয়। কিন্তু এখন ছোলা রপ্তানি করছে। বাংলাদেশে ঋণপত্র খোলা সীমিত হয়ে পড়ার সুযোগে দুই দেশের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অস্ট্রেলিয়া, তানজানিয়া থেকে আমদানি করা ছোলা বেশি দামে বাংলাদেশে রপ্তানি করছে।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব, দেশে বছরে ছোলার চাহিদা থাকে এক লাখ ২০ হাজার টন। রমজানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে। ছোলার পুরোটাই আমদানি করে দেশীয় চাহিদা মেটানো হয়।

পূর্বকোণ/একে

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট