চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের ‘হলফনামা’ বাধ্যতামূলক : হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ নভেম্বর, ২০২২ | ১০:০৯ অপরাহ্ণ

আগামী সব ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের হলফনামা বাধ্যতামূলক করতে নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভক্তপুর ইউনিয়নের এক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর প্রার্থিতার বৈধতা ঘোষণার রায়ে এ পরামর্শ দেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের বেঞ্চ।

আদালত বলেছেন, স্থানীয় সরকারের অন্য নির্বাচনে যেখানে প্রার্থীদের হলফনামা দেওয়ার বিধান আছে এবং যেহেতু স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯-এর ২৬(৩) ধারায় প্রার্থীদের হলফনামা দেওয়ার কথা বলা আছে, তাই ইউপি নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামা বাধ্যতামূলক। তাই পরবর্তী ইউপি সব নির্বাচনের মনোনয়নপত্রে হলফনামা ফরম সংযুক্ত করে যেন আইনের বিধান কার্যকর করা হয়।

ইউনিয়ন পরিষদ বিধিমালা (সংশোধিত), ২০১৬-তে হলফনামার কথা উল্লেখ না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে আদালত আরো বলেন, ‘আইনের আলোকেই বিধিমালা হয়। ফলে আইনের প্রাধান্য বিধিমালার ওপরে।’

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভক্তপুর উপজেলার ভক্তপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন ফারুকুল আজম। এ প্রার্থী আরেকজনের ব্যাংকঋণের জামিনদার হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিএবি) প্রতিবেদনে ঋণখেলাপি হিসেবে তার নাম আসে। যে কারণে গত বছরের ২১ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা ফারুকুল আজমের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।

মনোনয়নপত্র ফিরে পেতে ফারুকুল আজম চট্টগ্রামের জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে আপিল করেন। সেখানে তার আপিল খারিজ হলে তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ফারুকুল আজম। হাইকোর্ট গত বছরের ৩১ অক্টোবর রুল জারির পাশাপাশি রিট আবেদনকারী প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে তাঁর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন।

কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী এস এম সোলায়মান হাইকোর্টের এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। চেম্বার আদালত গত বছরের ৭ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতের পাশাপাশি ওই ইউপি নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে স্থগিতাদেশ দিয়ে সোলায়মানের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। গত ৬ মার্চ আপিল বিভাগ চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রেখে হাইকোর্টকে দ্রুত রুলটি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন।

ভক্তপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ফারুকুল আজমের প্রার্থিতা কেন বৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া রুলের শুনানির পর আজ বৃহস্পতিবার পর্যবেক্ষণসহ রায় দিলেন উচ্চ আদালত।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম ও মো. জাহেদ উল আনোয়ার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস।

আইনজীবী জাহেদ উল আনোয়ার বলেন, ‘ভক্তপুর ইউনিয়নের নির্বাচন হয় গত বছর ১১ নভেম্বর। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন স্থগিত করার আগেই গত বছর ২৭ নভেম্বর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এস এম সোলায়মানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। আজ আদালত রায়ে ফারুকুল আজমের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছেন। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে।’

হলফনামার বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে এ আইনজীবী বলেন, ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯-এর ২৬(৩) ধারা অনুযায়ী প্রার্থীদের হলফনামা দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ২০১৬ সালে প্রণীত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সংশোধিত বিধিমালায় প্রত্যয়নের কথা আছে। মনোনয়নপত্রের ফরমের সঙ্গে একটা প্রত্যয়নপত্র দিলেই এখন হয়। তাই আদালত বলেছেন, যেহেতু আইনের আলোকে বিধিমালা হয়, সেহেতু আইনের প্রাধান্য বিধিমালার ওপরে। সে জন্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হলফনামা বাধ্যতামূলক। ’

নির্বাচন কমিশনকে পরবর্তী সব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্রে হলফনামা ফরম সংযুক্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান আইনজীবী জাহেদ উল আনোয়ার।

পূর্বকোণ/মামুন/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট