চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মনসা পূজা আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ আগস্ট, ২০১৯ | ২:১৮ পূর্বাহ্ণ

 

শ্রাবণ মাসে নাগপঞ্চমীতেও সাপের প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে বলে এই সময়ই মনসা পূজা হয়ে থাকে। সনাতনী ধর্মের নারীরা এই দিন উপবাস ব্রত করে সাপের গর্তে দুধ প্রদান করেন। নানাভাবে এ পূজা সম্পন্ন হয়ে থাকে। মনসা পূজার মধ্যদিয়েই শুরু হয় সনাতন ধর্মের এ পূজা অনুষ্ঠান। আর মনসাকে খুশি করতেই সনাতন ধর্মের মানুষ পাঠা বলি দিয়ে থাকে মায়ের চরণে। আজ সেই মনসা পূজা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ পূজোয় প্রতিমায় মনসা পূজা করা হয় না। মনসা পূজিতা হয় স্নুহী বা সীজ বৃক্ষের ডালে অথবা বিশেষভাবে সর্পচিত্রিত ঘট বা ঝাঁপিতে। যদিও কোথাও কোথাও মনসা মূর্তি ও পূজা হয়। বাংলায় মনসা পূজা বহুল প্রচলিত। হিন্দুধর্মে মনসা লৌকিক সর্পদেবী। তাঁর পূজা প্রধানত বাংলা ও উত্তর ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে প্রচলিত। সর্পদংশন প্রতিরোধ ও সাপের বিষের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাঁর পূজা করা হয়।
মনসা প্রজনন ও সমৃদ্ধিরও দেবী। তিনি নাগরাজ বাসুকীর ভগিনী ও ঋষি জগৎকারের পত্নী। মনসা বিষহরি (বিষনাশকারিণী), জগৎগৌরী, নিত্যা (চিরন্তনী) ও পদ্মাবতী নামেও পরিচিত। পুরাণ ও লোককথা অনুযায়ী, পিতা শিব ও স্বামী জগৎকার উভয়েই মনসাকে প্রত্যাখ্যান করেন। সৎ মা চন্ডী তাঁকে ঘৃণা করেন। এই কারণে মনসা সর্বদা নিরানন্দ ও বদরাগী থাকতেন। অন্য এক মতে, মনসার পিতা হলেন কশ্যপ। মনসা তাঁর ভক্তদের ভালবাসেন। কিন্তু যে তাঁর পূজা করতে অস্বীকার করে, তার প্রতি তিনি রাগান্বিত হন। প্রথম দিকে দেবতারা মনসার দেবীত্ব স্বীকার করেননি। এই কারণে মনসাকে নিজে উদ্যোগী হয়ে দেবী হিসেবে তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হয় এবং নিজেকেই নিজের পূজা প্রচার করে মানব ভক্তদের কাছে স্থান খুঁজে নিতে হয়। মনসা মূলত একজন আদিবাসী দেবতা। নিম্নবর্ণীয় হিন্দুদের মধ্যে তাঁর পূজা প্রচলিত ছিল। পরবর্তীকালে উচ্চবর্ণীয় হিন্দুসমাজেও মনসা পূজা প্রচলন লাভ করে। বর্তমানে মনসা আর আদিবাসী দেবতা নন। বরং হিন্দু দেবীতে রূপান্তরিত হয়েছেন। হিন্দু দেবী হিসেবে তাঁকে নাগ বা সর্পজাতির পিতা কশ্যপ ও মাতা কদ্রুর সন্তান রূপে কল্পনা করা হয়েছে। খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দী নাগাদ মনসাকে শিবের কন্যারূপে কল্পনা করে তাঁকে শৈবধর্মে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই সময় থেকেই প্রজনন ও বিবাহরীতির দেবী হিসেবেও মনসা স্বীকৃতি লাভ করেন। শিব বিষপান করলে মনসা তাঁকে রক্ষা করেন। সেই থেকে তিনি বিষহরি নামে পরিচিত হন। তাঁর জনপ্রিয়তা দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত প্রসারিত হয়। মনসার পূজকেরা শৈবধর্মের প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেও অবতীর্ণ হন। শিবের কন্যারূপে মনসার জন্মকাহিনী এরই ফলশ্রুতিতে। এর পরেই হিন্দুধর্মের ব্রাহ্মণ্যবাদী মূলধারায় মনসা দেবীরূপে স্বীকৃতিলাভ করেন।
মনসা ঘট: মানব সমজের গতি অর্থাৎ প্রবাহমানতার মাধ্যম হলো সৃষ্টি। এই মনসা ঘট হলো গর্ভবতী নারীর প্রতীক। যেখান থেকে প্রাণ সঞ্চার হয়ে মানব জীবন ক্রম বিবর্তনের মাধ্যমে এগিয়ে চলছে। মনসা ঘট যেমন গর্ভবতী নারীর প্রতীক তেমনই ফসলের উবতার প্রতীক। যাকে প্রজনন শক্তির প্রতীক হিসাবে কল্পনা করা হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট