চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তি অনুসরণ করার এখনই সময় : প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

৮ নভেম্বর, ২০২২ | ১১:০২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ‘গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তি অনুসরণ করার এখনই সময়’ শিরোনাম একটি নিবন্ধ রোববার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া, আর্লিংটন কাউন্টিতে অবস্থিত একটি আমেরিকান, জার্মান-মালিকানাধীন রাজনৈতিক সাংবাদিকতা পত্রিকা কোম্পানি ‘পলিটিকোতে’ প্রকাশিত হয়েছিল।

মানব ইতিহাসের অন্য কোনো সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেয়ে জরুরি কোনো কারণ প্রমাণিত হয়নি; এই গ্রহে আমরা যাকে বাড়ি বলে ডাকি এবং প্রতিটি প্রজাতির জন্য আমরা এটি শেয়ার করে নিয়েছি, সেখানে আমাদেরকে এর চেয়ে আর কোনো বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়নি।

এক শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি বাংলাদেশের সিলেটের মানুষের কাছে শব্দগুলো পর্যাপ্ত নয়। শব্দগুলো আকস্মিক বন্যাকে তাদের বাড়িঘর নিয়ে যাওয়া, তাদের জীবিকা ধ্বংস করা, তাদের প্রিয়জনকে হত্যা করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি এবং গত মাসে পাকিস্তানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৩ মিলিয়নের জনগণের জন্য সমর্থন বা ছোট সাহায্য প্যাকেজগুলোর টুইটগুলো যথেষ্ট ছিল না।

এর পরিবর্তে, আমি আজকে যা আহ্বান করছি তা হলো পদক্ষেপ- গত বছর গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে কপ-২৬-এ দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য পদক্ষেপ, একটি উষ্ণ গ্রহের কঠোরতম বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় আমার মতো দেশগুলোকে সহায়তা করার জন্য এবং যখন বিশ্ব নেতারা আবারও একত্রিত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এইবার শারম এল-শেখ এ আমি আমার সম্মানিত সহকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি তারা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা রক্ষার উপায় খুঁজে বের করার জন্য। অন্ততপক্ষে ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজনের পাশাপাশি অর্থের ব্যবস্থা দ্বিগুণ করার জন্য।

উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে এই প্রতিশ্রুত আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তিকে একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত এবং এটি আমার মতো জলবায়ুর ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অত্যাবশ্যক। এটি ভবিষ্যতের কোনো তারিখের জন্য ছেড়ে দেওয়া যাবে না। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের বিস্তৃত পরিণতির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি এবং এই মুহূর্তে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়, তাহলে অবিলম্বে সহায়তা দেওয়া দরকার।

বাংলাদেশ বর্তমানে বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনে ০.৫৬ শতাংশ অবদান রাখে এবং তবুও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশের ক্ষতির অনুপাত অপ্রতিরোধ্য।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উপকূলীয় ক্ষয়, খরা, তাপ এবং বন্যা সবই আমাদের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। তারা আমাদের অবকাঠামো এবং কৃষি শিল্পকে ধ্বংস করবে কারণ, আমরা চরম এবং ধীর গতির ঘটনাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত ক্ষয়ক্ষতি এবং ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ, হ্রাস এবং মোকাবিলায় যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মানব-সৃষ্ট উষ্ণায়নের কারণে আমাদের জিডিপি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে এবং গড় আয় ২১০০ সালে ৯০ শতাংশ কম হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। অন্যথায়, আন্তঃসরকারি প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টে ধারণা করা হয়েছে যে, জলবায়ুু পরিবর্তনের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে দারিদ্র্য প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

এই ধরনের অন্ধকারাচ্ছন্ন পূর্বাভাসের মুখোমুখি হলে হতাশাগ্রস্ত হওয়া সহজ হবে, যখন জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান অনেকের কাছে শোনা যাচ্ছে না এবং অগ্রগতিও খুব ধীর। উদ্বেগের পক্ষাঘাতে আত্মহত্যা করা অনেক সহজ হবে-তবে আমাদের অবশ্যই তা প্রতিরোধ করতে হবে।

আর বাংলাদেশে আমরা সেটাই করছি।

এই ধরনের গুরুতর হুমকির মুখে আমরা এখন পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে প্রানবন্ত এবং ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো মোকাবিলা করার জন্য আমরা মুজিব জলবায়ুু সমৃদ্ধি পরিকল্পনাও উন্মোচন করেছি, আমাদের শক্তি নেটওয়ার্ককে ডিকার্বনাইজ করা থেকে শুরু করে সবুজ বিনিয়োগের উদ্যোগ-এখন এবং ভবিষ্যতে উভয়ই আমাদের গতিপথকে ক্ষতিকর প্রভাবের পরিবর্তে সমৃদ্ধশালী করবে।

আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে প্রথম ছিলাম যারা ২০০৯ সালে একটি বিস্তৃত জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল এবং কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। এখন পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন অভিযোজন এবং প্রশমন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ৪৮০ মিলিয়ন বরাদ্দ করেছি।

বর্তমানে, আমরা আমাদের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য একটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এই প্রকল্পে প্রায় ৫,০০০ জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করছি। আমার ১৮ বছরের প্রধানমন্ত্রীত্বে আমার সরকার আজ পর্যন্ত প্রায় ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ব্যক্তিকে বাড়ি দিয়েছে।

ইতোমধ্যে আমরা ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ গ্রহণ করেছি। যার লক্ষ্য একটি নিরাপদ, জলবায়ু-সহনশীল এবং সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গঠন করা। প্রতি বছর আমার দল আমাদের দেশের গাছের পরিধি বাড়াতে লক্ষ লক্ষ চারা রোপণ করে।

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ভি-২০-এর প্রাক্তন চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থের প্রচারে মনোনিবেশ করে চলেছে। শুধু বেঁচে থাকাই যথেষ্ট নয়; আমরা সফল হতে চাই। একজন বিশ্বনেতা হতে চাই, আমাদের প্রতিবেশী এবং বিশ্বকে দেখাতে চাই যে, এখনও একটি আশাপূর্ণ ভবিষ্যতের পথ রয়েছে- কিন্তু আমরা একা এটি করতে পারি না।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কথাগুলোকে অবশ্যই কাজে পরিণত করতে হবে।

গ্লাসগোতে সম্মত হওয়া অভিযোজন তহবিলে ৪০ বিলিয়ন বৃদ্ধিকে অবশ্যই আমাদের সাধারণ ভবিষ্যতের প্রাথমিক বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। অন্যথায়, নিষ্ক্রিয়তার খরচ অপরিসীম হবে : গত বছরের আইপিসিসি ওয়ার্কিং গ্রুপ দ্বিতীয় রিপোর্ট ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে যে, ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী জিডিপি ক্ষতি ১০-২৩ শতাংশ হতে পারে, যা পূর্বের পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক বেশি।
এই বছর ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে আরও রেকর্ড-ব্রেকিং তাপমাত্রার ঘটনা নিয়ে এসেছে, রেকর্ড করা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে।

আমাদের যদি এই বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার কোনো আশা থাকে, তাহলে আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, বাংলাদেশে বন্যা, ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল, ইউরোপের খরা- তাপমাত্রা ১.২-ডিগ্রি বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট- সবই পরস্পর সংযুক্ত এবং আমাদেরকে অবশ্যই একসাথে মোকাবিলা করতে হবে।

গত বছর দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে হবে; তাহলেই কেবল প্রতিশ্রুতিগুলো অবশেষে কর্মের দিকে পরিচালিত করবে। সূত্র : বাসস

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট