চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঋণ গ্রহণকারীদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক

১ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৪:৪৩ অপরাহ্ণ

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদান করলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম ‌এবং ঋণ মঞ্জুরের চিঠি ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংককে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলায় প্রকাশিত রায় থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে রায় প্রদানকারী বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চের সইয়ের পর ১৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়।

 

রায়ে আদালত বলেছেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করবে, সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঋণ মঞ্জুরের চিঠি ওই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। ব্যাংকের টাকা যেহেতু জনগণের টাকা, সেহেতু জনগণের টাকা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে, তা তাদের জানার অধিকার আছে।

 

রায়ে আরও বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রতিটি ঋণের বিপরীতে ইনস্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা জারি করবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কী পদ্ধতিতে খেলাপি ঋণ আদায় করবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হবে স্যাংশন লেটারে। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সব ঋণ প্রদানে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও আধুনিকীকরণের পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করবে ও নিয়মিত বিরতিতে তা দেখাশোনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

এর আগে গত ২৩ নভেম্বর কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারবে না বলে রায় দেন হাইকোর্ট। তবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য শুধু ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনে বর্ণিত উপায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে বলে জানান আদালত।

 

একই সঙ্গে বর্তমানে বিচারিক আদালতে চলমান ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করা সব চেক ডিজঅনার মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলেও রায়ে বলা হয়।

 

ঋণ আদায়ের জন্য এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্র্যাক ব্যাংকের চেক ডিজঅনার মামলা বাতিল করে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

 

রায়ে আদালত বলেন, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে চেক নিচ্ছে, সেটা জামানত। বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে রাখা সেই চেক দিয়ে চেক ডিজঅনার মামলা করা যাবে না। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ একটি চুক্তির মাধ্যমে নেওয়া হয়ে থাকে। ব্যাংকের কিছু দুর্নীতিবাজ, অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে, তাদের হিডেন এজেন্ডা বাস্তবায়নে চেকের অপব্যবহার করে মামলা করে থাকে। তাদের ব্যবহার দাদন ব্যবসায়ীদের মতো।

 

আদালত আরও বলেন, ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেওয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে।

 

রায়ে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আজ থেকে কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি চেক ডিজঅনার মামলা করে, তাহলে আদালত তা সরাসরি খারিজ করে দেবেন। একই সঙ্গে তাদের ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দেবেন।

 

আদালত বলেন, ব্যাংক হওয়ার কথা ছিল গরিবের বন্ধু, কিন্তু তা না হয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গরিবের রক্ত চুষছে। এটা হতে পারে না। যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছে ব্যাংক তাদের ঋণ মওকুফ করার কথা শুনি। কিন্তু কোনও গরিবের ঋণ মওফুফ করার কথা কোনও দিন শুনিনি। নীলকর চাষিদের মতো, দাদন ব্যবসায়ীদের মতো যেনতেন ঋণ আদায় করাই তাদের লক্ষ্য। লোন আদায়ের জন্য অর্থঋণ আইনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মামলা না করে চেক ডিজঅনার মামলা করছে। এ কারণে আমাদের ক্রিমিনাল সিস্টেম প্রায় অকার্যকর হয়ে গেছে। তাই এখন থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান শুধু অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। অন্য কোনও আইনে নয়।

 

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হাইকোর্টের রায়ের আলোকে নির্দেশনা জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের প্রতি নির্দেশও দেন আদালত। পরে রায়টি স্থগিত চেয়ে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন জানায় ব্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

 

গত ২৮ নভেম্বর সে আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন চেম্বার জজ আদালত। একই সঙ্গে এ বিষয়ে করা আপিল আবেদনের ওপর আজ বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট