১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১২:৩৩ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারত ও পাকিস্তান। পূর্ব বাংলা হয়ে যায় পাকিস্তানের অংশ। এরপর থেকেই পাকিস্তান সরকার ঠিক করে উর্দু ভাষাকে সমগ্র দেশের জাতীয় ভাষা করা হবে। যদিও পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানে উর্দু ভাষার প্রচলন ছিল খুবই কম। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী মানুষ এ সিদ্ধান্তকে মোটেই মেনে নিতে পারেনি। শুরু হয়ে যায় বাংলা ভাষার সমমর্যাদার দাবিতে আন্দোলন।
১৯৫১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের জন্ম। সে সময় এই যুবলীগ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার পাশাপাশি পাকিস্তান সরকারের চাপিয়ে দেয়া মুসলিম সংস্কৃতির পরিবর্তে পূর্ব বাংলার অধিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি যেমন, পহেলা বৈশাখ, নবান্ন ইত্যাদি চর্চার ব্যাপারে উচ্চকণ্ঠ ছিল। যুবলীগ মূলত পাকিস্তানের প্যান-ইসলামিক মতবাদ থেকে বেরিয়ে এসে পূর্ববাংলার নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চার ক্ষেত্রে একটি কণ্ঠস্বর হিসেবে অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত হয়ে ওঠে।
১৯৫১ সালের ১১ মার্চ পূর্ববাংলার সব পত্রপত্রিকায় এবং গণপরিষদের সদস্যদের মাঝে বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবিতে একটি স্মারকলিপি পাঠায়। একই সালের ২৭ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পুনরায় গণপরিষদে আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাবটি পেশ করে। মৌলানা আকরাম খানের নেতৃত্বে গঠিত ১৬ সদস্যের পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাবকে বাস্তবতা বিবর্জিত এবং উদ্ভট হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যান করলেও সেই রিপোর্টকে সাধারণ জনগণের সামনে প্রকাশ করেনি পাকিস্তান সরকার।
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন জানান, পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হবে। এ ঘোষণার পর মাতৃভাষা আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে ওঠে। পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে মিটিং-মিছিল ইত্যাদি বেআইনি ঘোষণা করে। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর কোনো কিছুই সেদিন বাংলার ছাত্রজনতা মানেনি। মায়ের ভাষা রক্ষার দাবিতে রাস্তায় নেমে পড়েন। একই সালের ১০ ডিসেম্বর মওলানা ভাসানী জেল থেকে মুক্তি পেয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এবং অবিলম্বে গ্র্যান্ড ন্যশনাল কনভেনশনের গৃহীত প্রস্তাবগুলো অবিলম্বে মেনে নেয়ার জন্য পাকিস্তান সরকারকে আহ্বান জানান।
পূর্বকোণ/এসি